শাকা জুলু

শাকা (১৭৮৭সেপ্টেম্বর ২২, ১৮২৮) একটি জাতির শুরুর দিকে একটি ছোট গোত্র থেকে জুলু উপজাতিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি জুলু জাতির এ উত্থানে ফোঙ্গোলো এবং যিমখুলু নদীর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার অংশকে আন্দোলিত করে তোলেন।[1]

শাকা
রাজত্ব১৮১৬  ১৮২৮
জন্মআনু.1787
কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশ, মেলমোন্ত
মৃত্যুআনু.1828 (৪১ বছর)
কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশ]
বংশধরকেউ পরিচিত বা স্বীকৃত
পেশাজুলু রাজ্যের রাজা

জন্ম

১৭৮৭ সালে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে (যা বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা নামে পরিচিত) শাকার জন্ম হয়। তার বাবা সেঞ্জাংগাখোনা ছিলেন ‘জুলু’ নামের ছোট্ট এক সরদারির নেতা এবং মা নান্দি সেঞ্জাংগাখোনার বৈধ স্ত্রী ছিলেন না।

অবৈধ সন্তান হিসেবে শাকার জন্ম হলে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তাকে ও তার মাকে সেঞ্জাংগাখোনার বাড়ি হতে নির্বাসিত করা হয়। নির্বাসিত হওয়ার পর তারা লাঙ্গেনি সম্প্রদায়ে আশ্রয় নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। অবৈধ সন্তানকে এঙ্গুনি গোত্রের মধ্যে কখনোই ভালো চোখে দেখা হতো না। সেজন্য ছোটবেলা থেকেই শাকাকে নানাভাবে নানা রকম নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করতে হতো।

সেনাবাহিনীতে যোগদান

লাঙ্গেনি সম্প্রদায়ের মানুষের এই নির্যাতন ও নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে সেখানে কিছুকাল থাকার পর শাকাকে নিয়ে তার মা লাঙ্গেনি সম্প্রদায় ত্যাগ করে থেথোয়া সম্প্রদায়ে এসে আশ্রয় নেন। সম্প্রদায়ের নেতা ছিল ডিংগিশোইয়ো। শাকা বড় হয়ে ডিংগিশোইয়োর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ধীরে ধীরে আপন যোগ্যতায় তিনি প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন। অন্যের উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ দক্ষতা গড়ে ওঠে তার।

জুলু গ্রামে হামলা

১৮১৬ সালে শাকার বাবা মারা যায়। ডিংগিশোইয়ো তার শিষ্য শাকাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং তার সাহায্যেই শাকা তার বড় ভাইদের হত্যা করে ও তাড়িয়ে দিয়ে জুলু গ্রামের সরদারি দখল করে নেন। এসময় জুলু সম্প্রদায় ছিল খুবই ক্ষুদ্র। গোটা সম্প্রদায়ে প্রায় ১,৫০০ জন অধিবাসী ছিলো।

রাজ্যবিস্তার

রাজত্ব লাভের পর শাকা অল্প সময়ের মধ্যেই তার পার্শ্ববর্তী সম্প্রদায়টি জয় করে নেন। এভাবে অনেক সম্প্রদায়কে নিজের শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন শাকা। এর মধ্যে লাঙ্গেনি সম্প্রদায়টিও ছিলো।

সেনাবাহিনী

সেনাবাহিনী গঠনের চমৎকার দক্ষতার কারণে শাকা সামরিকভাবেও খুব দ্রুত সফলতা লাভ করেন। তার সৈন্যদের জন্য নতুন রণকৌশল ও নতুন অস্ত্র চালু করেন। তার সৈন্যদলের ব্যবহৃত নতুন অস্ত্রের নাম ছিল ‘ইকলোয়া’। ইকলোয়া হলো ছোটখাটো বর্শার মতো একটি অস্ত্র, তবে এর বিশেষত্ব হলো এর বিশেষ লম্বা ও ধারালো ফলা। প্রতিপক্ষের জন্য এই আসেগাই আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে কারণ এর আঘাত প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছিল প্রাণঘাতী। শুধু অস্ত্র নয়, তার সৈন্যদলের প্রতিটি যোদ্ধা ছিল মানসিক বলে বলিয়ান। প্রতিটি যুদ্ধ কিংবা অভিযানে যাওয়ার আগে শাকা তার সৈন্যদলের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিতেন, “জয় অথবা মৃত্যু”। অর্থাৎ, হয় জিততে হবে নয়তো মরতে হবে। শাকার সেনাবাহিনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল নিয়মানুবর্তিতা। সাকার সৈন্যদলের কেউই কোনো জুতা পায়ে দিতে পারতো না। শাকার উদ্দেশ্য ছিল যাতে সকল সৈন্য খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি কিংবা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের পাকে আরো মজবুত করতে পারে। ফলে জুলু সেনাবাহিনী একসময় সেখানকার সবচেয়ে গতিময় সেনাবাহিনীতে রূপ নেয়। কোনো যুদ্ধে যে-ই বেঁচে থাকতো তাকে জুলুদের একজন করে নেওয়া হতো। আর কেউ জুলুদের সাথে যোগ দিতে অস্বীকার করলে তাকে অন্য স্থানে চলে যেতে হতো। ১৮২৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সাগরের উপকূল জুড়ে ১১,৫০০ বর্গ মাইলের এক বিশাল সাম্রাজ্যের রূপ নেয় জুলু।

মৃত্যু

জীবনের শেষের দিকে এসে শাকা তুমুল অত্যাচারী ও নির্দয় হয়ে পড়েন। ১৮২৭ সালে শাকার মা নান্দি মারা গেলে মায়ের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে শাকার মনে হয় কিছু কিছু মানুষ যথেষ্ট শোক পালন করছে না। ফলে ভীষণ রেগে যান শাকা। তিনি শত শত জুলুকে হত্যা করেন। শোনা যায়, স্বামীর সাথে সাথে গর্ভবতী স্ত্রীদেরও হত্যার আদেশ দেন তিনি। শাকা কখনো বিয়ে করেননি। তার কোনো বৈধ সন্তানও ছিল না। তার সন্তান জন্ম নিলে সে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে রাজ্য দখল করে নেবে এই ভয়েই তিনি কখনো বিয়ে করেননি। তবে অনেক রক্ষিতা ছিল তার। আর কোনো রক্ষিতা যদি কখনো গর্ভবতী হয়ে পড়তো সাথে সাথে তাকে হত্যার আদেশ দিতেন শাকা। এছাড়াও পূর্বে যারা তার কিংবা তার মায়ের সাথে কোনো দুর্ব্যবহার করেছিল তাদেরকেও খুঁজে খুঁজে নৃশংসভাবে হত্যা করেন তিনি।

শাকার নিজের ভাইয়েরাই তাকে হত্যার জন্য উঠে পড়ে লাগে। ১৮২৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শাকার এক সৎ ভাই তাকে হত্যা করে এবং কোনো এক অজানা স্থানে তার দেহ মাটির নিচে সমাধিস্থ করে ফেলে। এরপর সে হয় জুলু সম্প্রদায়ের নতুন রাজা।

তথ্যসূত্র

  1. "History of Shaka (Tshaka), King of the Zulu"bulawayo1872.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.