বাহাওয়ালপুর রাজ্য
বাহাওয়ালপুর ব্রিটিশ ভারত ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের একটি দেশীয় রাজ্য। ১৮০২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত এই রাজ্য টিকে ছিল। রাজ্যটি ছিল পাঞ্জাব স্টেটস এজেন্সির অংশ। ১৯৪১ সালে রাজ্যের আয়তন ছিল ৪৫,৯১১ বর্গকিমি (১৪,৪৯৪ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা ছিল ১৩,৪১,২০৯। বাহাওয়ালপুর শহর ছিল রাজ্যের রাজধানী।
রিয়াসাত বাহাওয়ালপুর ریاستِ بہاولپور | ||||||
মুঘল সাম্রাজ্য, দুররানি সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধা-স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য | ||||||
| ||||||
| ||||||
![]() বাহাওয়ালপুরের অবস্থান | ||||||
রাজধানী | বাহাওয়ালপুর | |||||
সরকার | রাজ্য (১৬৯০–১৯৫৫) | |||||
বাহাওয়ালপুরের নবাব আমির | মহামান্য নবাব মুহাম্মদ বাহাওয়াল খান আব্বাসি (প্রথম) | |||||
• | ১৯০৭ থেকে ১৯৬৬ | মহামান্য জেনারেল নবাব পঞ্চম সাদিক মুহাম্মদ খান আব্বাসি (শেষ) | ||||
বাহাওয়ালপুরের প্রধানমন্ত্রী | ||||||
• | ১৯৪২–১৯৪৭ | স্যার রিচার্ড মার্শ ক্রফটন (প্রথম) | ||||
• | ১৯৫২ - ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | এ. আর. খান (শেষ) | ||||
ঐতিহাসিক যুগ | মুঘল সাম্রাজ্য (১৮০২–১৮৫৮) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৮-১৯৪৭) পাকিস্তানের দেশীয় রাজ্য (১৯৪৭-১৯৫৫) পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ (১৯৫৫-১৯৭০) পাঞ্জাব, পাকিস্তান (১৯৭০-বর্তমান) বাহাওয়ালপুর জেলা, বাহাওয়ালনগর জেলা ও রহিম ইয়ার খান জেলার মধ্যে বিভক্তি। | |||||
• | প্রতিষ্ঠিত | ১৮০২ | ||||
• | পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে একীভূত | ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | ||||
বর্তমানে | পাকিস্তান, ভারত অংশ |
বাহাওয়ালপুর | |||||
পাকিস্তানের উপবিভাগ | |||||
| |||||
পতাকা | |||||
![]() বাহাওয়ালপুরের অবস্থান | |||||
রাজধানী | বাহাওয়ালপুর | ||||
ইতিহাস | |||||
• | প্রতিষ্ঠিত | ১৯৪৭ | |||
• | ভাঙ্গা হয়েছে | ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | |||
আয়তন | ৪৫,৯১১ কিমি২ (১৭,৭২৬ বর্গ মা) | ||||
![]() |
পাকিস্তানের সাবেক প্রশাসনিক ইউনিট |
---|
মূল প্রদেশ
|
দেশীয় রাজ্য
|
এক-ইউনিট প্রদেশ |
অন্যান্য উপবিভাগ
|
১৮০২ সালে নবাব মুহাম্মদ বাহাওয়াল খান আব্বাসি বাহাওয়ালপুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার উত্তরসূরি নবাব তৃতীয় মুহাম্মদ বাহাওয়াল খান আব্বাসি ব্রিটিশদের সাথে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ হন ফলে বাহাওয়ালপুর ব্রিটিশ ভারতের একটি দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর বাহাওয়ালপুর পাকিস্তান অধিরাজ্যে যোগ দেয়। ১৯৫৫ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাহাওয়ালপুর স্বায়ত্ত্বশাসিত রাজ্য হিসেবে টিকে ছিল। এরপর তা পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে একীভূত হয়।
ইতিহাস



বাহাওয়ালপুর শাসনকারী আব্বাসি গোত্র নিজেদেরকে আব্বাসীয় খলিফাদের বংশধর দাবি করত। তারা সিন্ধু থেকে বাহাওয়ালপুর আসে এবং দুররানি সাম্রাজ্যের অবনতির সময় স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বাহাওয়ালপুরসহ সিস-সতলুজ রাজ্যগুলি উত্তরে সতলুজ নদী, পূর্বে হিমালয়, দক্ষিণে যমুনা নদী ও দিল্লি জেলা এবং পশ্চিমে সিরসা জেলা দ্বারা ঘেরা ছিল। এই রাজ্যগুলির শাসক ছিল মারাঠা সাম্রাজ্যের শিন্দে রাজবংশ, বিভিন্ন শিখ সর্দার এবং অন্যান্য রাজা। ১৮০৩-১৮০৫ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত তারা মারাঠাদেরকে কর প্রদান করতেন। যুদ্ধের পর মারাঠারা ব্রিটিশদের কাছে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হারায়।[1][2][3]
