শাকম্ভরী
শাকম্ভরী হিন্দু দেবী মহামায়ার অপর রূপ। দেবীর এই রূপের বর্ণনা মার্কণ্ডেয় পুরাণ ও দেবীভাগবত পুরাণে বর্ণিত হইয়াছে। দেবীভাগবত পুরাণে উল্লেখ করা মতে, হিরণ্যাক্ষ বংশধর রুরুর পুত্র দুর্গমাসুরকে বধ করার নিমিত্ত দেবী শাকম্ভরী রূপে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন।
দুর্গমাসুরের সহিত যুদ্ধ
ব্রহ্মার বরে দুর্গমাসুর ত্রিলোক মধ্যে অখিল দেব দ্বিজগণের অন্তরে যে বেদমন্ত্র বিদ্যমান ছিল তা প্রাপ্ত করেন। ফলে বিগ্রগণ বেদমন্ত্র সকল বিস্মৃত হয়। ঋষিরা যজ্ঞে আহুতি প্রদানে অক্ষম হয়। তখন ভূমণ্ডলে নিত্য হোম, শ্রাদ্ধ যজ্ঞ ও জপাদি সমুদয় কার্যই বিলুপ্ত হওয়ার ফলে ভীষণ হাহাকার ধ্বনি উত্থিত হইল । যজ্ঞে ঘৃত আহুতি প্রদান না হওয়ায় ধরনীতলে বর্ষণ হইল না। শস্য, ফসল কিছুই উৎপাদিত হইল না। ঋষিগণ, দেবগণ ক্রমে দুর্বল হইতে লাগিল। অনাহারে বিপ্রগণ দেবী মহামায়ার স্তোত্রপাঠ করেন। দেবী মহামায়া প্রকট হইলে বিপ্রগণ ও দেবগণ তাঁহাদের করুন অবস্থা দেবীর নিকট নিবেদন করেন। তাঁহাদের দুঃখে দেবীর নয়ন হইতে অশ্রুধারা ধরনীতলে বর্ষণ রূপে পতিত হইতে থাকিল। যাবৎদিবস পৃথিবীতে শস্য, ফসল উৎপাদিত না হইল তাবৎদিবস দেবী নিজ দেহে শাক, ফল উৎপাদন করিয়া বিপ্র ও পৃথিবীবাসীদের ভরন-পোষণ করেন। আপন দেহে শাক উৎপন্ন করিয়া তিনি ধরনীবাসীর ভরন-পোষণ করিয়াছিলেন তাই তিনি ত্রিভুবনে শাকম্ভরী নামে বিখ্যাতা হন।[1]
ধরনীবাসীর পরিত্রাণপপ্রদায়িনী সেই দেবীর সহিত যুদ্ধাভিলাষে দুর্গমাসুর রণক্ষেত্রে গমন করে। দেবীর সাহায্যার্থে দেবীর অন্যান্য রূপ কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা ও দেবীর অন্যান্য মহাবিদ্যা প্রভৃতি দেবীরা রণভূমিতে আগমন করেন। অসুর ও দেবতাদের পরস্পর নিক্ষিপ্ত বানে সূর্য আচ্ছাদিত হইয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হইল। ঘোরতর যুদ্ধের অস্ত্রাঘাতে উত্থিত অগ্নিতে রণভূমি পুনরায় আলোকিত হইয়া উঠিল। দেবীর সহিত দুর্গমাসুরের প্রবল যুদ্ধে দেবী অস্ত্রাগাতে দুর্গমাসুরের বধ করেন।
তথ্যসুত্র
- দেবীভাগবত পুরাণ