মির্জা মাজহারুল ইসলাম

অধ্যাপক ডা. মির্জা মাজহারুল ইসলাম (জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯২৭) বাংলাদেশের একজন অধ্যাপক, শল্যচিকিৎসক ও ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।[1] ২০১৮ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন।

মির্জা মাজহারুল ইসলাম
জন্ম (1927-01-01) ১ জানুয়ারি ১৯২৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাচিকিৎসক
পরিচিতির কারণভাষাসৈনিক, চিকিৎসক
দাম্পত্য সঙ্গীহুসনে আরা খাতুন
সন্তান
পিতা-মাতামির্জা হেলাল উদ্দিন (পিতা)
চান্দ খাতুন (মাতা)
আত্মীয়মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম
পুরস্কারএকুশে পদক (২০১৮)

প্রারম্ভিক জীবন

মাজহারুল ইসলাম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার আগচারান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তিনি মনোমোহন বাবুর পাঠসালায় (বল্লা বাজার) ভর্তি হন। এর পূর্বে তিনি আরবি শিক্ষা লাভ করেন, এবং চতুর্থ শ্রেণীতে সরকারি বৃত্তি লাভ করে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং বল্লা করোনেশন হাই ইংলিশ স্কুলে (বর্তমান বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন।[3] তিনি বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে এমবিবিএস পাশ করেন।[4] এছাড়া উচ্চতর অধ্যয়নের লাভের উদ্দেশে যুক্তরাজ্য যান ১৯৬৩ সালে।

কর্মজীবন

মির্জা মাজহারুল ইসলাম প্রায় ছয় দশক ধরে শৈল্য চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৫৪ সালে অনারারি হাউজ সার্জন হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে সহকারী সার্জন হিসেবে বরিশাল সদর হাসপাতাল (১৯৫৮), ফরিদপুর সদর হাসপাতাল (১৯৬০), সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (১৯৬৬), প্রফেসর অব সার্জারি ও প্রিন্সিপাল হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (১৯৭৬), প্রফেসর অব সার্জারি হিসেব ঢাকা মেডিকেল কলেজ (১৯৮০) এবং ১৯৮৫ সালে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর পর তিনি জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের উপদেষ্টা হিসেবে কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বারডেম সার্জারি বিভাগে মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তিনি দুইবার বারডেমের অবৈতনিক মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনারসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ২০ বছর।

ভাষা আন্দোলনে অবদান

মুক্তিযুদ্ধীর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং আহতদের পাশে চিকিৎসকের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য (১৯৭১)।[5] মির্জা মাজহারুল ইসলাম এ আন্দোলনে জড়িত হন এর সূচনাপর্ব থেকেই(১৯৪৭)। তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রথম দু”টি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন (১৯৪৭-১৯৪৮) এবং প্রথম শহীদ মিনারের পরিকল্পনা ও নির্মানে তার বিশেষ অবদান রয়েছে (২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২)।[6]

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করেন। ভাষা আন্দোলনের প্রায় প্রতিটিঘটনায় মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় (৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭), উক্ত কমিটিতে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে অন্তভূক্ত হন। পরবর্তীতে এ পরিষদ সম্প্রসারিত হয় (১৯৪৮)।[7] নিজেকে ভাষা আন্দোলনের 'আঁতুড় ঘরের' সাক্ষী বলে দাবি করেন এ ভাষাসৈনিক। ১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের ওপর পুলিশের পামলার পর তিনি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অসংখ্য আহত ভাষাকর্মীর অপারেশন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন আমতলার জনসভায়। গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন ২২ ফেব্রুয়ারি

ব্যক্তিগত জীবন

মাজহারুল ইসলামের দাদা মির্জা মাহতাব উদ্দিন বেগ বৃটিশ সরকারের নমিনেটেড ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট এবং পিতা মির্জা হেলাল উদ্দিন 'ডেভিড এন্ড কোম্পানী' ও 'ল্যান্ডেল এন্ড ক্লার্ক' নামক দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মকতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[8] এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার অর্থমন্ত্রী মির্জা নূরুল হুদা ছিলেন তার মামা।

পুরস্কার

সাল নাম বিভাগ ফলাফল
২০১৮ একুশে পদক ভাষা আন্দোলন বিজয়ী

তথ্যসূত্র

  1. "ভাষা সৈনিক অধ্যাপক মির্জা মাজহারুল ইসলাম"গুণীজন ডটকম। ১০জুন ২০০৯। ২০১৬-০৪-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2016-10-20 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "মাজহারুল ইসলাম চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন"দৈনিক কালের কণ্ঠ। প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা, বারিধারা। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-২০
  3. মির্জা মাজহারুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ১৯।
  4. মির্জা মাজহারুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ২১।
  5. মির্জা মাজহারুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ৮।
  6. মির্জা মাজহারুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ৯।
  7. মির্জা মাজহারুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ১১।
  8. মির্জা মাজহারুল ইসলাম, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ। পৃষ্ঠা ২৫ ও ২৬।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.