মুনতাসীর মামুন

মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন (জন্ম: ২৪ মে, ১৯৫১) একজন বাংলাদেশি ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করে থাকেন। তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী।

মুনতাসীর মামুন
মুনতাসীর মামুন
জন্ম২৪ মে, ১৯৫১
পেশাশিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীফাতেমা মামুন
সন্তানমিসবাহউদ্দিন মুনতাসীর, নাবীল মুনতাসীর ও রয়া মুনতাসীর।

জন্ম এবং পরিবার

মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৪ মে ঢাকার ইসলামপুরে নানার বাড়িতে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে। তার বাবার নাম মিসবাহউদ্দিন এবং মায়ের নাম জাহানারা খান। পিতামাতার তিন পুত্রের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। তিনি ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী ফাতেমা মামুন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মুনতাসীর মামুনের দুই ছেলে মিসবাহউদ্দিন মুনতাসীর ও নাবীল মুনতাসীর এবং কন্যা রয়া মুনতাসীর

শিক্ষা জীবন

মুনতাসীর মামুনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের চাঁটগায়। চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাইস্কুলে এবং চট্টগ্রাম কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৭২ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বাধীনতার পর ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনিই প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই দৈনিক বাংলা-বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন মুনতাসীর মামুন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন। এর পাশাপাশি ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। এছাড়া তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউটে' সাম্মানিক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কৈশোর থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত হয়ে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় সেরা শিশু লেখক হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর অনুবাদ, চিত্র সমালোচনা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচনা করেন অনেক বই। তার লেখালেখি ও গবেষণার বিষয় উনিশ, বিশ ও একুশ শতকের পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ ও ঢাকা শহর।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড

স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ডাকসুর প্রথম নির্বাচনে মুনতাসীর মামুন ছিলেন সম্পাদক। একই সময়ে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি। ডাকসুর মুখপত্র "ছাত্রবার্তা" প্রথম প্রকাশিত হয় তার সম্পাদনায়। তিনি বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যথাক্রমে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক। তিনি জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং জাতীয় আর্কাইভসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। ঢাকা নগর জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ঢাকার ইতিহাস চর্চার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ (ঢাকা চর্চা কেন্দ্র)। এ কেন্দ্র থেকে ঢাকার ওপর ধারাবাহিক ভাবে ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেটের নির্বাচিত সদস্য হয়েছেন কয়েকবার। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা ও সক্রিয় সদস্য। তিনি এবং তার স্ত্রী ফাতেমা মামুন প্রতিষ্ঠা করেছেন মুনতাসীর মামুন-ফাতেমা মামুন ট্রাস্ট। এ ট্রাস্ট গরিব শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের নিয়মিত সাহায্য করছে।

সাহিত্য কর্ম

মুনতাসীর মামুনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২০[1]। গল্প, কিশোর সাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, চিত্র সমালোচনা, অনুবাদ সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুনতাসীর মামুনের বিচরণ থাকলেও ইতিহাসই তার প্রধান কর্মক্ষেত্র।

  • প্রশাসনের অন্দরমহল | প্রকাশকাল: ১৯৮৭
  • ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী | প্রকাশকাল: ১৯৯৩
  • বাংলাদেশের রাজনীতি: এক দশক | প্রকাশকাল: ১৯৯৯
  • ১৯ শতকের ঢাকার মুদ্রণ ও প্রকাশনা | সময় প্রকাশন | প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০০৪
  • ১৯ শতকে পূর্ববঙ্গের মুদ্রণ ও প্রকাশনা | আইএসবিএন ৯৮৪-৪৫৮-৫২৫-২ | সময় প্রকাশন | প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৫
  • আইন, আদালত ও জনতা | আইএসবিএন ৯৮৪-৪০৪-২৫১-৮ | অনুপম প্রকাশনী | প্রকাশকাল: জুলাই ২০০৫
  • ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ব বাংলার প্রতিক্রিয়া |আইএসবিএন ৯৮৪-৪১০-১২২-০ | মাওলা ব্রাদার্স | প্রকাশকাল; জানুয়ারি ২০০৬
  • ১৯৭১ চুকনগরে গণহত্যা | সুবর্ণ প্রকাশনী | প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০০৮
  • আমার ছেলেবেলা | আইএসবিএন ৯৮৪-৪৫৯-০৬৭-১ | প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০০৮
  • দুঃসময়ের দিনগুলি | প্রকাশকাল: ২০১০
  • ঢাকার স্মৃতি ৯ এবং ১০ | প্রকাশকাল: ২০১০
  • ঢাকার স্মৃতি ৮ | প্রকাশকাল: ২০১০

পুরস্কার

  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার
  • লেখক শিবির পুরস্কার
  • সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার
  • একুশে পদক (২০১০)[2]
  • নূরুল কাদের ফাউন্ডেশন পুরস্কার
  • হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক পুরস্কার
  • ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার
  • অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার
  • অলক্ত স্বর্ণপদক পুরস্কার
  • ড. হিলালী স্বর্ণপদক
  • প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৩)
  • মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক

[3]

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিয়েন্স শহর তাকে 'অনারেবল ইন্টারন্যাশনাল অনারারি সিটিজেনশিপ' প্রদান করে।

তথ্যসূত্র

  1. মুনতাসীর মামুনের বই, প্রথম প্রকাশ: ২০০১আইএসবিএন ৯৮৪-৭০২-৯৬০০০০-৯ ISBN বৈধ নয়
  2. একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান (PDF)। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ৩। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৪
  3. কিশোর সমগ্র ৩, মুনতাসীর মামুন। প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৬আইএসবিএন ৯৮৪-৪৫৯-০৭৭-৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.