১৮৩৩ সালে বাহাওয়ালপুরের সাথে প্রথম সন্ধি আলোচনায় আসে। এর ফলে নবাবের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়। প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের সময় নবাব ব্রিটিশদেরকে রসদ সরবরাহ এবং সেনা যাতায়াতের অনুমতি প্রদান করেছিলেন। মুলতানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিলেন। এর ফলে তাকে সাবজালকোট ও ভুং জেলা এবং আজীবনের জন্য এক লাখের পেনসন প্রদান করা হয়। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের বদলে তৃতীয় পুত্রকে উত্তরসূরি মনোনীত করে যান। কিন্তু জ্যেষ্ঠ পুত্র পরে নতুন শাসককে পদচ্যুত করে। তিনি ব্রিটিশ অঞ্চলে আশ্রয় নেন এবং বাহাওয়ালপুরের রাজস্ব থেকে পেনসন ভোগ করতে থাকেন। পরে তিনি সিংহাসন দাবি করায় লাহোর দুর্গে বন্দী হন এবং ১৮৬২ সালে বন্দী অবস্থায় মারা যান।
১৮৬৩ ও ১৮৬৬ সালে নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮৬৬ সালে নবাবের মৃত্যুর পর তার চার বয়সী পুত্র চতুর্থ সাদিক মুহাম্মদ খান নবাব হন। ১৮৭৮-৮০ সালের আফগান অভিযানের সময় তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারকে সহায়তা করেছিলেন। ১৮৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর পঞ্চম মুহাম্মদ বাহাওয়াল খান নবাব হন। বাহাওয়ালপুরের নবাবদেরকে ১৭টি গান স্যালুট অনুমোদন করা হয়েছিল।[4]
দিল্লির বাহাওয়ালপুর হাউসে বর্তমানে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা অবস্থিত।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা
রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক ছিল। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখরা ভারতে চলে যায় এবং ভারত থেকে মুসলিমরা বাহাওয়ালপুর আসে। স্বাধীনতার পর নবাব পঞ্চম সাদিক মুহাম্মদ খান পাকিস্তান সরকারকে উদারভাবে সহায়তা করেন। তিনি ৭ কোটি রুপি সরকারকে দান করেন এবং এক মাস সকল সরকারি বিভাগের বেতন রাজকোষ থেকে প্রদান করা হয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, কিং এডওয়ার্ড মেডিকেল কলেজ এবং লাহোরের এটকিনসন কলেজের মসজিদকে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করে দেন। ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময় দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল এবং ১৯৪৭ সালের ৫ অক্টোবর নবাব ও পাকিস্তান সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাহাওয়ালপুর পাকিস্তানে যোগ দেয়। বাহাওয়ালপুর ছিল পাকিস্তানে যোগ দেয়া প্রথম দেশীয় রাজ্য। নবাবের সাথে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে আসা উদ্বাস্তুদের সহায়তার জন্য ফান্ড গঠন করা হয়। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য বাহাওয়ালপুর রাজ্যের অবদান মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ স্বীকার করেছিলেন।
১৯৫৩ সালে ইরাকের বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সাল ও ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানে নবাব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাহাওয়ালপুর পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশের অংশ হয় এবং নবাব বার্ষিক ৩২ লাখ রুপি ভাতা লাভ করতে থাকেন। পাশাপাশি নবাব উপাধি, দেশে ও দেশের বাইরে পূর্বের প্রটোকল বজায় থাকে। ১৯৬৬ সালের মে মাসে নবাব সাদিক লন্ডনে মারা যান। তাকে দেরাওয়ার দুর্গে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হাজি মুহাম্মদ আব্বাস খান আব্বাসি বাহাদুর এরপর নবাব হন। তার ভ্রাতুষ্পুত্র সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ খান বর্তমান নবাব।
