ইলেকট্রনিক ভোটিং

ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইংরেজি: Electronic voting) আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ বা সংশ্লিষ্ট ভোটারদের স্বীয় মতামত প্রতিফলনের অন্যতম মাধ্যম। ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি অণুসৃত হয় বিধায় সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। এর অন্য নাম ই-ভোটিং। ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় এটি একাধারে সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ ও দ্রুততার সাথে ভোট গণনা করতে সক্ষম। এছাড়াও, ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতা এবং উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ক্রমশঃই সমগ্র বিশ্বে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চলেছে।

ব্রাজিলের যাবতীয় নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রিমিয়ার ইলেকশন সল্যুশন্সের নির্মিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন

প্রয়োগ পদ্ধতি

ভোট গ্রহণের স্থান হিসেবে ভোট কেন্দ্রেই মূলতঃ ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, টেলিফোন ব্যবহার করেও ই-ভোটিং প্রয়োগ করা সম্ভবপর। নতুনতর অপটিক্যাল স্ক্যান ভোটিং পদ্ধতিতে পাঞ্চ কার্ড, অপটিক্যাল স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে একজন ভোটার নির্বাচনী-পত্রী বা ব্যালট পেপারকে চিহ্নিত করে ভোট প্রদান করে।

অন্যদিকে ডিআরই ভোটিং পদ্ধতিতে একটিমাত্র মেশিনের সাহায্যে ভোট সংগ্রহ ও গণনা কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়। ব্রাজিল এবং ভারতে সকল ভোটার সকল ধরনের নির্বাচনে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও ভেনেজুয়েলা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ডিআরই ভোটিং পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে।

নেদারল্যান্ডে ই-ভোটিং কার্যক্রমের প্রয়োগ হয়েছে। তবে, জনগণের আপত্তির মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে ডাচ সরকার। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ ক্রমশঃই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যুক্তরাজ্য, এস্তোনিয়া এবং সুইজারল্যান্ডে সরকারী নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জনমত গ্রহণের মাধ্যম গণভোটে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, কানাডার পৌর নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দলীয়ভাবে প্রাথমিক নির্বাচনের জন্য ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রেক্ষাপট

পাঞ্চ কার্ডের মাধ্যমে ভোট প্রদানের রূপরেখা আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে ১৯৬০-এর দশকে ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগে নির্বাচন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[1] ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে এই পদ্ধতি অণুসৃত হবার মাধ্যমে দৃশ্যতঃ প্রথমবারের মতো ব্যবহারের চিত্র চোখে পড়ে।[2]

ইভিএম ব্যবহার

ভোট কেন্দ্র কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। নিম্নে উল্লেখিত জোট কিংবা দেশসমূহে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সাহায্যে ইতোমধ্যেই ভোট নেয়া হয়েছে।

সেগুলো হলোঃ- অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, এস্তোনিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানী, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইটালী, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পেরু, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা এবং ফিলিপাইন।

বাংলাদেশ

সনাতনী ধাঁচের পরিবর্তে ই-ভোটিং প্রচলনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার বেশ এগিয়ে রয়েছেন। ইতোমধ্যেই আংশিক ও পরীক্ষামূলকভাবে ২টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এর প্রয়োগ হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি কেন্দ্রে ও সদ্য গঠিত নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের ৫৮টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ৫ জানুয়ারি, ২০১২ সালে অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনের সবগুলো কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।[3] একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৮) এ ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়। এ ছয়টি আসন দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন। আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন।[4]

ভারত

সুবিধা-অসুবিধা

সাধারণতঃ দুইটি প্রধান উপায়ে ই-ভোটিং নিশ্চিত করা যায়।[5][6]

  • ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রয়োগ হবে। সরকারী অথবা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন।
  • সরকারী অথবা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়াই দূরবর্তী স্থানে অবস্থানরত ভোটারগণ তাদের ভোট প্রয়োগে যে-কোনরূপ প্রভাববিস্তার থেকে দূরে থাকতে পারেন। এর জন্যে প্রয়োজন - ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে টেলিভিশনের ব্যবহার যা আই-ভোটিং নামে পরিচিত।

ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত এবং উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অতিদ্রুত ব্যালট পেপার গণনা করা সম্ভবপর। একই সাথে অক্ষম ভোটারগণও তাদের ভোট সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।

অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে খোঁদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রবল বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ডিআরই পদ্ধতিতে ই-ভোটিংয়ের ফলে নির্বাচনী কারচুপীর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান

ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপকরণ ইভিএম প্রস্তুতকারী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা নিম্নে দেয়া হলোঃ-

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্ততকারী কোম্পানীর তালিকা
ক্রমিক নং বিবরণ দেশের নাম
১.ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ লিমিটেড ভারত
২.ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস্‌ কানাডা
৩.ইলেকট্রনিকস্‌ কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড ভারত
৪.ইএসএন্ডএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৫.হার্ট ইন্টারসিভিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৬.নেড্যাপ নেদারল্যান্ডস
৭.প্রিমিয়ার ইলেকশন সল্যুশনস্‌
(সাবেক ডাইবোল্ড ইলেকশন সিস্টেমস্‌)
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৮.সিকোইয়া ভোটিং সিস্টেমস্‌ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৯.ভোটেক্স/টিএম টেকনোলোজিস্‌ ইলেকশনস্‌ ইনকর্পোরেট কানাডা

এছাড়াও, আকুপোল, এডভান্সড্‌ ভোটিং সল্যুশনস্‌, মাইক্রোভোট, স্মার্টম্যাটিক, ইউনিল্যাক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে খ্যাত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে ইভিএম তৈরির নকশা প্রণয়ন ও কারিগরি দিকগুলোর মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।[3]

তথ্যসূত্র

  1. Bellis, Mary. The History of Voting Machines. About.com.
  2. Saltman, Roy.EFFECTIVE USE OF COMPUTING TECHNOLOGY IN VOTE-TALLYING. NIST.
  3. কুমিল্লা পৌর নির্বাচনে ইভিএম - মীর সাব্বিরের প্রতিবেদন, বিবিসি বাংলা, সংগ্রহকালঃ ২ জানুয়ারী, ২০১২ইং
  4. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮"উইকিপিডিয়া। ২০১৯-০৯-১০।
  5. Buchsbaum, T. (২০০৪)। "E-voting: International developments and lessons learnt"। Proceedings of Electronic Voting in Europe Technology, Law, Politics and Society. Lecture Notes in Informatics. Workshop of the ESF TED Programme together with GI and OCG
  6. Zissis, D. (২০১১)। "Securing e-Government and e-Voting with an open cloud computing architecture"। Government Information Quarterly28 (2): 239–251। doi:10.1016/j.giq.2010.05.010 অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.