মাছ ভাজা

মাছ ভাজা বা ভাজা মাছ একটি প্রচলিত খাবার যা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ওড়িশা, আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় খাবার। বাঙালী জীবনে মাছ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অঞ্চলভেদে মাছ ভাজা প্রণালীতে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। প্রায় সব ধরনের মাছ ভাজা হয়। কোথাও মাছকে কড়া ভাজা হয়, কোথাও হালকা। প্রধানত মাছ ডুবো তেলে ভেজে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে শুকনো রান্না করা হয়। মাছ ভাজা ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।

ঢাকা, বাংলাদেশ এ পরিবেশিত রুই ভাজা

বাংলাদেশীদের মধ্যে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা লক্ষ্য করা যায়। মুচমুচে ইলিশ মাছ ভাজা, খুব সাধারন এই রান্নাটি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে খুবই প্রিয়। ‘ইলিশ ভাজা’ গরম গরম খেতে মজা।

প্রণালী

মাছ ভাজার তো বিভিন্ন নিয়ম কানুন আছে। কেউ অল্প সেঁকে মাছ ভাজেন, কেউ কয়লায় পোড়ান, কেউ গরম পানিতে সেদ্ধ করে ভাজেন। তবে যারা কাঁটা বেছে খাওয়ার ভয় পান তারা কিন্তু মাছ মুচমুচে করে ভাজেন।[1]

সব মাছ ভাজার প্রণালী সাধারণত কাছাকাছি হয়। এখানে ইলিশ মাছ ভাজার প্রণালী উল্লেখ করা হলো।

উপকরণঃ
  • ইলিশ মাছ – ৭ টুকরা
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • লবন – প্রায় আধা চা চামচ
  • তেল – ৩ টেবিল চা চামচ

মাছের টুকরা আরো বেশি কিংবা কমও নিতে পারেন, সে অনুযায়ী অন্য উপকরণগুলো বাড়াতে কমাতে হবে। লবনের পরিমানের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন, বেশি যেন না হয়।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

১. উপরের সবগুলো মশলা মাছের টুকরাগুলোতে ভাল করে মেখে ১০ মিনিট রেখে দিন।

২. এরপর কড়াইতে তেল গরম করে তাতে মুচমুচে করে মাছের টুকরাগুলো ভেজে তুলুন। তেল গরম হওয়ার পর ভাজার সময় চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। অল্প আঁচে মাছের টুকরাগুলো ভাল করে ভেজে নিন, দেখতে গাড় বাদামী রঙ হলে নামিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন যাতে পুড়ে কালো না হয়ে যায়। চুলার আঁচ কমিয়ে রাখলে আর পুড়বে না।

সাহিত্যে

বাঙালি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মাছ ভাজা। তাই প্রবাদ প্রবচনেও স্থান করে নিয়েছে মাছ ভাজা। কেউ যদি কোন কিছু জানা সত্ত্বেও না জানার ভান করে তাকে বলা হয়ে থাকে "ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা"। হিমানিশ গোস্বামী তার অভিধানই পানাই এ লিখেছেন, ভাজা মাছ: সাধারণ অর্থে ভর্জিত মৎস্য, কিন্তু বিশেষ অর্থে, যিনি ভাজা মাছ উলটে খেতে পারেন না তাঁকে দোষহীন বা নির্দোষ বলে মনে করা হয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাসে মাছ ভাজার উল্লেখ করেছেন। পদ্ম ঝি দরজার কাছে মুখ বাড়াইয়া বলিল—ও ঠাকুর , দাও না মাছ ভেজে, বাবুরা বলচেন শুনতে পাও না? বাবুরা খাবেন কি দিয়ে? অর্থাৎ সেই পচা মাছ ভাজা আবার দাও। আজকার মাছ এখনও কোটা হয় নাই,...

ভারতের ভবানীপুরের (পদ্মপুকুর) বিখ্যাত কবি হেমেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তার কন্যা ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করতে নিজেই রচনা করেছিলেন যে পংক্তিগুলি তাতে অনেক দেশীয় খাবারের শীর্ষে স্থান পেয়েছিল মজাদার তপসে মাছ। তিনি লিখেছেন:

তপ্ত তপসে মাছ

গরম গরম লুচি আজা মাংস, বাঁধা কপি,

আলু কুচি কুচি।

তপসে মাছের অনন্য স্বাদে মুগ্ধ হয়ে প্রখ্যাত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার ”তপসে মাছ” নামক কবিতায় তপসে মাছ ভাজার কথা উল্লেখ করেছেন।

সৌরভে আমোদ করে ত্রিভুবনময়॥

প্রাণে নাহি দেরি সয় কাঁটা আঁশ বাছা। ইচ্ছা করে একেবারে গালে দিই কাঁচা॥ অপরূপ হেরে রূপ পুত্রশোক হরে। মুখে দেওয়া দূরে থাক গন্ধে পেট ভরে॥ কুড়ি দরে কিনে লই দেখে তাজা তাজা।

টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকাতেলে ভাজা

তথ্যসূত্র


This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.