জটায়ুমঙ্গলম
জটায়ুমঙ্গলম (স্থানীয় উচ্চারণে উচ্চারণে সাডায়ামাংগালাম্) হলো দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কোল্লাম জেলার একটি গ্রাম।[1] আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে জটায়ুমঙ্গলমে স্থাপন করা রাজ্যের রাজা 'নেদিলা পরন্তক নেদুম সদয়ন'-এর নাম অনুসারে এই স্থানটি চডয়মঙ্গলম নামে পরিচিতি পাচ্ছে বলে মনে করা হয়।[2]
জটায়ুমঙ্গলম ചടയമംഗലം (চটয়মঙ্গলম্) | |
---|---|
গ্রাম | |
![]() জটায়ু জাতীয় উদ্যানের জটায়ু রক | |
![]() ![]() জটায়ুমঙ্গলম ![]() ![]() জটায়ুমঙ্গলম | |
স্থানাঙ্ক: ৮.৮৪২১২০০° উত্তর ৭৬.৮৬৪৪৪০° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ![]() |
রাজ্য | কেরালা |
জেলা | কোল্লম |
সরকার | |
• শাসক | পুরসভা |
আয়তন | |
• মোট | ২১.৯৩ কিমি২ (৮.৪৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২২,৪৭৩ |
• জনঘনত্ব | ১০০০/কিমি২ (২৭০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | মালয়ালম, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৬৯১৫৩৪ |
টেলিফোন কোড | ০৪৭৪ |
যানবাহন নিবন্ধন | (কেএল -৮১) কেরালা ৮১ |
ভুগোল
জটায়ুমঙ্গলম ঐতিহাসিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এটি কোল্লম শহর থেকে ৩৭.৫ কিলোমিটার এবং রাজ্যের রাজধানী তিরুবনন্তপুরম থেকে মাত্র ৪৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি কিলিমানুর থেকে ১৪ কিলোমিটার ও কোট্টারকরা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে উভয়ে মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত। গ্রামটি কোট্টারকরা তালুকের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত এবং কালোপাথরে ভরা অঞ্চল। সারা বছরই পর্যটকসহ বিভিন্ন সংস্থার ভূগোলবিশারদ এই অঞ্চলটি দর্শনে আসেন।
জনতত্ত্ব
২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুসারে জটায়ুমঙ্গলম গ্রামের মোট জনসংখ্যা ২২৪৭৩ জন, যার মধ্যে ১০২৪২ জন পুরুষ এবং ১২২৩১ জন নারী। ছয় বৎসর অনূর্ধ্ব শিশু সংখ্যা ২৩০৪ জন যা জনসংখ্যার ১০.২৫ শতাংশ। মোট ছয় বৎসরোর্ধ্ব জনসংখ্যা ১৮৮৩৪ জন তথা ৯৩.৩৮ শতাংশ সাক্ষরজ্ঞানের অধিকারী।[3]
ইন্সটিটিউট ফর ওয়াটারশেড ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট, জটায়ুমঙ্গলম, কেরালা
ইন্সটিটিউট ফর ওয়াটারশেড ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট হলো জটায়ুমঙ্গলমে অবস্থিত রাজ্য স্তরের ভূমি উন্নয়ন দপ্তরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি ভু-সংস্কার ছাড়াও অনবীকরণযোগ্য খনিজের সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা তৈরীর কাজ করে থাকে। পরিবেশের বাস্তুবিষয়ক আলোচনাসভাগুলি এই সংস্থার অধীনস্ত।[4]
মহাকাব্যে উল্লেখ
জটায়ুমঙ্গলম স্থানটির সাথে ভারতীয় হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের ঘটনাপ্রবাহের বিশেষ সংযোগ রয়েছে। রামায়ণ অনুসারে লঙ্কার (যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কা নামে পরিচিত) রাজা তথা অসুররাজ রাবণ তার প্রতিদ্বন্দ্বী রামের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে পুষ্পক বিমানে চড়ে আকাশপথে তার নিজের লঙ্কা রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনায় সফল হয়ে তিনি সীতাকে অপহরণ করলে রামের পিতার পরম মিত্র জটায়ু পথে রাবণকে বাধা দিলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে রাবণ জটায়ুর একটি ডানা ছেদ করে ও সীতাকে নিয়ে পালিয়ে যান। মরণক্ষত নিয়ে বৃদ্ধ জটায়ু একটি বৃৃহদাকৃতি পাথরের ওপর এসে পড়ে। পরে রাম ও লক্ষ্মণের সহিত জটায়ু সাক্ষাৎ হলে জটায়ু সমস্ত খবর তাদের দেন এবং রামের কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এভাবে ঐ বৃহদাকৃতি প্রস্তরখণ্ড জটায়ুপুর নাম পায়।
