সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি
সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি (Chloropsis aurifrons) (ইংরেজি: Golden-fronted Leafbird), পাতা বুলবুলি, সবুজ পাতা বুলবুলি বা সোনা-কপালি হরবোলা ক্লোরোপসিডি (Chloropseidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত এক প্রজাতির পাতা বুলবুলি।[1][2] ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ এদের প্রধান আবাসস্থল।
সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি | |
---|---|
![]() | |
সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Passeriformes |
পরিবার: | Chloropseidae |
গণ: | Chloropsis |
প্রজাতি: | C. aurifrons |
দ্বিপদী নাম | |
Chloropsis aurifrons Temminck, 1829 | |
বিস্তৃতি
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও চীনের দক্ষিণাঞ্চল এদের প্রধান আবাসস্থল। সিঙ্গাপুরে এদেরকে অবমুক্ত করা হয়েছে।[3]
উপপ্রজাতি
সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলির তিনটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা গেছে। এরা হচ্ছে-
- C. aurifrons aurifrons (গলা ও বুক নীল)
- C. aurifrons frontalis (গলা ও বুক কালো, আকারে বড়সড়), দক্ষিণ ভারতে দেখা যায়
- C. aurifrons insularis (গলা ও বুক কালো, তুলনামূলক ছোট), শ্রীলঙ্কায় দেখা যায়।[4]
পূর্বে সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি (Chloropsis aurifrons) ও সুমাত্রার পাতা বুলবুলিকে (Chloropsis media) একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হত। পরবর্তীতে সুমাত্রার পাতা বুলবুলিকে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসেবে সনাক্ত করা হয়।[5]
বিবরণ
সম্পূর্ণ সবুজ এ পাখির কপাল উজ্জ্বল কমলা বা সোনালী যা প্রায় লালচে দেখায়। ঈষৎ বাঁকা কালো ঠোঁট থেকে চোখ ও তার কোল এবং গলা ও বুক কালো যার মাঝখানে বা গলায় বড় নীলের ছোপ। চোখের পেছন থেকে সারা বুকের কালো জায়গাটাকে ঘিরে রাখে একটি প্রশস্ত হলুদ বন্ধনী। ডানায় যৎকিঞ্চিৎ আসমানী ছোপ দেখা যায়। চোখ গাঢ় বাদামী। পা এবং পায়ের পাতা কালো। স্ত্রী পাখির গলা ও বুকে কেবল নীলাভ গোঁফ-ডোরা, সোনালি রং পুরুষের চেয়ে হালকা। বাচ্চাগুলো পুরোপুরি সবুজ। দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৯ সেন্টিমিটার।[1] ওজনে পুরুষ পাখি প্রায় ৩০ গ্রাম ও স্ত্রী পাখি প্রায় ২৫ গ্রাম।[2]
আচরণ
সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন এবং গাছপালাপূর্ণ স্থানে থাকতে ভালোবাসে। বনে বেশি, গ্রামে কম দেখা যায়। সাধারণত একাকি বা জোড়ায় জোড়ায় পরগাছায় বা ফুলে ফুলে এবং পাতায় পাতায় ঘুরে বেরিয়ে মধু, ফল এবং পোকামাকড়, বিশেষ করে শুঁয়োপোকা খায়।[1] কখনো অন্য পাখিদের সাথে মিলে খাবারের জন্য গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। মাটিতে খুব কমই নামে। এরা বেশ আগ্রাসী স্বভাবের, নিজের এলাকা সম্পর্কে বেশ সচেতন। পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে বেশি আগ্রাসী।[4] প্রায়ই শব্দ করে চলে এবং পাতার রঙে গায়ের রঙ হওয়ার ফলে এদেরকে দেখা না গেলেও ডাক থেকে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এরা নানা স্বরে গান গায়, যেমন: ‘হুইট; চা কি-হুই; সুই-চি-চি-উই; চুপ-চাও।’ এমনকি অন্য পাখির স্বরও নকল করতে পারে। তাই কোথাও কোথাও এরা হরবোলা নামে পরিচিত।[2]

প্রজনন ও বংশবিস্তার
জানুয়ারি থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। গাছের মগডালের সরু ডালে কাঠি, পাতা, ঘাস ও মস দিয়ে বাটির মতো পরিপাটি করে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি তাতে দু-তিনটি ক্রিম রঙের ডিম পাড়ে।[2] স্ত্রী ও পুরুষ পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দেয়। ডিম পাড়ার ১৪-১৫ দিন পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ডিম ফোটার ৬ দিন পর ছানাদের চোখ ফোটে এবং ১৩ দিন পর বাসা ছাড়ে।[4]
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ২১২।
- , অনিন্দ্যসুন্দর পাতা বুলবুলি, আ ন ম আমিনুর রহমান, ০৩-০৫-২০১২, দৈনিক প্রথম আলো, তথ্য সংগ্রহঃ ০৫-০৫-২০১২।
- , The IUCN Red List of Threatened Species, Chloropsis aurifrons, সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।
- , birding.in, সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।
- , BirdLife International, সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি বিষয়ক পাতা।