গ্রাফিতি

গ্রাফিতি হল অনুমতি ব্যতিরেকে জনসাধারণের অভিমতকে শিল্পীয় উপায়ে দেয়ালের উপরে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা।[1][2] স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার পেন সাধারণত গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

গ্রাফিতি একটি বিতর্কিত বিষয়। অধিকাংশ দেশে গ্রাফিতিকে বিকৃত ও ধ্বংসাত্মক শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ অনেক সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রচার করে। জেন মিচেল বাস্কুইট যার গ্রাফিতি জনসাধারণের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তার তৈরি একটি গ্রাফিতি ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

তিবার নদী তীরে গ্রাফিতি, রোম, ইতালি

ইতিহাসঃ

রোমপম্পেই নগরীর সমাধিস্থলের দেয়াল ও ধ্বংসাবশেষে গ্রাফিতির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। দক্ষিণ সিরিয়া, পূর্ব জর্ডান এবং উত্তর সৌদি আরবে শিলা ও পাথরের উপরে কিছু লেখা পাওয়া গিয়েছে স্যাফাইটিক ভাষায় এবং ধারণা করা হয় এই স্যাফাইটিক ভাষার উৎপত্তি গ্রাফিতি থেকে।

আধুনিক রীতির গ্রাফিতিঃ

প্রাচীন গ্রীক নগরী এফেসাসেই আধুনিক গ্রাফিতির উদ্ভব এবং সেখানে গ্রাফিতি পতিতাবৃত্তির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হত। বর্তমান সমাজের চেয়ে প্রাচীন সমাজের গ্রাফিতিগুলো আরো বেশি অর্থপূর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারায় বহমান ছিল। প্রাচীন গ্রাফিতিগুলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতো। ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুত্পাতের সময়কার গ্রাফিতিগুলো পম্পেই নগরীতে সংরক্ষিত ছিল। নভেলিয়া প্রিমিগেনিয়া নামের এক পরমা সুন্দরী পতিতার ব্যাপারে জানা যায় গ্রাফিতি থেকে।

সমসাময়িক গ্রাফিতিঃ

সমসাময়িক গ্রাফিতি মূলত হিপহপ দ্বারা প্রভাবিত এবং অসংখ্য গ্রাফিতির উদ্ভব ফিলাডেলফিয়া এবং নিউ ইয়র্ক শহরের সুড়ংগের গ্রাফিতি থেকে। এছাড়াও এখন শৌচাগার, সেতুতেও গ্রাফিতির কাজ পরিলক্ষিত হয়। সবচেয়ে পুরাতন আধুনিক গ্রাফিতি হল "মনিকাস" যা ভবঘুরে এবং রেলশ্রমিকদের দ্বারা তৈরি হয়েছিল। মনিকারসের উপর চলচ্চিত্র নির্মাতা বিল ড্যানিয়েল ২০০৫ সালে "হু ইজ বোজো টেক্সিনো" নামের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন।

এরোসল পেইন্টের আবিভার্বঃ

গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটনকে নিয়ে তৈরি "ক্ল্যাপটন ইজ গড" হল বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত গ্রাফিতি। ১৯৬৭ সালে ক্ল্যাপটনের একজন ভক্ত স্প্রে দিয়ে ইসলিংটন স্টেশনের দেয়ালে এই গ্রাফিতিটি তৈরি করেন। ১৯৭০ সালে পাংক রকের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি তৈরি করা হয় এবং ব্ল্যাক ফ্লাগ ও ক্র্যাস ব্যান্ড তাদের নাম ও লোগো দিয়ে গ্রাফিতি করে এই পাংক রকের বিরুদ্ধে।

স্টেনসিল গ্রাফিতির উদ্ভবঃ

১৯৮১ সালে ব্লেক লে রেট প্যারিসে প্রথম স্টেনসিল গ্রাফিতির প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে নিউ ইয়র্ক, মেলবোর্ন এবং সিডনিতে স্টেনসিল গ্রাফিতির কাজ পরিলক্ষিত হয়।

স্মারক হিসেবে গ্রাফিতিঃ

মানুষ প্রায়ই তাদের শেষচিহ্ন কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে। এই ধরনের গ্রাফিতি দম্প্ত্তিদের ভালোবাসার ও কোন একজন মানুষের বিশেষ সময়ের স্মৃতি সংরক্ষণ করতে তৈরি করা হয়।

