বাসন্তী লটকনটিয়া
বাসন্তী লটকনটিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Loriculus vernalis) (ইংরেজি: Vernal Hanging Parrot), ভোরা, লেজকাটা টিয়া' বা শুধু লটকন Psittaculidae (সিট্টাকুলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Loriculus (লরিকুলাস) গণের এক প্রজাতির ছোট টিয়া।[1][2] বাসন্তী লটকনটিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ লোরি (মালয়ী: lori = লোরি বা ছোট টিয়া; লাতিন: culus = কোন কিছুর, vernalis = সবুজ)।[2] সারা পৃথিবীতে প্রায় ২২ লাখ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[3] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে; এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[4] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[2]
বাসন্তী লটকনটিয়া Loriculus vernalis | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Psittaciformes |
মহাপরিবার: | Psittacoidea |
পরিবার: | Psittaculidae |
উপপরিবার: | Agapornithinae |
গণ: | Loriculus |
প্রজাতি: | L. vernalis |
দ্বিপদী নাম | |
Loriculus vernalis Sparrman, 1787 | |
প্রতিশব্দ | |
Psittacus vernalis |
বিস্তৃতি
বাসন্তী লটকনটিয়ার মূল আবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম এদের মূল আবাস।[4]
শ্রেণীবিন্যাস
বাসন্তী লটকনটিয়া শ্রীলঙ্কার লটকনটিয়ার (Loriculus beryllinus) সাথে একটি মহাপ্রজাতির সৃষ্টি করেছে। পূর্বে এই প্রজাতিটির একটি উপপ্রজাতি L. v. rubropygialis সৃষ্টি করা হয়েছিল হালকা লাল কোমর আর রঙের গাঢ়ত্বের উপর নির্ভর করে। কিন্তু পরবর্তীতে তার বিলোপন ঘটানো হয়। সেই হিসাব বাসন্তী লটকনটিয়া একপ্রজাতিক।[5]

বর্ণনা
বাসন্তী লটকনটিয়া লাল ঠোঁট ও সবুজ দেহের ছোট্ট গোলগাল টিয়া। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪ সেন্টিমিটার, ডানা ৯.৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৩ সেন্টিমিটার, পা ১.১ সেন্টিমিটার ও লেজ ৪.৩ সেন্টিমিটার।[2] ওজন মাত্র ২৮ গ্রাম।[6] প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে একটু তফাৎ রয়েছে। এর কোমর লাল, লেজ-উপরি ঢাকনি ও গলার পট্টি নীলকান্তমণি রঙের। পুরো দেহ সবুজ রঙের। ঠোঁট লালচে-কমলা অথবা প্রবাল-লাল বর্ণের। ঠোঁটের আগা হলুদ। চোখ বাদামি-পীতাভ কিংবা হলুদাভ-সাদা বা ধূসরাভ-খাকি। পা ও পায়ের পাতা ফিকে কমলা অথবা হলুদাভ-স্লেট রঙের। নখর শিং-বাদামি। স্ত্রী পাখির গলায় অপর্যাপ্ত নীলকান্তমণির পট্টির সাহায্যে পুরুষ পাখি থেকে আলাদা করা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চোখ বাদামি, কোমর লাল ও লেজ উপরি-ঢাকনি লাল-সবুজে মেশানো।[2]

স্বভাব
বাসন্তী লটকনটিয়া আর্দ্র পাতাঝরা ও প্রশস্ত পাতাওয়ালা চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। গাছের মগডালে এদের বেশি দেখা যায়। সমুদ্রসমতল থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের দেখা যায়। সচরাচর পারিবারিক দলে কিংবা সর্বাধিক পঞ্চাশটি পাখির ঝাঁকে দেখা যায়। বনের ফলদ গাছে এরা ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে বন্য ডুমুরের নরম ফলত্বক, রসালো ফল, বাঁশ বীজ ও ফুলের মিষ্টি রস। ঝুলে থাকতে এরা পছন্দ করে; গাছের ডালে উল্টো করে ঝুলে বিচরণ করে, খাবার খায়। বাদুড়ের মত উল্টো ঝুলে বিশ্রাম নেয়। ওড়ার সময় বার বার ডাকে: চট-চট-চট।[2]
প্রজনন
সাধারণত জানুয়ারি থেকে জুন বাসন্তী লটকনটিয়ার প্রধান প্রজনন ঋতু। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। এসময় মরা গাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা বাসা বানায়। বাসায় সবুজ পাতার পত্রফলক বিছিয়ে বিছানা বানায়। বাসা বানানো হয়ে গেলে ৩-৪টি চকচকে সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ কখনও কখনও হালকা বাদামিও হয়। ডিমের মাপ ১.৯ × ১.৫ সেন্টিমিটার।[2]

তথ্যসূত্র
- রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ১৪১।
- জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১০১।
- Loriculus vernalis, BirdLife International এ বাসন্তী লটকনটিয়া বিষয়ক পাতা।
- Loriculus vernalis, The IUCN Red List of Threatened Species এ বাসন্তী লটকনটিয়া বিষয়ক পাতা।
- Vernal Hanging-parrot, The Internet Bird Collection এ বাসন্তী লটকনটিয়া বিষয়ক পাতা।
- Vernal Hanging Parrot, World Parrot Trust এ বাসন্তী লটকনটিয়া বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে বাসন্তী লটকনটিয়া সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- বাসন্তী লটকনটিয়ার আরও আলোকচিত্র, Oriental Bird Images.
![]() |
উইকিপ্রজাতিতে-এ বিষয় সম্পর্কিত তথ্যে রয়েছে: বাসন্তী লটকনটিয়া |