নিখুঁত সংখ্যা

সংখ্যাতত্ত্বে নিখুঁত সংখ্যা (ইংরেজি: Perfect number) হল সেই সব পূর্ণ সংখ্যা, যাদের প্রকৃত ধনাত্বক গুণনীয়ক গুলো যোগ করলে সেই সংখ্যাটিই পাওয়া যায়, অর্থাৎ ঐ সংখ্যাটি বাদে সংখ্যাটির অন্যান্য ধনাত্বক উৎপাদকগুলো যোগ করলে যোগফল সংখ্যাটির সমান হয়। অন্যভাবে বলা যায়, নিঁখুত সংখ্যা হল এর সকল ধনাত্বক বিভাজকসমূহের যোগফলের অর্ধেক (ঐ সংখ্যাটি সহ), অথবা σ(n) = 2n

সজ্ঞাটি অনেক পুরোনো, যেটা দেখা গিয়েছিল ইউক্লিডের উপাদান এ যেখানে একে বলা হয় τέλειος αριθμός (নিখুঁত, আদর্শ অথবা সম্পুর্ণ সংখ্যা)। ইউক্লিড একটি গাঠনিক নিয়মও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যেখানে P(P+1)/2 হল একটি জোড় নিখুঁত সংখ্যা, এখানে P হল একটি মের্সেন মৌলিক সংখ্যা। অনেক পরে অয়লার প্রমাণ করেন সকল জোড় নিখুঁত সংখ্যাই এই গঠনের। এটা এখনও জানা যায়নি যে আদৌ কোন বেজোড় নিখুঁত সংখ্যা আছে কিনা।

উদাহরণ

প্রথম নিখুঁত সংখ্যাটি হচ্ছে ৬ কেননা ১,২,৩ হচ্ছে এটার প্রকৃত ধনাত্বক গুননীয়ক এবং ১+২+৩ = ৬। একইভাবে ৬ হচ্ছে এর সকল ধনাত্বক গুননীয়কগুলোর যোগফলের অর্ধেক (১+২+৩+৬)/২ = ৬। পরবর্তী নিখুঁত সংখ্যা হচ্ছে ২৮ = ১+২+৪+৭+১৪। তারপরে আছে ৪৯৬ এবং ৮,১২৮।

আবিষ্কার

প্রাচীন গ্রিক গণীতবিদরা কেবল প্রথম ৪টি নিখুঁত সংখ্যার কথাই জানতেন এবং গণিতবিদ নিকমাকুস ৮,১২৮ নিবন্ধন করেছিলেন ১০০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। একজন নাম না জানা গণিতবিদ এক নথিতে সবচেয়ে আগে পঞ্চম নিখুঁত সংখ্যা ৩,৩৫,৫০,৩৩৬ উল্যেখ করেন যেটা লেখা হয়েছিল ১৪৫৬ থেকে ১৪৬১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে, এবং সেখানেই প্রথম পঞ্চম নিখুঁত সংখ্যাটি সঠিকভাবে পাওয়া যায়। ১৫৮৮ সালে একজন ইতালীয় গণিতবিদ পেত্র কাতালদি ষষ্ঠ (৮৫৮, ৯৮,৬৯,০৫৬) এবং সপ্তম (১৩,৭৪৩,৮৬,৯১,৩২৮) নিখুঁত সংখ্যা আবিষ্কার করেন।

জোড় নিখুঁত সংখ্যা

ইউক্লিড প্রমাণ করেন p-১(২p-১) একটি জোড় নিখুঁত সংখ্যা যেখানে p-১ একটি মৌলিক সংখ্যা (Euclid, Prop. IX.36)।

উদাহরণ সরূপ, p-১(২p-১), যেখানে p একটি মৌলিক সংখ্যা, সূত্র দ্বারা উৎপন্ন প্রথম চারটি নিখুঁত সংখ্যা হল:

p = ২ এর জন্য -১(২-১) = ৬
p = ৩ এর জন্য -১(২-১) = ২৮
p = ৫ এর জন্য -১(২-১) = ৪৯৬
p = ৭ এর জন্য -১(২-১) = ৮১২৮

p-১ এই গঠনের মৌলিক সংখ্যাগুলোকে বলা হয় মার্সেন মৌলিক সংখ্যা। এদের নাম রাখা হয় সপ্তদশ শতকের একজন সন্ন্যাসী মারাঁ মের্সেন এর নাম অনুসারে, যিনি সংখ্যাতত্ত্ব এবং নিখুঁত সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। p-১ মৌলিক সংখ্যা হতে হলে অবশ্যই p মৌলিক সংখ্যা হতে হবে। তবে, p মৌলিক হলেও p-১ গঠনের সব সংখ্যা মৌলিক নয়। যেমন ১১-১ = ২০৪৭ = ২৩ × ৮৯, যা মৌলিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মের্সেন মৌলিক সংখ্যা খুবই দুর্লভ। ১ থেকে ২৫,৯৬৪,৯৫১ এর মধ্যে ১,৬২২,৪৪১ গুলো মৌলিক সংখ্যার জন্য, অর্থাৎ p এর মানের জন্য মাত্র ৪২ টি p-১ গঠনের মৌলিক সংখ্যা।

ইউক্লিডের পর প্রায় হাজার বছর পর, ১০০০ খ্রিষ্টাব্দে আল - হেজেন (ইংরেজি: Ibn al-Haytham) অনুমান করেন জোড় মৌলিক সংখ্যাগুলো p-১(২p-১) গঠনের, যেখানে p-১ মৌলিক সংখ্যা। কিন্তু তিনি সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হননি। ১৮ শতকে এসে লিওনার্ট অয়লার প্রমাণ করেন p-১(২p-১) সূত্রটি সব জোড় নিখুঁত সংখ্যা দেবে।

তথ্যসূত্র

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.