বল্লাল সেন
বল্লাল সেন (১০৮৩–১১৭৯) ছিলেন বঙ্গের সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা।[1] ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেন বংশের রাজত্ব করেন। কুলজি গ্রন্থসমূহ থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের পুত্র এবং উত্তরসূরি।[2][3] বল্লাল সেন পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজকুমারী রামদেবীকে বিয়ে করেন, যা দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে সেন শাসকদের ঘনিষ্ঠ সামাজিক যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়।[4]
বল্লাল সেন | |
---|---|
বাংলার রাজা | |
লক্ষ্মণসেন | |
রাজত্ব | ১১৬০ – ১১৭৯ |
পূর্বসূরি | বিজয় সেন |
জন্ম | ১০৮৩ রামপাল |
মৃত্যু | ১১৭৯ |
রাজকন্যা | রমাদেবী |
রাজবংশ | সেন |
রাজবংশ | সেন |
পিতা | বিজয় সেন |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
তিনি বঙ্গের সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে কৌলীন্য প্রথা প্রবর্তনকারী হিসেবে পরিচিত।[3] তিনি ওষধিনাথ নামক এক দাক্ষিণাত্য ব্রাহ্মণবংশ জাত। একারনে সেন রাজাদেরকে 'দ্বিজরাজ ওষধি নাথ বংশজ' বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন একজন পণ্ডিত এবং লেখক, দানসাগর এবং অদ্ভুতসাগর তার উল্লেখযোগ্য রচনা।[3]
জীবনী
প্রাথমিক জীবন
১০৬০ সালে রামপাল নগরে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। তার পিতা বিজয়সেন গৌড়াধিপতি চন্দ্রসেনের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। শৈব বরে তার জন্ম হওয়ায় বিজয়সেন পুত্রের নাম রাখেন "বরলাল", পরবর্তীতে "বল্লাল" শব্দটি তারই অপভ্রংশ হয়ে দাঁড়ায়। চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি অস্ত্রবিদ্যায় ও শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেন।[5]
পরবর্তী জীবন
১১৬৮ সালে তিনি দানসাগর রচনা করেন এবং ১১৬৯ সালে অদ্ভুতসাগর রচনা শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা সমাপ্ত করতে পারেন নি। পিতার মতো তিনিও শিবের উপাসক ছিলেন। অন্যান্য রাজকীয় উপাধির সঙ্গে তিনি "অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজকন্যা রমাদেবীকে বিয়ে করেন। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বৃদ্ধ বয়সে বল্লাল সেন রাজ্যভার নিজ পুত্র লক্ষ্মণসেনকে অর্পণ করেন। বল্লাল সেন জীবনের শেষ দিনগুলি রামদেবীকে নিয়ে ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গাতীরবর্তী একটি স্থানে অতিবাহিত করেন।
রাজ্য জয়
বল্লাল সেনের সময়কার নৈহাটি তাম্রশাসন এবং সনোকার মূর্তিলিপি নামে দুইটি লিপি-প্রমাণ আবিষ্কৃত হলেও এগুলিতে তার বিজয় সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থানুসারে গৌড়ের রাজার সঙ্গে বল্লাল সেনের যুদ্ধ-বিগ্রহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই গৌড়রাজকে পাল বংশের রাজা গোবিন্দ পালের সঙ্গে অভিন্ন বলে শনাক্ত করা হয়।[6] গ্রন্থে এছাড়াও উল্লেখ রয়েচে, বল্লাল সেন মগধে পালদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানেন এবং পিতা বিজয় সেনের শাসনকালে মিথিলা জয় করেন। মাতামহ ও পিতার উত্তরাধিকারিসূত্রে তিনি গৌড় ও বঙ্গ দুইটি রাজ্যের অধিকার প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বরেন্দ্রভূমি, রাঢ়, বঙ্গ, বগ্দি এবং মিথিলা জয় করেন। পাল রাজবংশ এবং বৌদ্ধ রাজত্ব নিঃশেষ করে বাংলায় সনাতন ধর্ম পুনঃস্হাপন করেন। তিনি বৌদ্ধদের বহু মঠ ও সংঘকে দেবালয়ে পরিণত করেছিলেন। দ্বাদশ রাজ্যের অধিপতি হিসেবে তিনি সার্বভৌম সম্রাট উপাধি ধারণ করেন। বল্লাল সেন প্রায় ১৮ বছর রাজত্ব করেছিলেন।
কৌলীন্য প্রথা
যে কোনো জাতি বা গোষ্ঠী বা বর্ণ বা সম্ভ্রান্ত বংশ, যারা সামাজিক সম্মান ভোগ করে এবং ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের সামাজিক অবস্থান এবং ‘কুল’ রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। আকাঙ্ক্ষার পরিচয় পাওয়া যায় রামায়ণ এর (খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ থেকে ২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) সময় থেকে। কৌলীন্য প্রথার উদ্ভব পাল শাসনামলে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।[7] তবে কেউ কেউ বল্লালসেনকে কৌলিন্য প্রথার স্রষ্টা হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তবে, এর স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের অভাব রয়েছে।[7]
তথ্যসূত্র
- Chitta Ranjan Misra, Vallalasen ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে, Banglapedia: The National Encyclopedia of Bangladesh, Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka, Retrieved: 2012-02-06
- "বল্লাল সেন"। encyclopedia.thefreedictionary.com (ইংরেজি ভাষায়)। thefreedictionary। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১৫।
- অজয় গোয়েল (জুলাই ০৭, ২০১৩)। "সেন রাজবংশ"। importantindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। ভারত: ইম্পর্টেন্ট ইন্ডিয়া। ৩ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৬, ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib by Nitish K. Sengupta p.51
- পিন্টু মন্ডল (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫)। "ঘুরে আসুন বল্লাল ঢিবি"। অহল্যা। বাংলাদেশ। ৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৬, ২০১৫।
- আনন্দভট্ট (১৫১০)। বল্লালচরিত।
- কৌলীন্য প্রথা