গ্রাফিতির বৈশ্বায়নঃ

দক্ষিণ আমেরিকাঃ

মধ্যপ্রাচ্যঃ

মধ্যপ্রাচ্যে গ্রাফিতির উত্থান হয়েছে একটু শ্লথভাবে। ইরানের প্রধানতম পত্রিকা "হামশাহরি" দুটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন তেহরানের দেয়ালের উপর "এ১ওয়ান" এর কাজের উপর। "ইসরাইলি ওয়েস্ট ব্যাংক বেরিয়ার" পরিণত হয়েছে গ্রাফিতি শিল্পচর্চার স্থান হিসেবে। একটি ধর্মীয় অভিমত "না নাচ নাচমা নাচমান মিউমান" সর্বদা পরিলক্ষিত হয় ইসরাইলি গ্রাফিতি শিল্পে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়াঃ

গ্রাফিতির প্রভাব দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে চোখে পড়ার মত লক্ষণীয় যা মূলত পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারায় প্রভাবিত। ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়া গ্রাফিতি চর্চার উৎসাহ বাড়ানোর জন্য "স্ট্রিট ফেস্ট" এর আয়োজন করে আসছে।[3]

সাধারণ গ্রাফিতির বৈশিষ্ট্যঃ

পদ্ধতিঃ

আধুনিক দিনের গ্রাফিতি শিল্পীরা একটি সফল গ্রাফিতি তৈরি করার জন্য নানা উপায় এবং নানা উপকরণ ব্যবহার করে থাকেন। গ্রাফিতি তৈরির অন্যতম একটি মাধ্যম হল স্প্রে পেইন্ট। স্প্রে পেইন্ট দেয়ালে বা হার্ডওয়্যারের দোকানে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। শক্ত কোন বস্তু যেমনঃ কার্ডবোর্ড কেটে ডিজাইনের মাধ্যমে একটি আকৃতি প্রধান করে গ্রাফিতি তৈরি করাকে স্টেনসিল গ্রাফিতি বলে।

আধুনিক পরীক্ষণঃ

আধুনিক গ্রাফিতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার যোগ হয়েছে। ইয়ার্ণবোম্বিং হল গ্রাফিতির সাম্প্রতিক আরেকটি রূপ। যেসব গ্রাফিতিগুলো গ্রাফিতিশিল্পীরা পরিহার করেছে ঐসব গ্রাফিতিগুলোতে পরিবর্তন আনাই হল ইয়ার্ণবোম্বারদের কাজ।

ব্যবহার

ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তিঃ

অনেক গ্রাফিতি শিল্পীরা তাদের পরিচয় গোপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। চারটি হিপহপের মধ্যে অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও গান বা নাচের মত মূলধারার হিপহপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়না। এমনকি অনেক গ্রাফিতি শিল্পীকে "অন্তর্মূখী শিল্পীর" ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংসি হল সর্বজনবিদিত এবং বিখ্যাত একজন পথ গ্রাফিতি শিল্পী যিনি আজও জনসাধারণের কাছে অজ্ঞাত। তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবিরোধী গ্রাফিতির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু তার গ্রাফিতি লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্যালেস্টাইন সর্বত্র দেখা যায়। বাংসি শৈল্পিক আন্দোলনের জন্য সর্বজনস্বীকৃত এবং পরিচয় গোপন করে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য। লন্ডন ও তার আশেপাশে তার অধিকাংশ গ্রাফিতি দেখা যায় যদিও বিশ্বব্যাপী তার কাজ লক্ষমান। ইসরাইলের বিতর্কিত পশ্চিমা ব্যাংক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বিদ্রুপাত্মক গ্রাফিতি তৈরি করেছেন। ২০০০ সালে তার অনেকগুলো প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তার সাম্প্রতিক কাজগুলো মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়েছে।

পিক্সনিট হলেন আরেকজন গ্রাফিতি শিল্পী যিনিও তার পরিচয় জনসাধারণের কাছ থেকে গোপন রাখতেন। তার কাজ ছিল সৌন্দর্য ও নকশাকেন্দ্রিক। তার অধিকাংশ কাজই ছিল ম্যাসাচুসেটস আর ক্যামব্রিজের দোকানগুলোতে ফুলের নকশা করা।

আরো দেখুন

  • গ্রাফিতি বিরোধী প্রলেপ
  • পথ শিল্প
  • ধ্বংসোন্মাদনা
  • দৃশ্য দূষণ

তথ্যসূত্র

  1. "Graffiti". Oxford Dictionaries. Retrieved 2011-12-05.
  2. American Heritage Dictionary
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.