নীলাঞ্জির

নীলাঞ্জির (বৈজ্ঞানিক নাম: Papilio protenor) এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি । এদের নীচের ডানার পিছনের দিকে লেজের মত প্রক্ষিপ্ত অংশ থাকে, যার জন্য এদের সোয়ালোটেল (sowallotail) বলা হয়। এরা ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের সদস্য। এরা সহজলভ্য এবং বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে কোন তফসিল ভুক্ত নয়। [1]

নীলাঞ্জির
Spangle
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Papilionidae
গণ: Papilio
প্রজাতি: P. protenor
দ্বিপদী নাম
Papilio protenor
Cramer, 1775

আকার

প্রসারিত অবস্থায় নীলাঞ্জির এর ডানার আকার ১১০-১৪০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[2]

উপপ্রজাতি

ভারতে প্রাপ্ত নীলাঞ্জিরের উপপ্রজাতিসমূহ এর-[3]

  • Papilio protenor protenor Cramer, 1775 – Kumaon Spangle
  • Papilio protenor euprotenor Fruhstorfer, 1908 – Himalayan Spangle

বর্ণনা

পুরুষ

ডানার উপরের দিক মখমল সদৃশ নীলচে কালো রঙের হয়ে থাকে এবং উপরের ডানার তুলনায় নিচের ডানা অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়। উপরের ডানার ফ্যাকাসে দাগ ডানার প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে মধ্যখান অব্ধি প্রকৃষ্টভাবে বিস্তৃত থাকে। নীচের ডানায় একটি চওড়া ফ্যাকাশে হলদেটে সাদা দাগ থাকে এবং মাঝের দিকে নীল রঙের ছোট ছোট দাগ দিয়ে এই অঞ্চলটি চিহ্নিত করা থাকে। ডানার ভূমিকোণে লাল দাগ থাকে।

নীচের দিকে ডানার উপরের অংশ ঘন কালো রঙের হয়। ডানার প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে মধ্যখান অব্ধি প্রকৃষ্টভাবে বিস্তৃত ধূসর রঙের দাগগুলি উপরের অপেক্ষায় অনেক বেশি চওড়া হয়ে থাকে। পেছনের ডানার ঊর্ধ্বাংশ মেটে রঙের হয়, এবং এখানে একটি বড় অসমাঙ্গ আকৃতির পটি থাকে, যা ভুমিকোণ থেকে শুরু করে দু নম্বর শিরামধ্য অব্ধি বিস্তৃত। উপপার্শ্বপ্রান্তের অর্ধচন্দ্রাকৃতি দাগ গুলির রঙ অনুজ্বল গোলাপী লাল এবং এরা ২, ৬ এবং ৭ নম্বর শিরামধ্যে অবস্থান করে। খোপগুলিতে নীল রঙের ছিট ছিট দাগ থাকে। ভুমিকোণ বরাবর কালো রঙের একটি দাগ থাকে, যার বাইরের দিকটা নীলাভ। এখানে ৪ ও ৫ নম্বর শিরামধ্যে বৃত্তাকার ও নীল রঙের ছিট ছিট দাগ থাকে।

এদের অ্যান্টেনার রং কালো এবং মাথা, বক্ষ ও পেট গাঢ় বাদামী কালোরঙের হয়।[4]

বিস্তার

এই প্রজাপতিটি উত্তর পাকিস্তান, জম্মু ও কাশ্মীর, গাড়োয়াল হিমালয় (গোবিন্দ অভয়ারণ্য), সিকিম, আসাম, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়াও বার্মা, হাইনান সহ দক্ষিণ চীন, উত্তর ভিয়েতনাম, উত্তর লাওস, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এদের প্রাপ্তিস্থান।[5]

আচরণ

সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৮৫০০ফুট উচ্চতায় এদের উড়তে দেখা যায়। পুরুষ নীলাঞ্জির একত্রিত হয়ে ভিজে মাটিতে জলপান করে। এরা পাহাড়ি জঙ্গলের উন্মুক্ত প্রান্তরে এবং বাগান থেকে ফুলের মধু সংগ্রহ করতেও দেখা যায়। আবার অনেক সময় অলস ভাবে পাতার উপর বসে থাকে। তবে বিরক্ত হলে দ্রুত এবং শক্তিশালী উড়ান দেয়।[6]

জীবনচক্র

শুককীট

এদের শুককীট সাধারণত সবুজ রঙের হয় যেখানে হলুদ কলারের মত দাগ থাকে।এখানে বাদামী ছত্রাক বা শ্যাওলা জাতীয় উদ্ভিদের রঙের মত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। সাইট্রাস বা লেবু-কমলা জাতীয় ফল জাতীয় উদ্ভিদ থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে।

মূককীট

কিছু মূককীটের রং রুক্ষ গাছের ছালের মত হয়, অন্যদের রং প্রধানত সবুজ হয়ে থাকে।[4]

সাংস্কৃতিক উল্লেখ

১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে উত্তর কোরিয়ায় প্রকাশিত ডাকটিকিট নীলাঞ্জির গোত্রের প্রজাপতির প্রতিকৃতি আছে।

তথ্যসূত্র

  1. Collins, N.M. & Morris, M.G. (1985) Threatened Swallowtail Butterflies of the World. IUCN. আইএসবিএন ২-৮৮০৩২-৬০৩-৬
  2. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ২৩।
  3. "Papilio protenor Cramer, 1775 – Spangle"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭
  4. Bingham, C.T. (১৯০৫)। The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma Butterflies1 (1st সংস্করণ)। London: Taylor & Francis।
  5. Pratap Singh, Arun (২০১১)। Butterflies of India (1st সংস্করণ)। Utter Pradesh: Om Books International। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-93-80069-60-9।
  6. Wynter-Blyth, M.A. (১৯৫৭)। Butterflies of the Indian region (First Edition সংস্করণ)। Bombay: The Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 386।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.