সকরো ঘুঘু
সকরো ঘুঘু (ইংরেজি: Socorro Dove; বৈজ্ঞানিক নাম: Zenaida graysoni) প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির একজাতীয় ঘুঘু। মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলের রেবিহাইগেদো দ্বীপ থেকে সকরো দ্বীপ পর্যন্ত এদের আবাসস্থল ছিল। ১৯৭২ সালে ঘুঘুটিকে সর্বশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে এ প্রজাতির ঘুঘু প্রকৃতিতে অর্থাৎ বন্য পরিবেশে দেখা যায় না বললেই চলে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের চিড়িয়াখানাগুলোয় এ ঘুঘু প্রদর্শনীর জন্যে সংরক্ষিত আছে। সংখ্যাগত বিচারে বর্তমানে দুই শতাধিক সকরো ঘুঘু রয়েছে। প্রকৃত সকরো ঘুঘু'র সংখ্যা সম্ভবতঃ একশতেরও কম। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে প্রজাতিটির পুণরায় বংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।[1]
সকরো ঘুঘু | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Columbiformes |
পরিবার: | Columbidae |
গণ: | Zenaida |
প্রজাতি: | Z. graysoni |
দ্বিপদী নাম | |
Zenaida graysoni লরেন্স, ১৮৭১ | |
প্রতিশব্দ | |
Zenaida macroura graysoni |
সকরো ঘুঘু'র সাথে মোর্নিং ঘুঘু এবং ঈয়ার্ড ঘুঘু'র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সচরাচর পূর্বে ঘুঘুগুলোকে এর উপ-প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হতো।[2]
বিবরণ

মাঝারি আকৃতির সকরো ঘুঘু সাধারণতঃ ভূ-চর পাখি হিসেবে স্বীকৃত। ছোট্ট গণ আমেরিকান ঘুঘু'র একটি প্রজাতি হিসেবে এটির লম্বা পা রয়েছে। গড়পড়তা এটি ২৬.৫–৩৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ওজনে ১৯০ গ্রাম হয়ে থাকে। সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির সাথে রঙের ভারসাম্যতা বজায় রেখেছে এ ঘুঘু। পুরুষ সকরো ঘুঘু'র মাথা ও নিম্নাংশ ঘন খয়েরী রঙের। সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির ন্যায় কানে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। গলায় নীল-ধূসর এবং ঘাড়ে চিকন পটলবর্ণের দাগ আছে। ঊর্ধ্বাংশে বাদামী রঙ রয়েছে। বনে স্তন্যপায়ী প্রাণীর অনুপস্থিতি থাকলেও লাল-লেজবিশিষ্ট শিকারী বাজপাখীর শিকারে পরিণত হতে পারে সকরো ঘুঘু।[3] তাদের আগমন বার্তা প্রকাশ পায় তিনবার কু শব্দের মাধ্যমে ও প্রস্থানকালে কু-ওও, ওও, ওও, ওও, কু-ওও শব্দ করে যা করতে এক সেকেন্ডেরও কম সময় নেয়।
ডুমুর গাছেই তারা বাসা বাঁধতে অধিক পছন্দ করে।[4] মার্চ-এপ্রিল মাসে স্ত্রী সকরো ঘুঘু ডিম পাড়ায় উদ্যোগী হয়। সাধারণতঃ মনুষ্য নির্মিত ১ থেকে ২.৫ মিটার উঁচু বাক্সে ২টি সাদা ডিম পাড়ে। ১৪ থেকে ১৭ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দেয়। ১৪ থেকে ২০ দিন অতিক্রান্ত হবার পর পাখির বাচ্চাগুলোর শরীরে পালক গজায়।[5]
স্বভাব
সকরো ঘুঘুর আচরণ অন্যসব ঘুঘুর থেকে একেবারেই ভিন্ন। এরা খুব বেশিমাত্রায় একাকী চলাফেরা করে। কদাচিৎ জোড়ায় জোড়ায় থাকে। প্রজনন মৌসুম শেষ হলেই এরা আবার আলাদা হয়ে যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ঘুঘুরা খাবার যোগাড় করার মত বয়সে এসে পৌঁছালেই তাদের বাবা-মা তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। পুরুষ ঘুঘুদের মধ্যে এ বিষয়টা বেশি দেখা যায়। তাদের বাসস্থান স্তন্যপায়ী-শূন্য হবার কারণে এরা মানুষ তেমন ভয় পায় না। একই কারণে বিড়ালও ভয় পায় না। ফলে তারা বনবিড়ালের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।[5]
বিলুপ্তির সম্ভাবনা
ধারনা করা হচ্ছে যে, প্রধানতঃ বন বিড়ালের শিকারে পরিণত হয়েই সকরো ঘুঘু'র সম্পূর্ণ বিলোপন ঘটবে। মানুষের শিকারের কবলে পড়েও এ পাখির সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। তারপরও ক্ষুদ্র পরিসরে সকরো দ্বীপে পাখিটির আবাসস্থলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে এখানে বন বিড়ালের আবির্ভাব ঘটে যা ১৯৫৩ সালে ছিল না।[6] বংশধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য সংরক্ষণাগারে সকরো ঘুঘুকে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।[5] ৩০ অক্টোবর, ২০০৬ সালে লন্ডন চিড়িয়াখানায় পাখিটির সফলতম বংশবিস্তার ঘটেছে। পাখির বাচ্চাটির নামকরণ হয়েছে আর্নি যা বিখ্যাত চলচ্চিত্রতারকা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের নামানুসারে। তিনি সকরো দ্বীপে অভিনয়ের সময় বলেছিলেন, আবারো ফিরে আসবেন।
তথ্যসূত্র
- BLI (2004), Schmechel (2006)
- Johnson & Clayton (2000)
- Brattstrom & Howell (1956)
- Brattstrom & Howell (1956), BLI (2007), CMICD (2007)
- Schmechel (2006)
- Brattstrom & Howell (1956), BLI (2004, 2007)
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে সকরো ঘুঘু সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Socorro Dove (Zenaida graysoni), সকরো ঘুঘু'র আরও আলোকচিত্র, ভিডিও এবং ডাক, The Internet Bird Collection.