কিথ জনসন

কিথ অমন্ড এডলি জনসন, এমবিই (জন্ম: ২৮ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ - মৃত্যু: ১৯ অক্টোবর, ১৯৭২) নিউ সাউথ ওয়েলসের প্যাডিংটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট প্রশাসক ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেয হবার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ইংল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস ক্রিকেট দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন কিথ জনসন। এছাড়াও, ১৯৪৮ সালে অপরাজেয় নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে ইংল্যান্ড সফরে পরিচালনা করেছেন তিনি। ঐ সফরে তার দল কোন খেলাতেই পরাজিত হয়নি।[1]

কিথ জনসন
জন্মের নামকিথ অমন্ড এডলি জনসন
জন্ম২৮ ডিসেম্বর, ১৮৯৪
প্যাডিংটন, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু১৯ অক্টোবর ১৯৭২(1972-10-19) (বয়স ৭৭)
সিডনি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
আনুগত্য অস্ট্রেলিয়া
সার্ভিস/শাখাপ্রথম অস্ট্রেলীয় ইম্পেরিয়াল বাহিনী
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্স
কার্যকাল১৯১৬১৯১৯
১৯৪২১৯৪৬
পদমর্যাদাফ্লাইট লেফটেন্যান্ট
ইউনিটঅস্ট্রেলিয়া সার্ভিসেস ক্রিকেট দল
যুদ্ধ/সংগ্রামপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
পুরস্কারমেম্বার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার
অন্যান্য কাজ

ব্যক্তিগত জীবন

২৮ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে সিডনি'র কাছাকাছি প্যাডিংটনে জন্মগ্রহণ করেন জনসন।[2] এরপর তিনি মোসম্যান এলাকায় চলে যান। সেখানে তিনি যন্ত্রপ্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। এরপূর্বে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ৩য় ফিল্ড কোম্পানি আর্মি ইঞ্জিনিয়ার্সে কাজ করেন।[3] ৮ অক্টোবর, ১৯১৬ তারিখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে প্রথম অস্ট্রেলীয় ইম্পেরিয়াল ফোর্সে গানার হিসেবে যোগ দেন।[3] ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ তারিখে সিডনি ত্যাগ করে ও ইউরোপের দিকে চলে যায়। ১ জুলাই, ১৯১৯ তারিখে অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।[3] প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে মার্গারেট নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।[2]

ক্রিকেট প্রশাসন

১৯৩৫ সালে সিডনি গ্রেড ক্রিকেটে মোসম্যান ক্রিকেট ক্লাবে সম্পৃক্ততার সুবাদে নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে যোগ দেন।[4] ইংল্যান্ড সফর শেষে জাতীয় দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসা বিল বুলের বিকল্প হিসেবে সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪ সালে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।[5] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন লন্ডনে রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সে জনসংযোগ বিভাগে কাজ করেন। ইউরোপে মিত্রবাহিনীর বিজয়ের পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট পুণরায় চালু হয় ও জনসনকে অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দল গঠনের জন্য মনোনীত করা হয়। দলটি ইংল্যান্ডে প্রদর্শনী খেলার সিরিজে অংশ নেয় যা বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে প্রথম ছিল ও ভিক্টোরি টেস্ট নামে পরিচিতি পায়। সিরিজগুলো খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল; পাশাপাশি অগণিত দর্শকের আগমনে যুদ্ধ তহবিলে ব্যাপক অর্থ সংগৃহীত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে জুন, ১৯৪৫ সালে দলের ম্যানেজার হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় এবং আরও খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সফরটি বিলুপ্তির পূর্ব-পর্যন্ত ১৯৪৫-এর মধ্যবর্তী সময় থেকে ১৯৪৬ সালের শুরুর সময়কাল পর্যন্ত জনসন দলবলসমেত ব্রিটিশ ভারত ও অস্ট্রেলিয়া সফর করে।[4] স্বার্থকভাবে সফরগুলো পরিচালনা করায় জনসনের প্রশাসনকে প্রধান মানদণ্ডরূপে গ্রহণ করা হয়।

অপরাজেয় দলের ইংল্যান্ড সফর

১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে যাবার পূর্ব-মুহূর্তে ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন জনসন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড অব কন্ট্রোলের সম্পাদক ও ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ড সফরের ব্যবস্থাপক এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকর্মী বিল জিনসের স্থলাভিষিক্ত হন।[6] জিনস উত্তরোত্তর খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন যা হেইয়ের ভাষায় দাপ্তরিক ও লোভী প্রকৃতির।[7]

ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দলটি ইংল্যান্ড সফরের ৩৪টি খেলায় পরাজিত হয়নি, যা তাদেরকে অপরাজেয় নামে পরিচিতি ঘটায়। দলটি ২৫ খেলায় জয় পায়; তন্মধ্যে ১৭টিই ইনিংসের বিরাট ব্যবধানে হয়েছিল।[8] এছাড়াও, পাঁচ টেস্টের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়।

