চন্দ্রগোমী

চন্দ্রগোমী প্রাচীন বঙ্গদেশীয় একজন পণ্ডিত লেখক, কবি, নাট্যকার, শিক্ষাবিদ এবং সবোর্পরি সংস্কৃত বৈয়াকরণ ছিলেন যার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। অনুমান করা হয় তিনি সপ্তম শতাব্দীতে বা অব্যবহিত পূর্বে বর্তমান ছিলেন। তিনি নালন্দা মহাবিহারের আচার্য স্থিরমতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এখানে তিনি বৌদ্ধশাস্য, তর্কশাস্য, সংস্কৃত ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয়াদি অধ্যয়ন করেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি নালন্দার আচার্যের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।[1] তিনি চান্দ্র-ব্যাকরণের স্রষ্টা। তার বিখ্যাত রচনা লোকানন্দনাটক[2] তার রচনাদি তিব্বতী, ইংরেজী, জার্মান বিবিধ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[3]

সংক্ষিপ্ত জীবনী

চন্দ্রগোমী বরেন্দ্রতে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু পাগ-সাম-জোন-জাং নামক গ্রন্থানুসারে তিনি কোন কারণে জন্মভূমি হতে নির্বাসিত হয়ে পরবর্তী জীবন চন্দ্রদ্বীপে বসবাস করেন। তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য স্থিরমতির নিকট সূত্র পিটক, অভিধর্ম পিটক, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, তর্কশাস্ত্র প্রভৃতি বিভিন্ন বিদ্যা সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেন। অশোক নামক এক বৌদ্ধ আচার্য তাকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দেন।[4]:৫৭১

সময়কাল

চন্দ্রগোমীর জীবনকাল সম্বন্ধে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এই কথা নিশ্চিত যে জয়াদিত্য রচিত কাশিকা নামক পাণিনির ব্যাকরণের টীকাভাষ্য রচনার পূর্বে চান্দ্র-ব্যাকরণ রচিত হয়েছিল। এই গ্রন্থে চন্দ্রগোমীর মূল পয়ত্রিশটি সূত্র উদ্ধৃত হয়েছে। সেই হিসেবে চন্দ্রগোমী সপ্তম শতাব্দীতে বা তার পূর্বে বিদ্যমান ছিলেন বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন।[4]:৫৭১

ব্যাকরণ

চন্দ্রগোমী পাণিনির ব্যাকরণ অনুসারে চান্দ্র-ব্যাকরণ নামক একটি ব্যাকরণ উদ্ভব করেন, যা একসময় কাশ্মীর, তিব্বত, নেপাল প্রভৃতি দেশে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ছিল। পাগ-সাম-জোন-জাং নামক গ্রন্থানুসারে তিনি ছিলেন পতঞ্জলি প্রণীত মহাভাষ্য পদ্ধতির বিরোধী। ভর্তৃহরি রচিত বাক্যপদীয় গ্রন্থে ও কল্হণ রচিত রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে চন্দ্রাচার্য নামক বৈয়াকরণের উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে চন্দ্রগোমী ও চন্দ্রাচার্য একই ব্যক্তি।[4]:৫৭০,৫৭১

অন্যান্য রচনা

চন্দ্রগোমী ন্যায়সিদ্ধালোক নামক তর্কশাস্ত্রের একটি গ্রন্থ, বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের ওপর ছত্রিশটি গ্রন্থ, মঞ্জুশ্রীতারার ওপর কয়েকটি সংস্কৃত শ্লোক, লোকানন্দ নামক একটি নাটক, শিষ্যলেখধর্ম নামক একটি ছোট কাব্য রচনা করেন। বর্তমানে লোকানন্দ নাটকের তিব্বতী অনুবাদের অস্তিত্ব রয়েছে। শিষ্যলেখধর্ম কাব্যটি শিষ্যের নিকট গুরুর পত্র হিসেবে একশো আঠারোটি সংস্কৃত শ্লোকে বিভিন্ন ছন্দে রচিত।[4]:৫৭১ তিনি সর্বতথাগতোষ্ণীশসিতাতপত্রানামাপরাজিতা-মহাপ্রত্যাঙ্গিরা-মহাবিদ্যারাজ্ঞীনামধারণী নামক সুরঙ্গম মন্ত্রের ওপর গ্রন্থ রচনা করেন।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাপিডিয়া
  2. Joy for the World: A Buddhist Play by Candragomin ১৯৮৭
  3. [journals.ub.uni-heidelberg.de/index.php/jiabs/article/download/.../2672‎ দ্য জার্ণাল অব দি ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশান অফ বুদ্ধিষ্ট স্টাডিজ, ১৯৯০, ১৩-০১]
  4. বাঙ্গালীর ইতিহাস - আদি পর্ব , নীহাররঞ্জন রায়, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ষষ্ঠ সংস্করণ, মাঘ ১৪১৪, ISBN 81-7079-270-3

আরো পড়ুন

  • Geshe Sonam Rinchen, The Bodhisattva Vow, translated and edited by Ruth Sonam, Snow Lion, 2000
  • Candragomin, Difficult Beginnings: Three Works on the Bodhisattva Path, translated, with commentary by Mark Tatz, Shambhala, 1985
  • Chandragomin - Praise in Confession

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.