জটায়ু হলেন কশ্যপ মুনির পৌত্র তথা অরুণের পুত্র ও গৃৃধ্নিরূপী গরুড়ের ভ্রাতুষ্পুত্র। পর্যটকদের কাছে জটায়ুপাড়া অন্যতম আকর্ষন ও তীর্থযাত্রাগুলির অন্যতম। পাথরটির ওপর বর্তমানে সুসজ্জিত একটি ক্ষতবিক্ষত জটায়ুর আকৃতিসহ স্থাপত্য রয়েছে এবং জটায়ুপাড়াতে রয়েছে আঠারো ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি নির্মীয়মান রামমূর্তি।
বিতর্ক
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের লেপক্ষী অঞ্চলের সাথেও একই ইতিহাস জড়িত এবং কেরালার রামক্কলমেট্টুতে তার শেষকৃৃত্য সম্পন্ন হয়। রাম জটায়ুকে শায়িত অবস্থা থেকে উঠতে বলেন, যা তেলুগু ভাষাতে "লে পক্ষী" (বা ওঠো পক্ষী) উচ্চারিত হয়, এভাবেই এই স্থানটির নাম হয় লেপক্ষী।[5][6]
কিন্তু বাল্মিকী রামায়ণ অনুসারে রাম কখনোই বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করেননি। সর্বতীর্থ গ্রন্থ অনুসারে জটায়ু মহারাষ্ট্রে আকোলা আহমদনগর অঞ্চলে পতিত হন। সেখানে জটায়ুর নামে একটি মন্দির রয়েছে এবং মন্দিরের নিকটে পুকুরটিকে ছয় নদীর সম্মিলিত ধারার উপস্থিতির কথা বিশ্বাস করা হয়। রামায়ণের একাধিক আঞ্চলিক সংস্করণে কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উক্ত স্থানগুলির নাম পাওয়া যায়, মূল বাল্মিকী রামায়ণে নয়।
জটায়ু পরিবেশ উদ্যান
জটায়ু আর্থ'স সেন্টার, যা জটায়ু পরিবেশ উদ্যান বা জটায়ু রক নামেও পরিচিত, এটি হলো কেরালা রাজ্যের কোল্লাম জেলার জটায়ুমঙ্গলমে অবস্থিত একটি উদ্যান ও পর্যটনকেন্দ্র। এটি সমুদ্রপৃৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মিটার (১২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। এই পরিবেশ উদ্যানটিতে বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ২০০ ফুট লম্বা, ১৫০ ফুট চওড়া ও ৭০ ফুট উচ্চতাযুক্ত পাখির ভাস্কর্য রয়েছে, যা জটায়ুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃৃত।[7][8] এই উদ্যানটি নির্মাণ-সংরক্ষণ-হস্তান্তর নীতিভুক্ত কেরালা রাজ্যে অবস্থিত প্রথম প্রকাশ্য ব্যক্তিগত পর্যটন কেন্দ্র। ভাস্কর রাজীব অঞ্চল হলেন জটায়ুর মূর্তি তৈরীর নকশাকর।
উদ্যানটির দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কারমূলক কাজ ১৭ই আগস্ট ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হয় ও তা জনসাধারণের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়।[9][10]
তথ্যসূত্র
- http://www.censusindia.gov.in/2011census/dchb/DCHB.html
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৯।
- https://www.census2011.co.in/data/village/628422-chadayamangalam-kerala.html
- http://www.keralasoils.gov.in/index.php/institutions-under-the-dept/iwdmk
- http://www.bangaloremirror.com/index.aspx?Page=article§name=Specials%20-%20Trippin§id=38&contentid=2009100120091001181345687b8670cd2%5B%5D
- "Lepakshi Temple - Lepakshi:: The Treasure House of Art and Sculpture"। ২৮ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "Jatayu Nature Park Website"। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৫।
- "Kerala park to welcome visitors in Jan - Khaleej Times"। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৫।
- "Adventure Rock Hill open for visitors"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
- "Enjoy a day of adventure at Jatayu Earth's Center"। Outlook Traveller। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৭।