ঘরোয়া দলগুলোর বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্য থাকা স্বত্ত্বেও ইংরেজরা ক্রিকেটের প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহ বজায় রাখে।[8] অধিকাংশ মাঠই দর্শক পরিপূর্ণ অবস্থায় ছিল; এমনকি বৃষ্টি আক্রান্ত খেলাতেও এর ব্যতিক্রম ছিল না।[9] ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলাগুলোয়ও রেকর্ডসংখ্যক দর্শক সমাগম ঘটে। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ২য় ও হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ টেস্টে দুইবার রেকর্ড ভঙ্গ হয়। তন্মধ্যে, টেস্ট ক্রিকেটে হেডিংলিতে ১৫৮,০০০ দর্শকের উপস্থিতি ইংরেজ ভূমিতে রেকর্ড অদ্যাবধি অক্ষত রয়েছে।[10][11] ফলশ্রুতিতে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে £৮২,৬৭১ পাউন্ড ও লাভ বাবদ £৫৪,১৭২ পাউন্ড পায়।[8] দলের জনপ্রিয়তা সরকারী কর্মকর্তা ও রাজপরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে। নির্ধারিত ১৪৪ দিনের মধ্যে ১০৩ দিন খেলায় ব্যস্ত ছিল।[12] সফরকারী দলের একমাত্র প্রশাসক হিসেবে অগণিত ফোন ও চিঠিপত্রে জনসন ব্যস্ততামূখর দিন অতিবাহিত করেছেন। ব্র্যাডম্যান পরবর্তীকালে বলেছিলেন যে, জনসনের দিবা-রাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করেছিলেন।[13][13] সাংবাদিক অ্যান্ডি ফ্লানাগানের মতে, কর্মদিবসে প্রত্যেক মিনিট ও রাতের অর্ধেককাল সজাগ থেকেছেন তিনি।[14]

মূল্যায়ণ

১৯৪৮ সালের সফরকে ঘিরে উইজডেনের প্রতিবেদনে জনসনের উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে তিনি সফরটি মসৃণতার সাথে ও সুচারুরূপে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন। খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ বণ্টনের বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জনসন বলেছিলেন যে, দলের কোন সদস্যের মধ্যে কোনরূপ বিশৃঙ্খলা কিংবা অসন্তোষ দেখা যায়নি।[6]

১৯৬৪ সালের নববর্ষের সম্মাননায় ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে মেম্বার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদবীতে ভূষিত করা হয়।[15] ১৯৭২ সালে সিডনির একটি দাতব্য সংস্থায় উদ্বোধনী ভাষন দানকালে দেহাবসান ঘটে তার।[4]

তথ্যসূত্র

  1. "Invincible"Cricinfo। ২০০৩-০৫-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৯
  2. "WW2 Nominal Roll - Johnson, Keith Ormond Edley"Government of Australia। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১৬
  3. "Keith Ormonde [sic] Edeley [sic] Johnson"University of New South Wales। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১৭
  4. "Obituaries in 1972"Wisden, Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৪
  5. Haigh and Frith, p. 82.
  6. "Australians in England, 1948"। Wisden Cricketers' Almanack (1949 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 211।
  7. Haigh and Frith, p. 100.
  8. Haigh and Frith, p. 101.
  9. Perry, p. 226.
  10. Wisden Cricketers' Almanack (2007 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 505।
  11. Allen, pp. 106107.
  12. "Matches, Australia tour of England, Apr-September 1948"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-১৬
  13. Bradman, p. 233.
  14. Allen, p. 92.
  15. "নং. 43344"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়): 4975। ১৯৬৪-০৬-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১৬

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

  • Allen, Peter (১৯৯৯)। The Invincibles: The Legend of Bradman's 1948 Australians। Mosman, New South Wales: Allen and Kemsley। পৃষ্ঠা 106107। আইএসবিএন 1-875171-06-1।
  • Bradman, Donald (১৯৫০)। Farewell to Cricket। London: Hodder & Stoughtonআইএসবিএন 1-875892-01-X।
  • Cashman, Richard; Franks, Warwick; Maxwell, Jim; Sainsbury, Erica; Stoddart, Brian; Weaver, Amanda; Webster, Ray (১৯৯৭)। The AZ of Australian cricketers। Melbourne, Victoria: Oxford University Pressআইএসবিএন 0-9756746-1-7।
  • Barnes, Sid (১৯৫৩)। It Isn't CricketCollins
  • Haigh, Gideon; Frith, David (২০০৭)। Inside story: unlocking Australian cricket's archives। Southbank, Victoria: News Custom Publishing। আইএসবিএন 1-921116-00-5।
  • Jaggard, Ed (মে ১৯৯৬)। "Forgotten Heroes: The 1945 Australian Services Cricket Team"। Sporting Traditions। Sydney, New South Wales: Australian Society for Sports History। 12 (2): 6179।
  • Perry, Roland (২০০৫)। Miller's Luck: the life and loves of Keith Miller, Australia's greatest all-rounder। Milsons Point, New South Wales: Random House। আইএসবিএন 978-1-74166-222-1।
  • Pollard, Jack (১৯৮৮)। The Bradman Years: Australian Cricket 191848। North Ryde, New South Wales: Harper Collinsআইএসবিএন 0-207-15596-8।
  • Pollard, Jack (১৯৯০)। From Bradman to Border: Australian Cricket 194889। North Ryde, New South Wales: Harper Collinsআইএসবিএন 0-207-16124-0।
  • Slee, John (২০০২)। "Shand, John Wentworth (1897 1959)"Australian Dictionary of Biography। Melbourne: Melbourne University Press। 16। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০৪
  • Smith, Rick (১৯৯৯)। Cricket's Enigma: The Sid Barnes Story। Sydney, New South Wales: ABC Books। আইএসবিএন 0-7333-0787-6।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.