সৈয়দ আবিদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী

আল্লামা সৈয়দ আবু নসর মোহাম্মদ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রাঃ) পুরো নাম । জন্ম ১৮৬৭ খ্রিস্টবাদ বা ১২৮৪ হিজরি, মৃত্যু ১৯৮৮ খ্রিস্টবাদ বা ১৪০৯ হিজরী । তাঁকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহীসাল্লাম) এর বংশধর হিসেবে ভাবা হয় ।[2] আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী নামেও তিনি পরিচিত । যিনি একজন বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী, সুফি এবং ব্রিটিশ ভারতের সমাজ সংস্কারক। ব্রিটিশ ভারতে বেরলভী ভাবধারার সুন্নি আন্দোলনের অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশী সুন্নীমতাদর্শীরা মনের করেন । বাংলাদেশে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে (বিংশ শতাব্দীর) মুজাদ্দিদ ধারণা করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে সুন্নীয়তের প্রাতিষ্ঠানিক রূপকার । বাংলাদেশে সুন্নাত জামাতের প্রথম সুন্নী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ (বর্তমান বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের) প্রতিষ্টাতা । বাংলাদেশের, চাঁদপুর জেলা, হাজিগঞ্জ উপজেলায় মোজাদ্দিদ নগর (ধেররায়) ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফে তাঁর মাজার অবস্থিত ।[1][2][3][4][5][6]

আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রঃ)
ধর্মইসলাম
ব্যক্তিগত
জন্ম১৮৬৭ খ্রিস্টবাদ ১২৮৪ হিজরি
জান্নাতুল বাকি মহল্লা, মদিনা শরিফ, সৌদি আরব
মৃত্যু১৯৮৮ (বয়স ১২০১২১)
হাজিগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুর জেলা ( বাংলাদেশ)
জ্যেষ্ঠ পোস্টিং
ভিত্তিকহাজিগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুর, বাংলাদেশ
খেতাবShaykh-al-Mashāykh, মুজাদ্দিদ
অফিসে কার্যকাল
Late 18th century to Late 19th century
পূর্বসূরীআহমেদ সিরহিন্দি[1]
উত্তরসূরীSyed bhadur shah
ধর্মীয় জীবন
PostSufi saints‎ and mystic

জীবন কাল

জন্ম ও বংশীয় পরিচয়

সৌদি আরবের মদিনা শরিফের জান্নাতুল বাকি মহল্লায় হযরত সৈয়দ শায়েখ মোহাম্মদ শাহ ইবনে হযরত সৈয়দ মাহমুদ শাহ (রাঃ) এর ঔরশে ১২৮৪ হিজরি সনের শাবান মাসের ১৫ তারিখ (শবে বরাতের রাত্রে) সোবহে সাদেকের সময় (১৮৬৭ খ্রিস্টবাদে) সৈয়দ আবেদ শাহ আল-মাদানী (রাঃ) এর জন্ম হয় । তিনি পিতার দিক থেকে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর বংশধর এবং মাতার দিক থেকে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর বংশধর হন ।[1][2][5]

