গাজী আতাউর রহমান
গাজী আতাউর রহমান (১৫ জানুয়ারি ১৯৫১ – ২১ নভেম্বর ২০১৭) ছিলেন বাংলাদশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতিবিদ। ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[1]
গাজী আতাউর রহমান | |
---|---|
জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ মার্চ ৩, ১৯৮৮ – ডিসেম্বর ৬, ১৯৯০ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | জানুয়ারি ১৫, ১৯৫১ বৈদ্যনাথপুর, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ |
মৃত্যু | নভেম্বর ২১, ২০১৭ বৈদ্যনাথপুর, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ |
নাগরিকত্ব | ![]() |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
রাজনৈতিক দল | জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল |
মাতা | নছিরন বেওয়া |
পিতা | আব্বাস আলী সরকার |
শিক্ষা | স্নাতক এল এল বি |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | শাহজাদপুর কলেজ সিরাজগঞ্জ ল কলেজ |
পেশা | রাজনীতি |
জীবিকা | শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী |
জন্ম
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামে ১৯৫১ সালের ১৫ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আতাউর রহমানের জন্ম। তার পিতার নাম আব্বাস আলী সরকার এবং মাতার নাম নছিরন বেওয়া। পিতা-মাতার নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম।
শিক্ষা
আতাউর রহমান পেঙ্গুয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন। এরপর উল্লাপাড়া মার্চেন্ট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন লাহিড়ী মোহনপুরের কে এম ইন্সটিটিউটে এবং এখান থেকে ১৯৬৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন শাহজাদপুর কলেজে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হয় এবং ১৯৭০ সালে তিনি আইএ পাশ করেন। এরপর তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে বিএ পাশ করে খুলনার বি এল কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে, ১৯৯৫ সালে সিরাজগঞ্জ ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করার কারণে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। অবশেষে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের পর ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হলে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই গঠিত হয় আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। এই সংগঠনে যোগ দিয়ে কমাণ্ডার (অর্থসচিব) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করে অকুতোভয় বীর আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে যেসব গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে তাড়াশেরই নওগাঁ যুদ্ধ প্রসিদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিলো গোটা বাংলাদেশে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে দ্বিতীয় বৃহত্তম আর উত্তরবঙ্গের মধ্যে বৃহত্তম। বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড, তাড়াশ কমাণ্ডের কমাণ্ডার ছিলেন।
পেশা
গাজী আতাউর রহমান ১৯৭৪ সালে বস্তুল ইসহাক দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে সমাজকল্যাণ বিভাগের চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি ইউসিসিএ লিঃ-এর তাড়াশ শাখার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হোমিওপ্যাথ (চিকিৎসক) হিসেবেও বেশ নাম করেছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জ দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালতে এ্যাডভোকেট হিসেবে আইন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রাজনীতি ও আইন বিষয়ে পাঠদান করেছেন।
রাজনীতি
স্বাধীনতার পর গাজী আতাউর রহমান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগদান করেন ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে (তাড়াশ-রায়গঞ্জ নির্বাচনী এলাকা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি এশিয়ান ফোরাম অব পার্লামেন্টারিয়ানস্ অন পপুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি এএফপিপিডি'র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ২৬ জাতি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন এবং ভাষণ দান করেন। এছাড়াও ১৯৯০ সালে তিনি বিরোধী দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত ও আফগানিস্তান সফর করেন।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
২০১১ সালে স্ট্রোক করে দীর্ঘকাল রোগভোগের পর ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর রাত্রি ১২:৩০ ঘটিকায় বৈদ্যনাথপুর গ্রামে নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন।[1] বাদ জোহর বৈদ্যনাথপুর মাদ্রাসা মাঠে গার্ড অব অনার প্রদানের পর জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র
- "সাবেক এমপি গাজী আতাউর রহমানের ইন্তেকাল"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২২ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭।
https://www.jugantor.com/online/national/2017/11/21/64137/
http://m.poriborton.com/rajshahi/86190
http://notunasha.com/post.php?p_id=86%5B%5D
http://www.currentnews.com.bd/bn/news/314196
http://m.banglanews24.com/politics/news/bd/618913.details
http://www.alokitobangladesh.com/todays/details/239956/2017/11/22
http://www.abnews24.com/2017/11/21/112075/সিরাজগঞ্জের-সাবেক-এমপি-আতাউর-রহমান-আর-নেই
http://haorbarta24.com/সাবেক-এমপি-আতাউর-রহমান-আর/
https://web.archive.org/web/20180223151724/http://rtn24.net/national/8284
http://protidineralo.com/?p=20896
http://sirajganjkantho.com/cnews/newsdetails/20171121174725.html