পানি দূষণ

পানি দূষণ বা জলদূষণ বলতে পানিতে বা জলে কোন বিষাক্ত দ্রব্য অথবা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের ফলে মানব ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

মেক্সিকো থেকে নিউ রিভার দ্বারা বাহিত হয়ে শিল্প বর্জ্যের আমেরিকায় প্রবেশ

পানি দূষণ বা জলদূষণ হল জলাশয়ের দূষণ (উদ্যান, নদী, মহাসাগর, জলজ এবং ভূগর্ভস্থ জল)। পরিবেশগত অবনতি এই ফর্ম যখন দূষণকারী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকারক যৌগ পানিতে বা জলে অপসারণ হয় তখন তা পানি বা জলে মিশ্রণের ফলে মানব ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠে, আর এটাকেই বলে পানি দূষণ বা জলদূষণ

পানি দূষণ পুরো জীববৈচিত্রকে প্রভাবিত করে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জীবিত জীব ও উদ্ভিদ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই প্রভাবটি কেবলমাত্র পৃথক প্রজাতি এবং জনসংখ্যার জন্যই যে ক্ষতিগ্রস্থ তা নয়, বরং প্রাকৃতিক অন্যান্য উপাদানসমূহ ও প্রভাবিত হচ্ছে।

জল দূষণ একটি প্রধান বৈশ্বিক সমস্যার কারণ যা চলমান মূল্যায়ন এবং পানি সম্পদের নীতিমালার সমস্ত স্তরের (আন্তর্জাতিক জলাধার এবং আন্তর্জাতিক কুয়োগুলি থেকে নিচে) পর্যায়ক্রমিকতার প্রয়োজন। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে পানি দূষণ বিশ্বজুড়ে মৃত্যু এবং রোগের প্রধান কারণ। শুধুমাএ পানি দূষণের কারণেই প্রতিদিনই বিশ্বে প্রায় ১৪০০ এরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়।বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ জন মানুষ পানি দূষণ সম্পর্কিত অসুস্থতা প্রতিদিনই মারা যায়।চীন শহরের প্রায় 90 শতাংশ জল দূষিত হয়। ২007 সালের হিসাবে, আধা-বিশ্বে চীনাদের নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবহার ছিল না।বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো পানি দূষণ তীব্র সমস্যা ছাড়াও, উন্নত দেশগুলিও দূষণ সমস্যাগুলির সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পানির গুণমানের সবচেয়ে সাম্প্রতিক জাতীয় প্রতিবেদনে 44% মূল্যায়নকৃত স্ট্রিম মাইল, 64% মূল্যায়নকৃত হ্রদ একর এবং 30% মূল্যায়ন ব্যাস এবং এস্তুয়ারাইন বর্গ মাইলগুলি দূষিত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

পানি দূষকের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Water Pollutants)

পানি যার দ্বারা দূষিত হয়, তাকে দূষক বলে। প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে দুষককে দু’ভাগে ভাগ করা যায়; যথা-

(১) তরল বর্জ্য পদার্থ (যেমন- মূত্র, বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক, এসিড, পারদ ইত্যাদি) ও

(২) কঠিন বর্জ্য পদার্থ্ (যেমন- বিভিন্ন প্রকার লবণ, ধাতব পদার্থ, বিভিন্ন প্রকার সার ইত্যাদি)।

আবার, পচন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে দূষককে দুভাগে ভাগ করা যায়; যথা-

(১) পচনশীল বর্জ্য (যেগুলো বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পরিবেশে ফিরে যেতে পারে, যেমন- উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত দেহ, প্রাণীর মলমূত্র ইত্যাদি) এবং

(২) অপনশীল বর্জ্য (যেগুলো বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পরিবেশে ফিরে যেতে পারে না, যেমন- ডিডিটি)।

এছাড়া দুষকের উৎসের উপর ভিত্তি করে দুষককে দু’ভাগে ভাগ করা যায়; যথা-

(১) প্রাকৃতিক দুষক ও

(২) মনুষ্যসৃষ্ট দূষক।

দুষকের উৎস, স্বভাব, প্রকৃতিতে এদের প্রভাব ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পানি দূষককে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায় :

ক্রমিক পানি দূষকের শ্রেণী উদাহরণ
পরিপোষক জৈব : মানুষ ও প্রাণীর বর্জ্য, লিটার, তলানি।

অজৈব : নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ডিটারজেন্ট।

রোগজীবাণু রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া, প্যারাসাইট ইত্যাদি।
বিষাক্ত জৈব দূষক কীটপতঙ্গনাশক, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক, হাইড্রোকার্বন, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি।
বিষাক্ত অজৈব দূষক ধাতব লবণ, পারদ, সীসা, তামা, ক্যাডিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, নাইট্রেট, নাইট্রাইট ইত্যাদি।
তলানি বা গাদ
তাপ

পানিবাহিত রোগ

দূষিত জল পান করার মাধ্যমে অথবা সেই জল রান্না বা অন্যান্য কার্যে ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাধি সংক্রামিত হয়ে থাকে। এই ধরনের অসুখ সাধারণত জলে বিচরণশীল রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুদের দ্বারা সংঘটিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে প্রত্যেক বছর পৃথিবীতে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হল জলবাহিত রোগ। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই রোগ সংক্রমণের মূল কারণ হল উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অপরিশুদ্ধ জল সরবরাহ এবং পরিচ্ছনতার অভাব। এর ফলে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্যণীয়। কেবল তাই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল উন্নয়নশীল দেশের গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রভূত অভাব পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত উক্ত অঞ্চলসমূহের মানুষ বিভিন্ন জলাশয়ের জল পান করে থাকে এবং রন্ধনকার্যেও তা ব্যবহার করে। আবার স্নান, কাপড় কাচা এবং গবাদি পশুর স্নানাদিও সেই একই জলাশয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলত জলাশয়ের জল দূষিত হয় এবং সেই জল মানবশরীরে প্রবেশ করার ফলে বিবিধ প্রকার জলবাহিত রোগও দূষিত জলের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রামিত হয়। এইভাবে এইসমস্ত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে আন্ত্রিক, ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।বাংলাদেশে পানিবাহিত যে সকল রোগ লক্ষ্যনীয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

  • ডায়রিয়া,
  • আমাশয়,
  • পোলিও,
  • হিপাটাইটিস এ ও ই,
  • টাইপয়েড,
  • প্যারাটাইপয়েড ইত্যাদি

তথ্যসূত্র

classification of water pollution

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.