লি কুয়ান ইউ

লি কুয়ান ইউ, জিসিএমজি, সিএইচ, এসপিমেজে (জন্ম: ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩ - মৃত্যু: ২৩ মার্চ, ২০১৫) স্ট্রেইট সেটেলম্যান্টসে (ব্রিটিশ আমলের সিঙ্গাপুর) জন্মগ্রহণকারী সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে দেশ স্বাধীনতার পর ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করেন।[1] তিন দশকেরও অধিক সময় রাষ্ট্রপরিচালনার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। তাকে ‘সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[2][3] এছাড়াও তার নেতৃত্বে এক প্রজন্মের মধ্যেই দেশটি তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দেশের রূপান্তরিত হয়।[2][4]

লি কুয়ান ইউ
জিসিএমজি, সিএইচ, এসপিএমজে
李光耀
২০০২ সালে লি কুয়ান ইউ
সিঙ্গাপুরের ১ম প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৩ জুন, ১৯৫৯  ২৮ নভেম্বর, ১৯৯০
রাষ্ট্রপতিউইলিয়াম গুদে (গভর্নর)
ইউসুফ ইসহাক
বেঞ্জামিন শিয়ার্স
ডেভন নায়ার
উই কিম উই
ডেপুটিতোহ চিন সায়ে
গোহ কেং সুই
এস রাজারত্মম
গোহ চক তং
পূর্বসূরীলিম ইয় হক (মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে)
উত্তরসূরীগোহ চক তং
সিঙ্গাপুরের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৮ নভেম্বর, ১৯৯০  ১২ আগস্ট, ২০০৪
প্রধানমন্ত্রীগোহ চক তং
পূর্বসূরীএস রাজারত্মম
উত্তরসূরীগোহ চক তং
সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী উপদেষ্টা
কাজের মেয়াদ
১২ আগস্ট, ২০০৪  ২১ মে, ২০১১
প্রধানমন্ত্রীলি সিয়েন লুং
পূর্বসূরীপদ সৃষ্ট
উত্তরসূরীপদ বিলুপ্ত
পিপলস অ্যাকশন পার্টির মহাসচিব
কাজের মেয়াদ
২১ নভেম্বর, ১৯৫৪  ১ নভেম্বর, ১৯৯২
পূর্বসূরীপদ সৃষ্ট
উত্তরসূরীগোহ চক তং
তানজন পাগার জিআরসি
তানজন পাগার এসএমসি (১৯৫৫-১৯৯১) সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২ এপ্রিল, ১৯৫৫  ২৩ মার্চ, ২০১৫
পূর্বসূরীসংসদীয় আসন সৃষ্ট
উত্তরসূরীজোয়াও পেরেইরা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মহ্যারি লি কুয়ান ইউ
(১৯২৩-০৯-১৬)১৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৩
স্ট্রেইটস সেটেলম্যান্টস
মৃত্যু২৩ মার্চ ২০১৫(2015-03-23) (বয়স ৯১)
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল, সিঙ্গাপুর
রাজনৈতিক দলপিপলস অ্যাকশন পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীকোয়া জিওক চু জ. ১৯২০ মৃ. ২০১০; মৃত্যু)
সন্তানলি সিয়েন লুং (জ. ১৯৫২)
লি উই লিং (জ. ১৯৫৫)
লি সিয়েন ইয়াং (জ. ১৯৫৭)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীর‌্যাফলস ইনস্টিটিউশন
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স
ফিৎজউইলিয়াম কলেজ, কেমব্রিজ

প্রারম্ভিক জীবন

হক্কা ও চীনা পেরানাকান বংশোদ্ভূত চতুর্থ প্রজন্মের সিঙ্গাপুরী তিনি।[5] ১৯৩১ সালে তেলক কুরাউ ইংলিশ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে র‌্যাফল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। তার সহপাঠী ও একমাত্র বালিকা এবং ভবিষ্যতের সহধর্মীনি কোয়া জিওক চু এখানেই পড়তেন। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে কোয়া ইংরেজি ও অর্থনীতি বিষয়ে তাকে পরাজিত করতে পারতেন।[6]

কর্মজীবন

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফিৎজউইলিয়াম কলেজ থেকে আইনে প্রথম শ্রেণীতে দ্বৈত তারকা প্রাপ্ত হন ও ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫০ সালে মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টার মনোনীত হন ও ১৯৫৯ পর্যন্ত আইনজীবী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সহঃ প্রতিষ্ঠাতা হন ও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের মহাসচিব ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে দলকে আটটি বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পূর্ব পর্যন্ত প্রচারণা চালান। মালয়েশিয়া ফেডারেশন গঠিত হলে সিঙ্গাপুরকে মালয়, সাবাহ ও সারাওয়াকের সাথে একীভূত করা হয়। এরফলে জাতিগত বিরোধ ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই বছরের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

