আমানুল হক
আমানুল হক (১৯২৫ - ৩রা এপ্রিল ২০১৩) একজন বাংলাদেশী আলোকচিত্রশিল্পী যিনি ভাষা আন্দোলনের সময় চিত্র ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[1][2][3] তার তোলা রফিকউদ্দিনের মাথায় গুলিবিদ্ধ ছবিটি পরবর্তীতে প্রমাণ করেছে যে, আন্দোলন ছত্রদের উপর পুলিশ হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছিল। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালিসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তিনি স্থির চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন।[1] এছাড়া তিনি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের বিভিন্ন সময়ের ছবি তুলেছেন।[3] ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে।[1]
আমানুল হক | |
---|---|
জন্ম | আমানুল হক ১৯২৫ সালে শাহজাদপুর গ্রাম, সিরাজগঞ্জ |
মৃত্যু | ৩ এপ্রিল, ২০১৩ ঢাকা |
পেশা | চিত্রগ্রাহক |
পরিচিতির কারণ | ভাষা সৈনিক |
প্রাথমিক জীবন
আমানুল হক সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার অণুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই তিনি আঁকাআঁকি করতেন। পরবর্তীতে আর্ট কলেজে লেখাপড়াও করেছেন। পরে তিনি চাকরি পান ঢাকা মেডিকেল কলেজে আর্টিস্ট কাম ফটোগ্রাফার পদে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনি এঁকে দিতেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জন্য।
ভাষা আন্দোলন ও আলোকচিত্র ধারণ
তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।[4] ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি তার ক্যামেরা পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গুলি ছুড়ে। গুলিতে নিহত অনেক শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে রফিকউদ্দিনের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশও ছিলো।[5] সেসময় আমানুল হকের সাথে আন্দোলনের আরও ছবি তুলছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এবং তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলামের ক্যামেরায় ফিল্ম না থাকায় আমানুল হকই মাথায় গুলিবিদ্ধ রফিকের লাশের একমাত্র ছবিটি তুলেন যা পরবর্তীতে ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।[5][6][7]
ছবিটির তিনটি কপি করা হয় যার একটি দেয়া হয় এ.এস.এম মোহসিনকে, মাজেদ খানকে (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং শেষ কপিটি দেয়া হয় দৈনিক আজাদে প্রকাশের জন্য যিদিও আজাদ পত্রিকায় ছবিটি তখন ছাপা হয়নি। ছাত্ররা ছবিটি ব্যবহার করে লিফলেট ছাপায় এবং পুলিশ ছবিটি বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করে। অনেক পরে সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রচ্ছদে ছবিটি পুনঃপ্রকাশিত হয়।[8]
পরবর্তী জীবন
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ছবি তুলে আমানুল হক পরিচিত হয়ে উঠেন। ১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মহাসম্মেলনে তার আলোকচিত্রের একটি প্রদর্শনী হয়েছিল। সেখানে এসেছিলেন ভারত থেকে সাংবাদিক হিসেবে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং লেখক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় আমানুল হকের তোলা শহীদ রফিকের ছবিটি পোস্টার করে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়েছিল।[8]
ছবিটির আলোকচিত্রী হিসেবে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পরে তিনি কলকাতা পাড়ি জমান।[3] সেখানে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় ১৯৫৯ সালে সত্যজিত রায়ের সাথে পরিচিত হন।[9][9] পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালিসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তিনি স্থির চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ঢাকায় বসবাস করা শুরু করেন।
তথ্যসূত্র
- "আলোকচিত্রী আমানুল হক আর নেই"।
- BanglaNews24.com। "আলোকচিত্রী আমানুল হক আর নেই"।
- "আলোকচিত্রী আমানুল হক মারা গেছেন"।
- "রফিকের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম"। দৈনিক যুগান্তর। ৯ই ফেব্রুয়ারি,২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "আমানুল হক - ভাষা আন্দোলনের এক বিস্মৃত আলোকচিত্রী"।
- চৌধুরী, চন্দন (২৩-০২-২০১০)। "ঐতিহাসিক ছবি"। দৈনিক কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - https://www.priyo.com/articles/‘আমানুল-হক-ছিলেন-গভীরভাবে-দেশপ্রেমে-উদ্বুদ্ধ-মানুষ’/
- "ভাষাশহীদের ছবির একমাত্র কারিগর আমানুল হক"। Risingbd.com।
- হেলাল, মাসুক (০৪-০৪-২০১০)। "মুখচ্ছবিঃ ছবির শিল্পী আমানুল হক"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ডেস্ক, প্রথম আলো (২০-০২-২০১১)। "প্রধানমন্ত্রী আজ একুশে পদক প্রদান করবেন"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)