মকবুলা মনজুর

মকবুলা মনজুর (জন্ম ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮) হলেন একজন বাংলাদেশী লেখক ও ঔপন্যাসিক।[1] সৈয়দুর রহমান তার 'হিস্টরিক ডিকশনারি অব বাংলাদেশ' গ্রন্থে তাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সেলিনা হোসেনহাসান হাফিজুর রহমান-এর পাশাপাশি আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে অবদানকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[2] বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[3]

মকবুলা মনজুর
জন্ম (1938-09-14) ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮
মুগবেলাই, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
পেশালেখক, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক, সম্পাদক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাবাংলা সাহিত্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সময়কালআধুনিক যুগ
ধরনগল্প, উপন্যাস
বিষয়সমাজ, মানুষ, পরিবেশ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিআর এক জীবন
আত্মজা ও আমরা
কালের মন্দিরা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার
২০০৫ কালের মন্দিরা
সক্রিয় বছর১৯৬৮-বর্তমান
দাম্পত্যসঙ্গীমনজুর হোসেন (বি. ১৯৬১)
সন্তানলিন্ডা (মেয়ে)
জয় (ছেলে)
তৈমুর (ছেলে)
সুকন্যা (মেয়ে)
আত্মীয়মোখলেসুর রহমান (ভাই)
ইবনে মিজান (ভাই)
মেহের আজিজ (ভাই)

প্রাথমিক জীবন

মকবুলা ১৯৩৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার মুগবেলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[4] তার বাবার নাম মিজানুর রহমান ও মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। বাবা মিজানুর রহমান লেখালেখি করতেন। তারা ৭ ভাই-বোন।[3] তিন ভাই প্রাবন্ধিক ড. মোখলেসুর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক ইবনে মিজান, প্রাবন্ধিক আজিজ মেহের[4] ও তিন বোন জোবেদা খাতুন, অধ্যাপিকা মোসলেমা খাতুন, মুশফিকা আহমেদ। ভাই বোনেরাও লেখালেখির সাথে যুক্ত। কিশোরী বয়সে তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। বগুড়া থাকাকালীন তিনি বগুড়ার এডওয়ার্ড ঘূর্ণায়মাণ রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করেছেন। এছাড়া যুক্ত ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান প্রতিষ্ঠিত মুকুল ফৌজের সাথে।[3]

শিক্ষাজীবন

১৯৫২ সালে তিনি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বাংলা ভাষা আন্দোলন চলাকালীন সেই সময়ে তিনি স্কুলের হোস্টেলে থাকতেন। স্কুলের গেট ভেঙ্গে মিছিলে যোগ দেওয়ার পর ফিরে আসলে তিনিসহ বাকি মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে দেয়া হয় নি। তিনি তার ভাই প্রবন্ধকার আজিজ মেহেরের সাথে টাঙ্গাইলে মামার বাড়ি ও পড়ে নিজেদের গ্রামের বাড়ি চলে যান। পড়ে তিনি ভারতেশ্বরী হোমসে ভর্তি হন কিন্তু সেখানে শৃঙ্খলিত জীবনে থাকতে না পেরে চলে আসেন। পরে ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ১৯৫৮ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। দীর্ঘদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।[3]

কর্মজীবন

তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে (বর্তমান রূপালী ব্যাংক) অফিসার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া। তাই প্রায় অর্ধেক বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়-এ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের মেয়ের মাঠে পতাকা পুততে চাইলে একজন শিক্ষক বাঁধা দেন। তখন তিনি সেখানে পতাকা পুতে দিয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি উইমেন্স কলেজ ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করান। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রায় ২৫ বছর সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার ফিচার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[3]

সাহিত্য জীবন

মকবুলার সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ৮ বছর থেকে। তখন থেকে তিনি ছড়া লিখতেন। তার লেখা দৈনিক আজাদে ছাপানো হত। তার লেখালেখি জীবনের শুরুর দিকের একটি ছড়া

“জ্বর হলে কি হয়?

