যম (হিন্দুধর্ম)
হিন্দুধর্মে, যম (সংস্কৃত: यम), হচ্ছে মৃত্যুর দেবতা। ঋগ্বেদে তার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি মানবজাতিকে বাস করার জন্য একটি জায়গা খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছেন, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের পছন্দমত পথ বেছে নেবার বা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা প্রদান করেছেন।[2] বৈদিক মতবাদ অনুযায়ী ধারনা করা হয় যে, যম হচ্ছেন প্রথম নশ্বর ব্যক্তি যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং স্বর্গীয় আবাসে গমন করেছিলেন; যার ফলে তিনি মৃত্যুর দেবতায় উত্তীর্ণ হন।[3] যমের নামকে "যমজ" অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং কিছু পৌরাণিক কথায় তাকে তার যমজ বোন "যমুনার" সাথে সম্পর্কিত করা হয়।
যম (হিন্দুধর্ম) | |
---|---|
মৃত্যু | |
![]() | |
দেবনাগরী | यम |
অন্তর্ভুক্তি | দেবতা |
আবাস | নরক |
গ্রহ | প্লুটো |
মন্ত্র | ঔঁ সূর্যপূুত্রয়া বিদ্মহে মহাকালয়া ধীমহী তন্নোঃ যম প্রচোদয়াৎ।[1] |
অস্ত্র | দণ্ড |
বাহন | ভারতীয় মোষ |
গ্রিক সমমান | হেডিস |
হিন্দুধর্মে যমকে বিভিন্নভাবে বর্ননা করা হয়েছে যা পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী নির্দিষ্ট নয়। কিছুক্ষেত্রে, বিশেষ করে ব্রহ্ম পুরাণে তিনি ন্যায়ের দেবতা এবং ধর্মরাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত; কিন্তু অন্যান্য পুরাণে, যমের সাথে ধর্মরাজের কোন সম্পর্ক নেই।[4]
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থেও যমদেবের উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও বৌদ্ধধর্মের যমের উপাখ্যানগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বলা হয়েছে।[5]
বৈশিষ্ট্যসমূহ

হিন্দুধর্মে যম হচ্ছে মৃত্যুর দেবতা। হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থ অনুযায়ী, যারা তাকে তার কাজে সাহায্য করে তাদের নাম হচ্ছে কাল (সময়), জরা (বার্ধক্য), ব্যাধি (রোগ), ক্রোধ (রাগ) এবং অসুয়া (ঈর্ষা)। তিনি হচ্ছেন লোকপালদের একজন এওং দক্ষিণ দিকের দেবতা। অন্যান্য গ্রন্থে, ধর্ম দেবতার মতো, যমকে ন্যায়বিচারের দেবতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, অথবা অন্যান্য রূপে বর্ণনা করা হয়।
কঠোপনিষদে, যমকে বিস্ময়-বালক নচিকেতার একজন শিক্ষক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং তাদের কথোপকথন দ্বারা মানুষের প্রকৃতি, জ্ঞান, আত্মা (আত্ম, স্ব) এবং মোক্ষ (মুক্তি) বর্ণনা করা হয়েছে।[6]
মহাভারতে, তিনি হচ্ছেন যুধিষ্ঠিরের পিতা (তিনি ধর্মরাজ নামেও পরিচিত), যিনি পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন (কর্ণের জন্ম কুন্তীর বিবাহের পুর্বে হয়েছিল, সুতরাং বলা যেতে পারে কর্ণ যুধিষ্ঠিরের বড় ভাই ছিলেন) রবং কিছু সূত্র অনুযায়ী বিদুর রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
অন্যান্য গ্রন্থে, যমকে কাল (সময়) বলা হয়েছে, যা অন্যান্য দেবতা বিশেষ করে শিবকে বলা হয়েছে।[7] যদিও শিবকে মহাকাল (মহা সময়) রূপী পৃথিবী প্রলয়কারী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়।[7] নুরস্থানিদের মধ্যে, যমকে ইম্রা নামেও ডাকা হয়।[8]
ঋগ্বেদে যম
ঋগ্বেদে যমকে সূর্য দেবতা ও তবাস্ত্র কন্যা সরন্যার পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার যমী বা যমুনা নামে একজন যমজ বোন আছে।[7] ঋগ্বেদের মাত্র তিনটি শ্লোকে (১০.১৪, ১০.১৩৫, এবং ১০.১৫৪) তাকে আহ্বান করা হয়েছে। আরেকটি শ্লোক (১০.১০) তার এবং তার বোন যমীর সংলাপ নিয়ে গঠিত।[7] ঋগ্বেদে যমের নাম প্রায় পঞ্চাশ বার উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু প্রায় এককভাবে প্রথম এবং (আরও ঘন ঘন ভাবে) দশম গ্রন্থের (মণ্ডল) মধ্যে।[7]