জনসংখ্যা
ঐতিহাসিক জনসংখ্যা | ||
---|---|---|
বছর | জন. | ±% |
১৮৭১ | — | |
১৮৮১ | ৫,৭৩,৪৯৪ | — |
১৮৯১ | ৬,৫০,০৪২ | +১৩.৩% |
১৯০১ | ৭,২০,৮৭৭ | +১০.৯% |
১৯১১ | ৭,৮০,৬৪১ | +৮.৩% |
১৯২১ | ৭,৮১,১৯১ | +০.১% |
১৯৩১ | ৯,৮৪,৬১২ | +২৬% |
১৯৪১ | ১৩,৪১,২০৯ | +৩৬.২% |
১৯৪১ সালে বাহাওয়ালপুরের জনসংখ্যা ছিল ১৩,৪১,২০৯। এর মধ্যে ৭,৩৭,৪৭৪ জন পুরুষ (৫৪.৯৮%) এবং ৬,০৩,৭৩৫ জন নারী (৪৫.০২%)। ১৯০১ সালে রাজ্যের শিক্ষার হার ছিল ২.৮%।
রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম। ১৯৪১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৯১% জনগণ মুসলিম এবং হিন্দুদের সংখ্যা ১,৯০,০০০ (৫.৯%) এবং শিখদের সংখ্যা ৫০,০০০ (১.৯%)। অধিকাংশ মুসলিম ও হিন্দু বাহাওয়ালপুরের স্থানীয় অধিবাসী হলেও পাঞ্জাবের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেকেই এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন।
শাসক

শাসনকাল | নবাব[5] |
---|---|
১৭২৩ - ১১ এপ্রিল ১৭৪৬ | প্রথম সাদিক |
১১ এপ্রিল ১৭৪৬ – ১২ জুন ১৭৫০ | প্রথম বাহাওয়াল |
১২ জুন ১৭৫০ – ৪ জুন ১৭৭২ | দ্বিতীয় মুবারাক |
৪ জুন ১৭৭২ – ১৩ আগস্ট ১৮০৯ | দ্বিতীয় বাহাওয়াল |
১৩ আগস্ট ১৮০৯ – ১৭ এপ্রিল ১৮২৬ | দ্বিতীয় সাদিক |
১৭ এপ্রিল ১৮২৬ – ১৯ অক্টোবর ১৮৫২ | তৃতীয় বাহাওয়াল |
১৯ অক্টোবর ১৮৫২ – ২০ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৩ | তৃতীয় সাদিক |
২০ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৩ – ৩ অক্টোবর ১৮৫৮ | ফাতেহ মুহাম্মদ খান |
৩ অক্টোবর ১৮৫৮ – ২৫ মার্চ ১৮৬৬ | চতুর্থ বাহাওয়াল |
২৫ মার্চ ১৮৬৬ – ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ | চতুর্থ সাদিক |
১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭ | পঞ্চম বাহাওয়াল |
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭ – ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | পঞ্চম সাদিক |
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | বাহাওয়ালপুর রাজ্য বিলুপ্ত |
দায়িত্বকাল | প্রধানমন্ত্রী[5] |
---|---|
১৯৪২–১৯৪৭ | স্যার রিচার্ড মার্শ ক্রফটন |
১৯৪৮–১৯৫২ | স্যার আর্থার জন ড্রিং |
১৯৫২ - ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | এ. আর. খান |
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ | বাহাওয়ালপুর রাজ্য বিলুপ্ত |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- A Comprehensive History of Medieval India: From Twelfth to the Mid ... - Farooqui Salma Ahmed, Salma Ahmed Farooqui - Google Books। Books.google.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-২৬।
- History Of The Marathas - R.S. Chaurasia - Google Books। Books.google.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-২৬।
- http://books.google.co.in/books?id=Nyk6oA2nOlgC&pg=PA379&lpg=PA379&dq=%22second+anglo+maratha+war%22+sutlej&source=bl&ots=XGHcTeQC7h&sig=tGnkkkS6o63cT5mX-pIv7R9PtsQ&hl=en&sa=X&ei=DmvDT-HOKcHWrQfj2LjhCQ&ved=0CFYQ6AEwBw#v=onepage&q=%22second%20anglo%20maratha%20war%22%20sutlej&f=false
- Bahawalpur State - Imperial Gazetteer of India, v. 6, p. 197
- Ben Cahoon, WorldStatesmen.org। "Pakistan Princely States"। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৩।
আরও দেখুন
- Nazeer 'Ali Shah, The History of the Bahawalpur State. Lahore: Maktaba Jadeed, 1959.