ভারত আগমন ও ইসলাম প্রচার

জন্মের পর থেকে তিনি ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত মদীনা শরীফে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহীসাল্লাম) এর বাতেনী নির্দেশে এবং ভারতের রামপুর ষ্টেটের নবাব কলবে আলী খাঁর অনুরোধে ইসলাম প্রচারার্থে তিনি ও তাঁর চাচা মাওলানা এরশাদ হুসাইন ভারতের রামপুরে আগমন করেন। ভারতে এসে বিভিন্ন ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাদিস গ্রন্থ অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন । ঐ সময়ের ব্রিটিশ ভারতের মোসলমান বেরলভীদেওবন্দি দুই দলে বিভক্ত । সৈয়দ আবেদ শাহ আল-মাদানী কোরান, হাদিসের সহি তাফসীর, সুন্নী আকীদা ও সুফিতত্বের এলেম (জ্ঞান) দ্বারা বেরলভী ভাবধারায় বহাস ও মোনাজেরার মাধ্যমে সুন্নী ইসলাম প্রতিষ্টার চেষ্টা করেন । ইসলাম প্রচারের ধারাবাহিকতায় তিনি পাঞ্জাবের খৃষ্টান ধর্মাম্বলি প্রধানদের সমিপে ইসলামের (আমন্ত্রণ) দাওয়াত পৌছান এবং ইসলামিক যুক্তি-তর্ক উপস্থান করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আহবান জানান । এক সময় খৃষ্টান ধর্মাম্বলি প্রধানরা তাঁর সাথে বহাস করতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বহাসে পরাজিত হয় । এ ভাবে তিনি ভারতীয় সুন্নী মুসলিমদের কাছে বাহরুল উলুম হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন । জানা যায় সিয়া সিত্তাহ ছয়খানা ছহিহ হাদীসের কিতাব তাঁর সম্পূর্ণ মুখস্ত ছিলো ।[5] অবশ্য এর সত্যতা প্রমাণিত নয়। ভারতের শিয়া সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতিও সুন্নীমতাদর্শ উপস্থানের মাধ্যমে ইসলামের মূলনীতি আল্লাহর কিতাব (কোরান) ও রাসূলের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরণের জন্য বিভিন্ন চ্যালাঞ্জের মোকাবেলা করেন এবং তাদের ভুল খণ্ডন করে আহলে সুন্নাত হওয়ার আমন্ত্রন জানান । এ ভাবে তিনি ভারত উপমহাদেশে সুন্নীয়ত প্রচারের ভূমিকা রাখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করেন অবিরত ।[2] সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী কোরান, হাদিস ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল দ্বারা মিলাদ-কিয়াম ও ঈদে মিলাদুন্নবী গুরুত্ব প্রচার ও প্রতিষ্টায় সচেষ্ট ছিলেন । ১৩৪৬ হিজরি সনে মিলাদ ও কেয়াম সম্পর্কিত দলিল প্রমাণ উপাস্থান করতে বহাসে অংশ নেন এবং মিলাদ ও কেয়ামের গুরুত্ব ধরে তুলেন । ১৩৪৮ হিজরি সনে দিল্লীর ফতেহপুর জামে মসজিদে ছয় উছুলি তবলিগ কে নতুন আবিস্কৃত সাবস্ত করেন । এ ভাবে দেওবন্দি ভাবধারার আলেম সম্প্রদায়ের সাথে সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী (রঃ) সুন্নীমতাদর্শ প্রতিষ্টায় মোনাযারায় (তর্কযুদ্ধে) জড়িয়ে পড়েন । ১৩৪৭ হিজরি সনে বাশঁ বেরেলভীতে জামেয়া রেজভীয়ায় রেজভীয়া শরিফের প্রতিষ্টাতা ইমামে অাহলে সুন্নাত আলা হযরত বেরলভীর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও খলীফা হযরত হজ্জাতুল ইসলাম অাল্লামা কাদের রেজা খান, সৈয়দ মুহাম্মদ কাসুয়াসুরী, মালেখুল ওলামা শাইখুল হাদীস আল্লামা জাফরুদ্দীন বিহারী সুন্নী উলামাদের পক্ষে যোগ দিয়ে বহাসে অংশ নেন । আর সেই থেকে রেজবী বা বেরলভী পরিচয়ে আখ্যায়িত হন ।

বাংলাদেশে আগমন

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার জমীনে হিজরত করে রামপুর থেকে ৫৭ বছরের দীর্ঘ বসবাসের মায়া ত্যাগ করে সমস্ত ধন দৌলত ছেড়ে বাংলায় (তৎকালীন-পূর্ব পাকিস্তান) আসেন । তিনি বাংলার জমীনে এসে আবার শুরু করেন সুন্নীয়াত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন । ১৯৫৩ সালে কুমিল্লা জেলাধীন কচুয়া থানার ক্বারী ইব্রাহীমের পুত্র কুমিল্লা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার করান। এ মামলা থেকে অভ্যাহতির পর, ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যস্ততায় দেওবনদী ভাবধার কওমী ও বেরলভী সুন্নী উভয় পক্ষের ওলামাগণকে বহাসে বসার সুযোগ করে দেন। বাহাসে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তাঁর পক্ষে রায় দিয়ে তাদের দেয়া মামলা বাতিল করে দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও তিনি অবদান রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ২৩শে এপ্রিল তিনি সিলেটের হবিগঞ্জে এক সুন্নী সম্মেলনে যোগদেন। এই সম্মেলনে সিলেটে খ্যাতনামা আলেমগণ উপস্তিত ছিলেন এবং অনেক জন তার প্রতিষ্ঠিত সুন্নী সংগঠন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর সদস্য হয়ে অনেকে বয়াতে রাসুল ও করেছেন । [3] বাংলাদেশের সুন্নী সকল বিখ্যাত ওলামাগণ তার ছাত্র ছিলেন এর মধ্যে অন্যতম- আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী, আল্লামা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী, মুফতি গিয়াস উদ্দীন, আল্লামা ওছিয়ুর রহমান, আল্লামা ওবাইদুল হক নঈমী, আল্লামা আব্দুল বারি জিহাদি, আল্লামা আবু সুফিয়ান আল কাদরী, আল্লামা ওহীদুর রহমান জেহাদি তারা তার কাছ থেকে কুরাঅান হাদিস ইজমা কিয়াসের দরস নিতেন সবসময় তার সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করতেন।

