অমল কুমার রায়চৌধুরী

অমল কুমার রায়চৌধুরী (ইংরেজি: /Āmala kumāra rāẏacaudhurī/) (জন্ম:১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩ - মৃত্যু: ১৮ জুন, ২০০৫) বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী। আপেক্ষিকতার বিশ্বতত্ত্বে অবদান বিশেষ করে রায়চৌধুরী সমীকরণের জন্য তিনি বিখ্যাত। সাধারণ আপেক্ষিকতায় পেনরোজ-হকিং সিংগুলারিটি তত্ত্বগুলো প্রতিপাদনের জন্য তার এই সমীকরণ খুবই উপযোগী। তার কেবল এই একটি অবদানই পদার্থবিজ্ঞানে এতো গুরুত্বের দাবীদার যে অনেকে তাকে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীর কাতারে ফেলেন।

অমল কুমার রায়চৌধুরী
জন্ম(১৯২৩-০৯-১৪)১৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৩
বরিশাল, পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৮ জুলাই ২০০৫(2005-07-18) (বয়স ৮১)
ডাকনামAKR [1]
বাসস্থানকলকাতা, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞানী
প্রতিষ্ঠানআশুতোষ কলেজ[2]
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা
প্রাক্তন ছাত্রপ্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় and কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দনারায়ণ চন্দ্র রানা
পরিচিতির কারণরায়চৌধুরী সমীকরণ
স্ত্রী/স্বামীনমিতা সেন[1]
সন্তান(গণ)Amlanava, Asimava, Madhukshara and Parongama [3]
স্বাক্ষর

জীবনী

রায়চৌধুরী ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুরেশচন্দ্র রায়চৌধুরী একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন, তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক। বাবাকে দেখে অণুপ্রাণিত হয়েই ছোটবেলা থেকেই অমল গণিত বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, গণিতের সমস্যা সমাধান করতে ভালবাসতেন। ১৯৪২ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্সেসে যোগ দেন। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর গবেষণা করেও কোন তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল বের করতে না পেরে তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। সে সময় তিনি আশুতোষ কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় অধ্যাপক এন আর সেন সেখানে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব পড়াতেন। অমল অধ্যাপক সেনের সান্নিধ্যে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব শিখতে শুরু করেন এবং তার সাহায্যেই প্রথম কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। পরের দিকে তিনি একা একাই গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। গবেষণার এই পর্যায়ে এসেই তিনি তার বিখ্যাত সমীকরণটি আবিষ্কার করেন। কাছাকাছি সময়েই তিনি IACS এ দ্বিতীয় দফায় গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

অমল কুমার রায়চৌধুরী তার সমীকরণটি ১৯৫৩ সালে বের করলেও এটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করার জন্য তাকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৫৫ সালে তার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বিখ্যাত জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ –তে। এই গবেষণা প্রবন্ধের হাত ধরেই অমল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তখনো কিন্তু তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেননি। তার পিএইচডি সম্পন্ন হয় ১৯৫৯ সালে।

একজন মেধাবী বিজ্ঞানী হবার পাশাপাশি অমল কুমার রায়চৌধুরী একজন প্রাণবন্ত শিক্ষকও ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে তার শেষ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। বই পড়তে ভালবাসতেন, ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত। রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ রাখতেন, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ না করলেও বিভিন্ন প্রবন্ধে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা উল্লেখ করেছেন।

