থিওডর মম্‌সেন

থিওডর মম্‌সেন (১৮১৭ - ১৯০৩) একজন জার্মান সাহিত্যিক। তিনি ১৯০২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[1]

ক্রিস্তিয়ান ম্যাথিয়াস থিওডর মম্‌সেন
জন্মনভেম্বর ৩০, ১৮১৭
Garding, Schleswig
মৃত্যুনভেম্বর ১, ১৯০৩ (age ৮৫)
পেশাধ্রুপদী স্কলার, আইনজ্ঞ এবং ঐতিহাসিক
জাতীয়তাজার্মান

জীবনী

মমসেন ১৮১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে ডেনমার্কের গার্ডিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শহরটি বর্তমানে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভুক্ত। তার কৈশোর ও ছাত্রজীবন কাটে হলস্টেইন শহরে। তার মা-বাবা দুজনই পণ্ডিত ছিলেন। তার জীবনের মূল শিক্ষা লাভ করেন তার বাবা জেমস মম্‌সেনের কাছ থেকে। গ্রিক, জার্মান, ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষা তিনি তার বাবার কাছ থেকেই শিখেছিলেন। তার বাবা সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। বাল্যকালেই তাই মমসেন সাহিত্যের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায়ই তিনি শেক্সপিয়ার, ভিক্টর হুগো, লর্ড বায়রন প্রমুখের সাহিত্যকর্ম পড়ে শেষ করে ফেলেন। এমনকি এ বয়সে এইসব বিখ্যাত সাহিত্যিকদের বেশ কিছু লেখা জার্মান ভাষায় অনুবাদও করে ফেলেন। এভাবে পিতার সাহচর্যে জার্মান সাহিত্য ও দর্শনের জগতে প্রবেশ করেন একেবারে অল্প বয়সেই।

১৮৩৮ সালে থিওডর মম্‌সেন ডেনিস বিশ্ববিদ্যালয় কিইল-এ ভর্তি হন। আগে ইতিহাসে পড়লেও এখানে এসে ইতিহাসে তেমন আগ্রহ পাননি। পড়াশোনা শুরু করেন আইন বিষয়ে। পড়াশোনায় বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা শুরু করেন। এখানে পরবর্তীতে তিনি রোমান আইন সম্পর্কে বিশেষ গবেষণা করেছিলেন। এই গবেষণা করার সময় তিনি বুঝতে পারেন যে, রোমান আইনের ক্রমবিবর্তনের চিত্র প্রাচীন শিলালিপিতে পাওয়া যাওয়ার কথা। এই আগ্রহের বশেই একসময় প্রাচীন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এসময় তার মনে এপিগ্রাফবিদ হওয়ার সাধ জেগেছিল, ঐতিহাসিক হওয়ার তেমন কোন ইচ্ছা ছিলনা। কিন্তু রোমান আইনের মূল অনিসন্ধান করতে যেয়ে ঐতিহাসিকে পরিণত হন। এ হিসেবে তিনি আইনের অধ্যাপক হয়েও রোমের সমৃদ্ধ ইতিহাস রচনা করেন। এই ইতিহাস রচনার জন্য তিনি ইতালিতে গিয়েছিলেন। মূলত আইন পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সরকারী বৃত্তি দিয়ে তিন বছরের ইতালিতে পাঠিয়েছিল। সেখানে যেয়ে প্রাচীন রোমান শিলালিপি ও মুদ্রা সংশ্লিষ্ট প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে রচনা করেন করপাস ইন্‌সক্রিপশান্স লাতিনেরাম নামক ১৬ খণ্ডের একটি বই। এই বইয়ের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৩৩ সালে। আর ১৬তম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে। এ হিসেবে ১৮৬৩ সালেই বইটির প্রকাশনা শেষ হয়েছিল।