অগ্নিদেবের, যিনি মৃতদেহের পরিবাহক, সাথে যমদেবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।[7] ঋগ্বেদের ১০.১২.৫ শ্লোকে অগ্নিকে যমদেবের একজন বন্ধু (কাম্য), ঋগ্বেদের ১০.৫২ শ্লোকে অগ্নিকে যমের পুরোহিত বলা হয়েছে, যিনি মৃতদেহ ধ্বংস করেন।[9] ঋগ্বেদের ১.১৬৪.৪৬ শ্লোকে অগ্নি, যম ও মত্রিসভান কে একসাথে অন্যান্য ঐশ্বরিক শক্তির ন্যায় একটি ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে " জ্ঞানী ঋষিরা একজনকে বিভিন্ন নামে আহ্বান করে থাকেন।"[10]
মূর্তিশিল্প
মূর্তিশিল্পে, কিছু সংস্কৃত সূত্র বলে যে তার গায়ের রঙ বজ্র মেঘের ন্যায় গাঢ় রঙের হওয়া উচিত, সাথে দুই হাত, রক্তবর্ণ চোখ এবং পাশে ধারালো দাঁত। তাকে লাল কাপড় দ্বারা (কখনো কখনো কালো কাপড় দ্বারাও), এবং সিংহ সিংহাসন বা একটি মহিষের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় চিত্রিত করা হয়।[7] বিষ্ণুধর্মোত্তরো অনুযায়ী তাকে চার বাহু বিশিষ্ট এবং সোনালি হলুদ রঙের পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা চিত্রিত করা হয়।[7] তিনি একহাতে দড়ি দ্বারা নির্মিত একটি ফাঁস ধরে রাখেন। তার আরেক হাতে একটি দণ্ডও দেখা যায়।
আরো দেখুন
পাদটীকা
- Yama mantra
- The Rig Veda/Mandala 10/Hymn 14 Ralph Griffith (Translator), see also hymns 10.135-10.136
- Arthur Anthony Macdonell। Vedic Mythology। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 172।
- K Merh (1996), Yama: the Glorious Lord of the Other World, DK Publishers, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২৪৬০০৬৬৫, pages 196-199
- Alice Getty (1988), The Gods of Northern Buddhism, Dover, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪৮৬২৫৫৭৫০, pages 149-154
- Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 269-273
- [[#CITEREF|]]
- Minahan, James B. (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। Ethnic Groups of North, East, and Central Asia: An Encyclopedia (English ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 205। আইএসবিএন 9781610690188।
Living in the high mountain valleys, the Nuristani retained their ancient culture and their religion, a form of ancient Hinduism with many customs and rituals developed locally. Certain deities were revered only by one tribe or community, but one deity was universally worshiped by all Nuristani as the Creator, the Hindu god Yama Raja, called imr'o or imra by the Nuristani tribes.
- The characterization of Agni as "priest" in RV 10.52 is from Macdonell (1898, p. 171).
- Arya & Joshhi, vol. 1, p. 434.
তথ্যসূত্র
- Apte, Vaman Shivram (১৯৬৫)। The Practical Sanskrit-English Dictionary (Fourth Revised and Enlarged 1975 সংস্করণ)। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 81-208-0567-4।
- Arya, Ravi Prakash; Joshi, K. L. (২০০১)। Ṛgveda Saṁhita: Sanskrit Text, English translation according to H. H. Wilson and Bhāṣya of Sāyaṇācārya (4 volumes, Second Revised সংস্করণ)। Parimal Publications। আইএসবিএন 81-7110-138-7।
- Chidbhavananda, Swami (১৯৯৭)। Siva Sahasranama Stotram (Third সংস্করণ)। Sri Ramakrishna Tapovanam।
- Macdonell, A. A. (১৮৯৮)। Vedic Mythology (Reprint Delhi 1974 সংস্করণ)। Motilal Banarsidass Publishers Private Ltd.। আইএসবিএন 81-208-1113-5।
- Rao, T. A. Gopnatha (১৯১৪)। Elements of Hindu Iconography (2 volumes, 1999 reprint সংস্করণ)। D. K. Publishers। আইএসবিএন 81-7536-169-7।
আরও পড়ুন
- The Garuda Purana। Wood, Ernest and Subrahmanyam, S.V. (trans.)। BiblioBazaar, LLC। ২০০৮। আইএসবিএন 1-4375-3213-6।
- Meid, W. 1992. Die Germanische Religion im Zeugnis der Sprache. In Beck et al., Germanische Religionsgeschichte – Quellen und Quellenprobleme, pp. 486–507. New York, de Gruyter.