রায়চৌধুরী সমীকরণ

একটি একক টাইম-লাইক ভেক্টর ফিল্ড এর জন্য রায়চৌধুরী সমীকরণটিকে এভাবে লেখা যায়-

চতুর্মাত্রিক জগৎ সময়ের সাথে সাথে কীভাবে বিবর্তিত হয় সেটার ব্যাখ্যা মেলে এই সমীকরণ থেকে। এই সমীকরণ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ব্যাখ্যা করা যায়। নিউটন তার বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্রে বলেছিলেন যে মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুকণার মধ্যে মহাকর্ষ নামক একটি আকর্ষণধর্মী বল কাজ করে। কিন্তু এই বলের উৎস কী- সেটা নিউটন কখনোই বলে যেতে পারেননি। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে এটা প্রমাণিত হয়- মহাকর্ষ কোন বল নয়, এটা আমাদের চতুর্মাত্রিক স্থান-কালের একটা বৈশিষ্ট্য। কোন বস্তুর উপস্থিতিতে স্থান-কাল বেঁকে যায়, আর সেই বক্রতার জন্যই আমরা মহাকর্ষের প্রভাব দেখতে পারি। এখন প্রশ্ন হলো- মহাকর্ষের আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা কী? আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখি যে গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়ছে, চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অথচ আইনস্টাইনের দেওয়া ব্যাখ্যায় মহাকর্ষ একটি সম্পূর্ণ জ্যামিতিক ব্যাপার। তাহলে সেই জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যের কোথায় এই আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে? রায়চৌধুরী সমীকরণ থেকে আমরা এটার খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা পাই। কোন ধরনের বলের প্রভাব ছাড়া একটি বস্তু যে পথে চলাচল করে সেটাকে বলা হয় জিওডেসিক। রায়চৌধুরী দেখান যে কোন ভারী বস্তুর উপস্থিতিতে তার আশেপাশের জিওডেসিকগুলো বস্তুটির দিকে বেঁকে যায়। এটাই মহাকর্ষের আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা দেয়।

রায়চৌধুরী সমীকরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল রয়েছে। আমরা জানি যে, এই মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে বিগ ব্যাং নামক এক বৃহত বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। ধরে নেওয়া যাক, আমি কোন একটি বস্তুর সমগ্রজীবনের ইতিহাস জানতে চাই। তাহলে আমাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো চার মাত্রার জগতে বস্তুটা যে পথে চলেছে সেই পথ ধরে সময়ে পেছন দিকে যেতে থাকতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- এই পেছাতে পেছাতে যখন আমরা বিগ ব্যাং এর কাছাকাছি সময় গিয়ে পৌঁছাব তখন আর বলতে পারব না এর আগে কী হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের জগতের যেকোন বস্তুর চলার শুরু ঐ বিগ ব্যাং থেকেই, এর আগের কিছু জানা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। যখনই জগতের কোন এক জায়গায় আমরা এভাবে আটকে যাই আমরা বলি সেখানটায় একটা সিঙ্গুলারিটি আছে। প্রশ্ন হলো- জগৎ সৃষ্টি হওয়ার তত্ত্বে এই সিঙ্গুলারিটিকে কি কোনভাবে এড়ানো সম্ভব? আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে আমরা এমন কোন বিশ্বজগতের ধারণা কি পেতে পারি যেখানে কোন সিঙ্গুলারিটি নেই। এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় রায়চৌধুরী সমীকরণ থেকে। সেখান থেকে এটা দেখানো যায় যে আমাদের মহাবিশ্বে যেকোন দুটি বস্তুকণার চলার পথ ধরে সময়ে পেছন দিকে যেতে থাকলে সেগুলো একটা জায়গায় গিয়ে জড়ো হতে চাইছে। সেটাই বিগ ব্যাং। অমল রায়চৌধুরীই প্রথম ধারণা দেন যে সিংগুলারিটি এড়িয়ে যাওয়া আমাদের জন্য সম্ভব নয়। পরে ১৯৬০-৭০ এর দিকে স্টিফেন হকিং এবং রজার পেনরোজ রায়চৌধুরী সমীকরণের উপর ভিত্তি করেই এ ব্যাপারটা গাণিতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।

তথ্যসূত্র

  1. Sen, Parongama (১ এপ্রিল ২০০৮)। "The legacy of Amal Kumar Raychaudhuri"Resonance13: 308–309। doi:10.1007/s12045-008-0011-3। ২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৮ ResearchGate-এর মাধ্যমে।
  2. "The Telegraph - Calcutta : KnowHOW"www.telegraphindia.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৮
  3. "Amal Kumar Raychaudhuri" (PDF)www.insaindia.res.in। ৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৮

আরো পড়ুন

  • Dadhich, Naresh (২০০৫), "Amal Kumar Raychaudhuri (1923–2005)" (PDF), Current Science, 89: 569–570
  • Narlikar, J. V. (জানুয়ারি ২০০৬), "Amal Kumar Raychaudhuri" (PDF), Biographical Memoirs of Fellows of the Indian National Science Academy: 169
  • Sen, Parongama (এপ্রিল ২০০৮), "The Legacy of Amal Kumar Raychaudhuri" (PDF), Biographical Memoirs of Fellows of the Indian National Science Academy: 309–309

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.