রাজনৈতিক জীবন

সংসদীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লি ও তার মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা ঔপনিবেশিক আমলে কোনরূপ প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন অনুন্নত অঞ্চলটি পরিচালনায় মনোনিবেশ ঘটান।

১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার পর পদত্যাগ করেন। তার উত্তরসূরী গোহ চক তং তাকে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন। এ পদে তিনি ২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান লি সিয়েন লুং দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হলে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাকে মন্ত্রীপরিষদের উপদেষ্টা মনোনীত করেন। এরফলে তিনি ৫৬ বছর ধরে মন্ত্রী পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব সফলতার সাথে সমাপণ করেন। এছাড়াও, ২০১৫ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর তানজং পাগার নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত হয়েছেন।[7][8][9]

মূল্যায়ণ

তার নীতির অন্যতম দিক হচ্ছে, অভিবাসিত জনগোষ্ঠী ও পাশ্চাত্য দেশসমূহের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকল্পে ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করা। তার অনেকগুলো নীতি অদ্যাবধি লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসিতে শিক্ষা দেয়া হয়। জনবিক্ষোভ, প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে পশ্চিমাদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু, তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশলীলতা আনয়ণ ও আইনের শাসন প্রয়োগ করাকেই এরজন্য দায়ী বলে জানান।[10][11]

ব্যক্তিগত জীবন

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ তারিখে কোয়া জিওক চুয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। উভয়েই ইংরেজিকে তাদের মূল ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতেন। ১৯৫৫ সালে ৩২ বছর বয়সে চীনা ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন।[12][13] যুব অবস্থায় জাপানী ভাষা শেখেন ও সিঙ্গাপুরে জাপানী আগ্রাসনকালীন তিনি জাপানী অনুবাদকের কাজ করেন।[6][14] এ দম্পতির দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।[15] জ্যেষ্ঠ পুত্র সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল ছিলেন ও ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হন।

২৩ মার্চ, ২০১৫ তারিখে লুং তার পিতার দেহাবসানের কথা ঘোষণা করেন।[16] কিছুদিন জাতীয় শোক পালন করা হয়।[17] ২৯ মার্চ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় বিশ্বনেতারা উপস্থিত ছিলেন।[18]

তথ্যসূত্র

  1. Hoe Yeen Nie (২ জুন ২০০৯)। "State of Singapore came into being 50 years ago on 3 June"। Singapore: Channel NewsAsia।
  2. Allison, Graham (২৮ মার্চ ২০১৫)। "Lee Kuan Yew: Lessons for leaders from Asia's 'Grand Master'"CNN। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৫
  3. Weatherbee, Donald E. (২৩ এপ্রিল ২০০৮)। Historical Dictionary of United States-Southeast Asia RelationsScarecrow Press। পৃষ্ঠা 213। আইএসবিএন 9780810864054। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৫
  4. Strauss, Steven D. (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। Planet Entrepreneur: The World Entrepreneurship Forum's Guide to Business Success Around the WorldJohn Wiley & Sonsআইএসবিএন 9781118810750। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৫
  5. Low, Shawn; McCrohan, Daniel। Singapore। Lonely Planet।
  6. Lee Kuan Yew (২০০০)। From Third World to First। Singapore: Marshall Cavendish।
  7. "Wife of Lee Kuan Yew dies at 89"Bangkok Post। Agence France-Presse। ২ অক্টোবর ২০১০।
  8. Buckley, Chris (23 March 2015). "In Lee Kuan Yew, China Saw a Leader to Emulate". The New York Times (blog).
  9. "Singapore's founding father Lee Kuan Yew dies at 91"। London: BBC News। ২২ মার্চ ২০১৫।
  10. Rose, Charlie (২২ অক্টোবর ২০০৯)। "Lee Kuan Yew Interview"Charlie Rose। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৫
  11. "Lee Kuan Yew, Singapore's Founding Father, Dies at 91"The Wall Street Journal। New York। ২২ মার্চ ২০১৫।
  12. "Speech by Mr Lee Kuan Yew, Minister Mentor, at Speak Mandarin Campaign's 30th anniversary launch" (PDF)Channel NewsAsia। Singapore। ১৭ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১২
  13. Lee Wei Ling (২১ মার্চ ২০১০)। "No need for a 'uneqqee' name"। The Sunday Times। Singapore।
  14. Tan, Sumiko; Fook Kwang Han; Fernadez, Warren (১৯৯৮)। Lee Kuan Yew: The Man and His Ideas। Singapore: Times Editions। আইএসবিএন 978-981-204-049-7।
  15. "The Cabinet – Mr LEE Kuan Yew"। Government of Singapore। ২১ জুন ২০০৬। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১২
  16. "Passing of Mr Lee Kuan Yew, founding Prime Minister of Singapore"। Prime Minister's Office Singapore।
  17. "Lee Kuan Yew: A very Singaporean send-off"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫
  18. "Lee Kuan Yew: Singapore holds funeral procession"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫

আরও পড়ুন

প্রাথমিক উৎস

  • Lee, Kuan Yew (১৯৯৮)। The Singapore Story: Memoirs of Lee Kuan Yew, Vol. 1। Times Editions। আইএসবিএন 9789812049834।
  • (২০০০)। From Third World to First: 1965-2000: Memoirs of Lee Kuan Yew, Vol. 2Harperআইএসবিএন 9780060197766।
  • (২০০৫)। Keeping My Mandarin Alive: Lee Kuan Yew's Language Learning Experience। World Scientific Publishing Company। আইএসবিএন 9789812563828।
  • (২০১১)। Hard Truths To Keep Singapore Going। Straits Times Press। আইএসবিএন 9789814266727।
  • (২০১২)। My Lifelong Challenge: Singapore's Bilingual Journey। Straits Times Press। আইএসবিএন 9789814342032।
  • (২০১৩)। One Man's View of the World। Singapore: Straits Times Press। আইএসবিএন 9789814342568।
  • (২০১৩)। The Wit and Wisdom of Lee Kuan Yew। Didier Millet। আইএসবিএন 9789814385282।
  • (২০১৪)। Lee Kuan Yew: A Life in Pictures। Straits Times Press। আইএসবিএন 9789814342582।

অন্যান্য উৎস

  • Lee Kuan Yew: Grand Master's Insights on China, the United States and the World। MIT Press। ২০১৩। আইএসবিএন 9780262019125।
  • Koh, Buck Song (2011). Brand Singapore: How Nation Branding Built Asia's Leading Global City. Singapore: Marshall Cavendish.
  • Plate, Tom. Conversations with Lee Kuan Yew: Citizen Singapore: How to Build a Nation (Giants of Asia Series). Marshall Cavendish 2010 (আইএসবিএন ৯৮১২৬১৬৭৬৪)
  • Barr, Michael D. 2000. Lee Kuan Yew: The Beliefs Behind the Man. Washington D.C.: Georgetown University Press.
  • Datta-Ray, Sunanda K. 2009. Looking East to Look West: Lee Kuan Yew's Mission India
  • Gordon, Uri. 2000. Machiavelli's Tiger: Lee Kwan Yew and Singapore's Authoritarian regime
  • Josey, Alex. 1980. Lee Kuan Yew – The Crucial Years. Singapore and Kuala Lumpur: Times Books International.
  • King, Rodney. 2008. The Singapore Miracle, Myth and Reality. 2nd Edition, Insight Press.
  • Kwang, Han Fook, Warren Fernandez and Sumiko Tan. 1998. Lee Kuan Yew: The Man and His Ideas. Singapore: Singapore Press Holdings.
  • McCarthy, Terry। "Lee Kuan Yew"Time Asia। Hong Kong। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৫
  • Minchin, James. 1986. No Man is an Island. A Study of Singapore’s Lee Kuan Yew. Sydney: Allen & Unwin.

বহিঃসংযোগ

স্বাক্ষাৎকার ও নিবন্ধ
রাজনৈতিক দপ্তর
নতুন অফিস সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী
১৯৫৯-১৯৯০
উত্তরসূরী
গোহ চক তং
পূর্বসূরী
হন সুই সেন
অর্থমন্ত্রী
ভারপ্রাপ্ত

১৯৮৩
উত্তরসূরী
টনি তান
পূর্বসূরী
এস. রাজারত্ম
সিঙ্গাপুরের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী
১৯৯০-২০০৪
উত্তরসূরী
গোহ চক তং
নতুন অফিস সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী পরামর্শক
২০০৪-২০১১
পদ বিলুপ্ত
বিধানসভার আসন
নতুন পদবী তানজং পাগার এসএমসি থেকে সংসদ সদস্য
১৯৫৯-১৯৯১
সংসদীয় আসন বিলুপ্ত
তানজং পাগার জিআরসি থেকে সংসদ সদস্য
১৯৯১-২০১৫
উত্তরসূরী
জোয়ান পেরেইরা
(তানজং পাগার ওয়ার্ড)
পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়
নতুন অফিস পিপলস অ্যাকশন পার্টির মহাসচিব
১৯৫৪-১৯৯২
উত্তরসূরী
গোহ চক তং
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.