ঘন ঘন খিদে পায়

ভাত খেতে প্রাণ চায়

ঔষধের তেতোমিতে

প্রাণ বুঝি চায় যেতে

চুপচাপ শুয়ে থাকা

লাগে বড় বিশ্রী

চেহারা যা হয়েছে

আহা সেকি সুশ্রী!”

১৮ বছর থেকে তিনি গদ্য সাহিত্যে অনুরাগী হন।[3] তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট, নারীবাদী চেতনা নিয়ে তার কলম ধরেন।[5][6] তিনি তার কালের মন্দিরা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন।[7]

পারিবারিক জীবন

মকবুলা মনজুর ১৯৬১ সালের ২৯ জুন মনজুর হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনজুর হোসেন ছিলেন একজন আইনজীবী। মকবুলার ভাই পরিচালক ইবনে মিজানের সাথে মনজুর হোসেনের পরিবারের পূর্ব পরিচয় ছিল। মকবুলা-মনজুর দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে।[3]

গ্রন্থতালিকা

  • আর এক জীবন (১৯৬৮)
  • অবসন্ন গান (১৯৮২)
  • বৈশাখে শীর্ণ নদী (১৯৮৩)
  • জল রং ছবি (১৯৮৪)
  • আত্মজা ও আমরা (১৯৮৮)
  • পতিত পৃথিবী (১৯৮৯)
  • প্রেম এক সোনালী নদী (১৯৮৯)
  • শিয়রে নিয়ত সূর্য (১৯৮৯)
  • অচেনা নক্ষত্র (১৯৯০)
  • কনে দেখা আলো (১৯৯১)
  • নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস (১৯৯২)
  • নদীতে অন্ধকার (১৯৯৬)
  • লীলা কমল (১৯৯৬)
  • কালের মন্দিরা (১৯৯৭)
  • বাউল বাতাস
  • ছায়াপথে দেখা
  • একটাই জীবন
  • সায়াহ্ন যূথিকা
  • নক্ষত্রের তলে

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭)[8]
  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৫) - উপন্যাস
  • জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পুরস্কার (১৯৯৭) - কালের মন্দিরা
  • রাজশাহী লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩)
  • কমর মুশতারী পুরস্কার (১৯৯০) - কথা সাহিত্য
  • বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৪)

আরও দেখুন

  • মেহের আজিজ
  • ইবনে মিজান

তথ্যসূত্র

  1. উম্মে আইরিন (আগস্ট ৩১, ২০১২)। "বাংলা সাহিত্যে মুসলিম লেখিকা"দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬
  2. রহমান, সৈয়দুর (২০১০)। Historical Dictionary of Bangladesh। স্কেয়ারক্রো প্রেস। পৃষ্ঠা ১৮৫। আইএসবিএন 978-0-8108-7453-4।
  3. ইসহাক ফারুকী (মার্চ ১৫, ২০১৪)। "'মানুষকে ভালো না বাসলে ভালো সাহিত্য রচনা করা যায় না'"দ্য রিপোর্ট২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬
  4. "ভাষা ও সংস্কৃতি"সিরাজগঞ্জ বার্তা। মার্চ ৩১, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬
  5. ড. আসাদুজ্জামান খান (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং সাহিত্যে প্রভাব"দৈনিক ভোরের পাতা। ৩১ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬
  6. সমীর আহমেদ (জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)। "ছোটগল্পের বিকল্প ভাবনা টিকে থাকা না থাকা"যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬
  7. Corporation, Marshall Cavendish (সেপ্টেম্বর ২০০৭)। World and Its Peoples: Eastern and Southern Asia। Marshall Cavendish। পৃষ্ঠা 477–। আইএসবিএন 978-0-7614-7631-3।
  8. গাজী মুনছুর আজিজ (২৪ ডিসেম্বর ২০১২)। "অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার - সাহিত্যে নারীর জন্য অনন্য অনুপ্রেরণা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.