দাওয়াত

দাওয়াত (দা'ওয়াহ নামেও পরিচিত ; আরবি : دعوة‎ "আমন্ত্রণ") অর্থ ধর্মপ্রচার বা ইসলামের প্রচার । দাওয়াত এর আক্ষরিক অর্থ হল " একটা সমন জারি করা " বা "একটি আমন্ত্রণের কাজ করা ", একটা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হওয়ার কারনে বিভিন্ন অর্থ বোঝায় "ডাকা" বা আহ্বান করা , (যার ক্রিয়ামূল হচ্ছে d-ʕ-w دعو) । একজন মুসলিম যিঁনি দাওয়াতের কাজ করেন, একজন ধর্মীয় কর্মী হিসাবে বা স্বেচ্ছাসেবী সাম্প্রদায়ীক প্রচেষ্টা হিসাবে , যেভাবেই হোক তাঁকে বলা হয় একজন দাঈ , dā‘ī (داعي,বহুবচন দু'য়া , du‘āh/du‘āt ) ।

একজন দাঈ হচ্ছেন একজন মুসলমান ধর্মপ্রচারক যিঁনি ইসলামকে বোঝার জন্য আমন্ত্রণ জানান সংলাপের মাধ্যমে আহ্বান করছেন ইসলামিক জীবনের দৃঢ় বিশ্বাস (ঈমান), প্রার্থনা এবং সৌজন্যের (আদব-কায়দা) প্রতি ।[1]

.

ইসলামের প্রাথমিক যুগে

কুরআনে দাওয়াত শব্দটির অন্য ভাবার্থও রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ  সূরা ( আর রুম , ৩০ : ২৫  এ ) , এটা বোঝায় কেয়ামতের দিন মৃতদেরকে পুনরুত্থানের জন্য আল্লাহর ডাক (আদেশ) । কুরআনে এটা সাধারনত  নিদেশ করে জীবিতদের প্রতি আল্লাহর আহ্বানকে , তাঁর ইচ্ছানুসারে ।একইভাবে , ইসলামের প্রথম শতকগুলোতে  যখন   ব্যবহৃত হত , এটা প্রায়শই  নির্দেশ করত ঐ আহ্বানকে , এবং কখনো কখনো  শরিয়া এবং দ্বীন এর সাথে বিনিময় করে ব্যবহৃত হত । 

দাওয়াত কর্তব্য হিসাবেও বনিত হয়েছে তাদের প্রতি , " সক্রিয়ভাবে প্রণোদিত মুসলমান সাথীরা জীবনের সবোক্ষেত্রে আরও অধিক ধর্মনিষ্ঠা লাভের চেষ্টায় (পাওয়ার লক্ষে ) " , এই সংজ্ঞাটি , যেটা সমকালীন ইসলামী দর্শনের (প্রাথমিক যুগেের) কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছিল ।[2]

মহানবী (সা :) এঁর যুগে

৬২৫ ঈসায়ীতে আল রাযী অভিযানের সময় ,[3] নবী মুহাম্মদ (সা :) অনেকগুলো আলাদা গোত্রে কিছু সাহাবা পাঠান , ধর্মপ্রচারক হিসাবে । কিছু ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা :)  এঁর কাছে এসে এই অনুরোধ করেন যে ,  নবী (সা :) যেন ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষকদের পাঠান ,[3] কিন্তু তারা ঘুষ পেয়েছিল খুজাইমাহ্ এর দুই গোত্রের মাধ্যমে ।  যে আসলে বদলা নিতে চাচ্ছিল খালিদ বিন সুফিয়ানের হত্যার (বনু লাহিয়ান গোত্রের সদার ) , যাকে নবী (সা :) সাহাবারা কতল করেছিল [4]। এই  অভিযানে ৮ জন মুসলমান ধর্মপ্রচারক (দাঈ) কে শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল ,[3] আরেক বননায় এসেছে ১০ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল ।[5]

তারপর জুলাই ৬২৫ ঈসায়ীতে বীর মোনা অভিযানের সময় ,[6] নবী  (সা :)  বনু আমির গোত্রের কিছু ব্যক্তির অনুরোধ পেয়ে কয়েকজন ধর্মপ্রচারককে  পাঠান ,[7] কিন্তু একই ঘটনার জের ধরে তাঁদেরকও হত্যা করা হয় ।[4] এই অভিযানে ৭০ জন মুসলমান ধর্মপ্রচারক (দাঈ) কে শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল ।[7]

তারপর জানুয়ারী  ৬৩০ ঈসায়ীতে খালিদ বিন ওয়ালিদ (বনু  জাদীমাহ্ )  এঁর অভিযানের সময় ,[8] নবী (সা :)  বনু জাদীমাহ্ গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদকে  পাঠান । [9] এটা উল্লেখ করা হয়েছে সহীহ বুখারীর (৫:৫৯:৬২৮ ), হাদীসে । [10]

সেপ্টেম্বর ৬২১ এ , মাছআব্ ইবনে উমায়ের ( রা : ) ছিলেন প্রথম সাহাবী দূত [11][12] তাকে ইয়াত্রিব (বর্তমান মদিনা) এ পাঠানো হয়েছিল মদিনাবাসীকে  ইসলামের দিকে ডাকা   ইসলামের  শিক্ষা দেওয়া  এবং  হিজরতের জন্য প্রস্তুত  ( তাবলীগ ) করার জন্য ।[12]