শেষ জীবন

আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ আল মাদানি (রা) ছিলেন হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানি (রা:) এর নবম বংশধর। ভারতে তিনি ৫৭ বছর ইলমে হাদীস, ইলমে তাফসীর এবং ফিকাহ অধ্যাপনায় ছিলেন । ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে বেরলভী সুন্নী পরিচয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল গঠন করে মৃতপ্রায় বিভিন্ন সুন্নাত প্রতিষ্টিত করেন বাংলায় ও ভারতের ভূখণ্ডে । তিনি কোরান-হাদীস, ইজমা-কিয়াস ও সফলে-সালেহীন হয়ে স্বীকৃত সুফি তরিকা বায়া’তে রাসুল (সাল্লাহু আলাইহিসাল্লাম) এর পূর্ণ প্রবর্তণ করেন । ভারতের রামপুর ছেড়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে এসে চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জ উপজেলার মোজাদ্দেদ নগর (ধেররা) গ্রামে বসতী স্থাপন করেন। সেখানে ইমামে রাব্বানী দরবার প্রতিষ্টিত করে ইলমে হাদিস শিক্ষার পথ খুলে দেন । বয়াতে রাসুল ও এলমে হাদিস অধ্যাপনার মধ্যদিয়ে লক্ষ ভক্ত, শিষ্য অনুসারি গড়ে তুলতে সচেষ্ট এই সাধক । চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার অনুসারি ভক্তশিষ্য ছড়িয়ে রয়েছেন । ইমামে রাব্বানি দরবারে তাঁর জীবতকাল থেকেই প্রতি বৎসর অনুষ্টিত হয় আসছে ভক্তের মিলন মেলা ওরস। ১৯৮৮ সালের ৮ অক্টোবর ১২৬ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন । তার মৃত্যুকালে রেখে যাওয়া চার সুযুগ্য ছেলে সন্তাগণ উক্ত ইমামে রাব্বানী দরবারে খেদমতি কাজের দায়িত্বে বর্তমান রয়েছেন । [7][8][9]

তথ্যসূত্র

  1. hajiganj.chandpur.gov.bd
  2. ইশলাহে মাশায়েক, অনুবাদঃ আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দিদে-আবেদী, প্রকাশনায়ঃ আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রঃ) ফাউন্ডেশন, প্রকাশকাল জানুয়ারী ২০১২ ।সৈয়দ আবেদ শাহ আল মাদানী মুজাদ্দিদ আলফে-সানী (রাঃ) এর বংশধর।উনি মুজাদ্দিদ আলফে-সানী রাঃ এর বংশের ৯ম প্রজন্মের পুরুষ।
  3. 'আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ গঠণতন্ত্র ১৯৭৩, কেন্দ্রীয় দপ্তর ২৩ নং মোমিন রোড চট্টগ্রাম, কার্য্যকারী সংসদ, (দ্রষ্টব্য) ।
  4. দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠ সুন্নীয়তকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী (রাহঃ)
  5. ইসলামী ছাত্রসেনা বাংলাদেশ ওয়েবসাইড, পরিদর্শনের তারিখ, ১৭/১২/২০১৮।
  6. ইমামে রাব্বানী দরবার শরীফে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামাল প্রধান অতিথী, দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠ ।
  7. ইমামে রাব্বানি দরবার শরিফের কথা
  8. somaynews24.com
  9. "sunnisangbad.com"। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.