১৮৪৮ সালে মমসেন জার্মানির লাইপেজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মনোনীত হন। এরপর ১৮৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে চলে যান। জুরিখে থাকার সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে রোমের ইতিহাস লিখবেন। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তার অবিরাম অধ্যবসায় শুরু হয়। অবিরাম লিখতে থাকেন পাতার পর পাতা। এসময় তিনি রাতে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমাতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,

এই অবর্ণনীয় পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নতুন ইতিহাস গ্রন্থ হিস্ট্রি অফ রোম রচনা করেন। ১৮৫৪ সালে এই বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইটি পড়ে সমগ্র ইউরোপের সৃজনশীল লোকজন অভিভূত হয়ে পড়ে। মম্‌সেনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশে। তার এই বিয়ের প্রথম তিনটি খণ্ডের বিষয়বস্তু ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দ থেকে শুরু করে দিগ্বিজয়ী বীর জুলিয়াস সিজার কর্তৃক উত্তর আফ্রিকার সেনেট সৈন্যদের পরাজয় পর্যন্ত সমগ্র রোমের ইতিহাস বৃত্তান্ত। ১৮৫৪ সালে তিনি আবার জার্মানিতে ফিরে আসেন এবং প্রুশিয়ার ব্রাস্‌ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। এ সময়ই তিনি সেখানকার এক পুস্তক ব্যবসায়ীর কন্যা মেরী রেইমারকে বিয়ে করেন।

মম্‌সেন ১৮৫৮ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোমান ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপকের পদে যোগ দেন। কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন।তিনি জার্মানির প্রগতিশীল দলের সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৬৩ - ১৮৬৬ এবং ১৮৭৩ - ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত প্রুশিয়ার সংসদের সদস্য পদে বহাল ছিলেন। ১৮৭০ সালে সেডানে প্রুশিয়া ও ফ্রান্সের যুদ্ধে ফ্রান্স পরাজিত হয়। ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে সম্পাদিত এক অপমানজনক চুক্তিতে ফ্রান্স স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এতে জার্মানির প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঐক্যের নির্মাতা ছিলেন অটো ফন বিসমার্ক। এই ঐক্যের পর মম্‌সেন জার্মান ইম্পেরিয়াল পার্লামান্টের (রাইখস্ট্যাগ) সদস্য হন। তখন তিনি বিসমার্কের অভ্যন্তরীন রীতি-নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন এবং এ কারণে তাকে কারাগারে অন্তরীন থাকতে হয়েছিল। ১৯০৩ সালের ১লা নভেম্বর থিওডর মম্‌সেন মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • রোমের ইতিহাস রচনার জন্য মম্‌সেন ১৯০২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। সে সময় তার আগে থেকে সাহিত্যে বিশেষ প্রভাবশালী এমিল জোলা, ডব্লিউ. বি. ইয়েটস, হার্বার্ট স্পেন্সার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। কিন্তু তাদের আগেই নোবেল পান মম্‌সেন। তিনি তার ১৬ খণ্ডের বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ করপাস ইন্‌সক্রিপশান্স লাতিনেরাম-এর জন্য বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিলেন। এরপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস গ্রন্থ হিস্ট্রি অফ রোম রচনা করেন। এই রচনাগুলোই তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিল।
  • ১৮৫৪ সালে জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত প্রুশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্স-এর সদস্য মনোনীত হন।

তথ্যসূত্র

সাহিত্যকর্ম

  • হিস্ট্রি অফ রোম
  • Roman Chronology to the Time of Caesar (১৮৫৮) অগাস্ট মম্‌সনের সাথে লিখেছেন
  • Roman Constitutional Law: (১৮৭১-১৮৮৮)
  • Roman Criminal Law (১৮৯৯)
  • Monumentum Ancyranum
  • Iordanis Romana et Getica (১৮৮২)
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে ১,৫০০ এর উপর প্রবন্ধ।

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

[2] [3]

  1. Novel prige win 1902 in Literature (see on google.com)
  2. Novel prige winner writter/literature page on google
  3. Novel prige winner on 1902
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.