দাওয়াতের উদ্দেশ্য

ইসলামী ধর্মতত্ত্বে (আকিদা ) , দাওয়াতের উদ্দেশ্য হল আহ্বান করা , মুসলমান ও অমুসলমান উভয়কেই । নবী (সা :)  এঁর  কুরআন এবং হাদীসে যেভাবে বণিত হয়েছে  সেভাবেই যেন আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য ) কে করা বুঝতে পারা যায় এবং  নবী (সা :) এঁর সম্পকে তাদেরকে শুনানো ।[13] দাওয়াত বা " আল্লাহর দিকে ডাকা " এর অথ বোঝায় যা মুহাম্মদ (সা :) মানবজাতীর নিকট কুরআনের বাণী প্রচার শুরু করেছিলেন এই ব্যাপারটিকে । নবী (সা :) এঁর পর , তাঁর অনুসারীগণ এবং উম্মাহ (মুসলিম সম্প্রদায়) এর গুরুদায়িত্ব অনুভব করেন । কেন এবং কিভাবে কুরআন একত্ববাদের প্রচারক , এর উপর তথ্য প্রদান করে তারা কুুরআনের বানী প্রচার করে ।[14]

দাওয়াত এর গুরুত্ব

দাওয়াত এর গুরুত্ব সমন্ধে কুরআনে বহুবার জোর দেওয়া হয়েছে  :

যখন  নবী (সা :) মু‘য়ায ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, " তুমি আহলে কিতাবদের একটি কাওমের কাছে যাচ্ছ। অতএব, তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহবান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নেয়। তারা তা জেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ্ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা সালাত আদায় করবে, তখন তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন-সম্পদে আল্লাহ্ তাদের প্রতি যাকাত ফরজ করেছেন। তা তাদেরই ধনশালীদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আবার তাদের ফকীরদেরকে তা দেয়া হবে। যখন তারা স্বীকার করে নেবে, তখন তাদের থেকে গ্রহণ কর। তবে লোকজনের ধন-সম্পদের উত্তম অংশ গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাক। "[15]

পাদটীকা

  1. "Oxford Islamic Studies Online"। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-১৯
  2. See entry for da‘wah in the Encyclopaedia of Islam.
  3. Mubarakpuri, The Sealed Nectar, p. 187. (online)
  4. Watt, W. Montgomery (১৯৫৬)। Muhammad at Medina। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-0195773071। The common version, however, is that B. Lihyan wanted to avenge the assassination of their chief at Muhammad's instigation, and bribed two clans of the tribe of Khuzaymah to say they wanted to become Muslims and ask Muhammad to send instructors. (online)
  5. Hawarey, Dr. Mosab (২০১০)। The Journey of Prophecy; Days of Peace and War (Arabic)। Islamic Book Trust। আইএসবিএন 9789957051648।Note: Book contains a list of battles of Muhammad in Arabic, English translation available here
  6. Tabari, Al (২০০৮), The foundation of the community, State University of New York Press, পৃষ্ঠা 151, আইএসবিএন 978-0887063442, Then in Safar (which began July 13, 625), four months after Uhud, he sent out the men of Bi'r Ma'unah
  7. Mubarakpuri, The Sealed Nectar, p. 188. (online)
  8. Abu Khalil, Shawqi (১ মার্চ ২০০৪)। Atlas of the Prophet's biography: places, nations, landmarks। Dar-us-Salam। পৃষ্ঠা 226। আইএসবিএন 978-9960897714।
  9. William Muir, The life of Mahomet and history of Islam to the era of the Hegira, Volume 4, p. 135.
  10. Muhsin Khan, The translation of the meanings of Ṣahih AL-Bukhari, Arabic-English, Volume 5, p. 440.
  11. UNESCO (২০১২)। Different Aspects of Islamic Culture: Vol.3: The Spread of Islam Throughout the World Volume 3 of Different aspects of Islamic culture। UNESCO, 2012। পৃষ্ঠা 51-। আইএসবিএন 9789231041532। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২
  12. Safi ur Rahman Al Mubarakpuri (২০০২)। Ar-Raheeq Al-Makhtūm। Darussalam, 2002। পৃষ্ঠা 187,338-। আইএসবিএন 9789960899558। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১২ Note: Author says it happened before the Second pledge at al-Aqabah which happened in 622. Therefore this event happened in 621
  13. "Da‘wah produces converts to Islam, which in turn [increases] the size of the Muslim Ummah [community of Muslims]."
  14. See, for example, Qur'an ayat (verses) 6:19 and 16:36.
  15. সহীহ বুখারী , খন্ড ৯, পৃষ্ঠা , ৩৪৮–৯; #৭৩৭১ এবং সহীহ মুসলিম , খন্ড ১, পৃষ্ঠা 15, #২৮ .

তথ্যসূত্র

  • এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম, লেইডেন, নেদারল্যান্ডস: ব্রিল, OCLC 399624
  • হাসশ্চকিন্ড, চার্লস (২০০৪) । "সিভিক ভাচু এন্ড রিলিজিয়াস রিজন : এন ইসলামিক কাউন্টার-পাবলিক" ইন ড্রবণিক, জিম ওরাল সংস্কৃতি. আইএসবিএন ০-৯২০৩৯৭-৮০-৮.
  • দ্যা মাল্টিপল নেচার অব ইসলামিক দা'ওয়া, ইগডুনাস রাসিয়াস , অ্যাকাডেমিক গবেষনা, অক্টোবর ২০০৪ । হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়, কলা অনুষদ, ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান এন্ড আফ্রিকান স্টাডিস ।
  • আব্দুল বাদিই শাকির , "হাউ টু কল পিপল টু ইসলাম " , অনুবাদ, শাকিল আহমেদ । রিয়াদ : ডব্লিউ এ এম ওয়াই

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.