নিরামিষ ভোজনের ইতিহাস

নিরামিষভোজন মতবাদ এর মূল খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন ভারত এবং প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায়। নিরামিষভোজন হচ্ছে স্বেচ্ছায় কোন প্রাণীর মাংস (সামুদ্রিক প্রাণীসহ) না খাওয়ার তত্ত্ব এবং অনুশীলন, তবে প্রাণীজাত দ্রব্য যেমন দুধ ডিম খাওয়া-না খাওয়ার স্বাধীনতা আছে।[1] নিরামিষভোজনের ধারণা ও অনুশীলনের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতে[2] এবং প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার দক্ষিণ ইতালী ও গ্রীসে[3] উভয়ক্ষেত্রে খাদ্রগ্রহণ ধারণা প্রাণীর প্রতি অসহিংসতা মতবাদের সংগে সম্পর্কিত, ভারতে অহিংসা নামে [4]। এই তত্ত্ব ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং দার্শনিদের দ্বারা প্রচারিত হত। ৪র্থ-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাবে নিরামিষভোজন প্রায় হারিয়ে যায়[5]। মধ্যযুগীয় ইউরোপের কিছু সাধু মাংস না খাওয়ার আদেশ দেন কিন্তু মাছ খাওয়ায় কোন বাঁধা ছিলো না[6]। এসকল সাধুরা নিরামিষভোজী ছিলেন না। রেনেসাঁসকালীন সময়ে ইউরোপে নিরামিষভোজনবাদ ফিরে আসে[7] এবং ১৯-২০ শতকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রাচীন ভারত

হিন্দুধর্মে

প্রাচীন বৈদিক যুগে তাদের আইনানুসারে কিছু প্রাণীর মাংস ভোজনের অনুমতি ছিলো, তবে নিরামিষভোজনে উৎসাহ দেওয়া হতো[8]। আইনশাস্ত্র মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, “মাংস খাওয়ায় কোন পাপ নেই…. কিন্তু বিরত থাকা নিয়ে আসবে বড় পুরষ্কার”।[9]

৫ম শতকের প্রারম্ভে বিখ্যাত চীনা পর্যটক ফাহিয়েন ভারতের মগধ রাজ্য ভ্রমণকালে দেখতে পান সেখানকার জনগণ প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকে। তারা শুকর বা হাঁস-মুরগি পালে না এবং কোন প্রাণী বিক্রি করে না।[10]

নিরামিষভোজন সকল প্রকার যোগীদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো (এবং আছে)। একজন ভক্ত বিষ্ণু অথবা কৃষ্ণের কাছে খাওয়ার পূর্বে তার সকল খাবার প্রসাদ হিসেবে নিবেদন [11] এবং শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার প্রসাদী হিসেবে গণ্য হবে।[12]

প্রাক বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম

জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মে ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রথম থেকেই প্রানীর প্রতি অসহিষ্ণুতা নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। জৈন ধর্ম, সম্ভবত অনেক পুরাতন, এই ব্যাপারে কঠোর ছিলো। সর্বপ্রাচীন তীর্থংকর পর্ষভ ৮ম-৭ম খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিলেন। তিনি অহিংসার কথা বলেন। ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মহাবীরের সময়ে জৈন সম্প্রদায় এটা পালন করতো। ৪র্থ থেকে ১ম খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় দার্শনিক ভাল্লুবার, যাকে আধুনিক গবেষক গণ জৈন ধর্মানুসারী মনে করেন, তার লেখা তিরুক্কুরালে নিরামিষভোজনের উপর চমৎকার অধ্যায় লিখেছেন যার মধ্যে আছে অপ্রাণী খাবার (অধ্যায় ২৬), ক্ষতি না করা (অধ্যায় ৩২) এবং হত্যা না করা (অধ্যায় ৩৩) ইত্যাদি।

তবে সবাই প্রাণীহত্যার বিপক্ষে বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকার পক্ষে ছিলো না। মাংস ভোজন নিয়ে সেখানে দুটি মত আছে। একদলের মতে বুদ্ধ এবং তার অনুগামী গণ মাংস ভোজন করতেন যদিনা আয়োজক বা ভিক্ষাদাতাগণ তাদের জন্যে বিশেষভাবে প্রাণীটি হত্যা করে না থাকে। অন্যদলের মতে বুদ্ধ এবং তার সংঘ কঠিনভাবে নিরামিষভোজী ছিলেন এবং মাংস গ্রহণের রীতি পরে চালু হয়েছে ।

গ্রীস এবং ইউরোপ

পীথাগোরাস (৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ -৪৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) একজন নিরামিষভোজী ছিলেন। তিনি পীথাগোরীয় নিরামিষভোজনবাদের অনুপ্রেরণা ছিলেন।

ইহুদিধর্ম

অল্প কিছু ইহুদি পণ্ডিত ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দাবী করেন তাওরাতে নিরামিষভোজনের পক্ষে বক্তব্য আছে।

গ্রীস

গ্রীসে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসকে বলা হতো আত্মাযুক্ত বস্তু থেকে বিরত থাকা। বিভিন্ন দার্শনিকের শিষ্য অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ছোট ছোট দল এটা পালন করতো। প্রাক ইউরোপীয় /এশিয়া মাইনরের নিরামিষবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় হোমারের ওডেসিতে এবং হেরোডটাসের বর্ণনায়। হেরোডটাস লটোফোগিদের (পদ্ম-খাগী) উল্লেখ করেছেন যারা উত্তর আফ্রিকা উপকূলের আদিবাসী। হেরোডটাসের বর্ণনানুসারে তারা শুধু মাত্র পদ্মের ফল খেয়ে বেঁচে থাকতো। দিদোরাস সিকুলাস ইথিওপিয় নিরামিষভোজী গোত্রের উল্লেখ করেছেন। গ্রীসে নিরামিষভোজন তত্ত্ব এবং অনুশীলনের নির্ভরযোগ্য প্রাক উদাহরন পাওয়া যায় ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।

তথ্যসূত্র

  1. Definition from vegsoc.org "A vegetarian is someone living on a diet of grains, pulses, nuts, seeds, vegetables and fruits with or without the use of dairy products and eggs. A vegetarian does not eat any meat, poultry, game, fish, shellfish or crustacea, or slaughter by-products."
  2. Spencer, Colin: The Heretic's Feast. A History of Vegetarianism, London 1993
  3. Spencer p. 33-68.
  4. Religious Vegetarianism From Hesiod to the Dalai Lama, ed. Kerry S. Walters and Lisa Portmess, Albany 2001, p. 13-46.
  5. Passmore, John: The Treatment of Animals, in: Journal of the History of Ideas 36 (1975) p. 196-201.
  6. Lutterbach, Hubertus: Der Fleischverzicht im Christentum, in: Saeculum 50/II (1999) p. 202.
  7. Spencer p. 180-200.
  8. Bhaskarananda, Swami (২০০২)। The Essentials of Hinduism। Seattle: The Vedanta Society of Western Washington। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 1884852041।
  9. Bühler, G. (১৮৮৬)। The Laws of Manu। The Oxford University Press।
  10. Waley p. 348.
  11. Bhagavad Gita 3.13 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে.
  12. Mahabharata 12.257 (or 12.265 according to another count); Bhagavad Gita 9.26; Bhagavata Purana 7.15.7.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.