চোলা পুঁটি

চোলা পুঁটি (ইংরেজি: Swamp barb) (বৈজ্ঞানিক নাম:Puntius chola) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। বাংলা শব্দ পুঁটি (Pungti) থেকে Puntius শব্দটি নেয়া হয়েছে। বাংলা শব্দটি ছোট আকারের সিপ্রিনিডস মাছের স্থানীয় নাম। অন্যদিকে এই পুঁটির স্থানীয় নাম চোলা থেকে Chola শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই মাছ চোলা পুঁটি, চেলা পুঁটি, কিরুন্দি পুঁটি নামে পরিচিত।

চোলা পুঁটি
Swamp barb

ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত  (আইইউসিএন ৩.১)[1]
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
উপপর্ব: Vertebrata
মহাশ্রেণী: Osteichthyes
শ্রেণী: Actinopterygii
বর্গ: Cypriniformes
পরিবার: Cyprinidae
গণ: Puntius
প্রজাতি: P. chola
দ্বিপদী নাম
Puntius chola
(F. Hamilton, 1822)
Nations where Puntius chola can be found
প্রতিশব্দ
  • Cyprinus chola (Hamilton, 1822)
  • Puntius titius (Hamilton, 1822)
  • Barbus chola (Hamilton, 1822)
  • Capoeta chola (Hamilton, 1822)
  • Barbus titius (Hamilton, 1822)

ভৌগলিক বিস্তৃতি

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। কেরালা এবং তামিল নাড়ু উপকূলীয় অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালমায়ানমারে এদের পাওয়া যায়।[2] বর্তমানে মাছটি পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মায়ানমার ও পশ্চিম থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে।[3]

দৈহিক গঠন

দেহ চাপা ও গভীর। দেহের অঙ্কীয় প্রান্তের চেয়ে পৃষ্ঠীয় প্রান্ত অধিক উত্তল । ছোট ও প্রান্তীয় মুখের উপরের চোয়ালে একজোড়া স্পর্শী উপস্থিত। তুণ্ডশীর্ষ এবং পুচ্ছ-ভিত্তির মধ্যবর্তী স্থানে যেখানে পৃষ্ঠীয় প্রান্ত সবচেয়ে বেশী উঁচু সেখান থেকে পৃষ্ঠ পাখনা শুরু হয়েছে। পৃষ্ঠ পাখনার শেষ অশাখান্বিত রশ্মিটি অস্থিনির্মিত, কিছুটা শক্ত এবং মসৃণ। বক্ষ পাখনা তুণ্ড ব্যতীত মাথার দৈর্ঘ্যের সমান। পার্শ্বরেখা সম্পূর্ণ। পার্শ্বরেখায়। অনুসারে ২৬-২৮ টি এবং অনুসারে ২৪-২৬ টি আঁইশ উপস্থিত। রূপালী দেহে সোনালী বর্ণের কানকো দেখতে পাওয়া যায়। পুচ্ছপাখনার গোঁড়ায় একটি কালো বর্ণের গোলাকার দাগ [4] দেখতে পাওয়া যায়। পৃষ্ঠপাখনার গোঁড়ায় ২য় থেকে ৫ম রশ্মির মধ্যবর্তী স্থানে একটি গোলাকার কালো দাগ উপস্থিত। পৃষ্ঠপাখনার মাঝ বরাবর এক থেকে দুই সারি কালো দাগ উপস্থিত। প্রজননের ঋতুতে এদের পুরুষদের কানকোর শেষপ্রান্ত থেকে পুচ্ছপাখনার দ্বিখণ্ডকের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত দেহের মাঝ বরাবর একটি লাল রঙের দাগ দেখতে পাওয়া যায় । এদের আদর্শ দৈর্ঘ্য ও মোট দৈর্ঘ্য মাথার দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ৩.২-৩.৬ ও ৪.০-৪.৭ গুণ এবং দেহ উচ্চতার যথাক্রমে ২.৬-৩.০ ও ৩.৩-৩.৯ গুণ । মাথার দৈর্ঘ্য চোখের ব্যাসের ৩.৬-৪.২ গুণ ,তুণ্ডের ১.০ গুণ এবং আন্তঃ অক্ষিকোটরের দৈর্ঘ্যের ১.৫-১.৬ গুণ।

আবাসস্থল

নদী, খাল, হাওর, পুকুর এবং প্লাবিত ক্ষেত্রে বসবাস করে। এদের প্রচুর পরিমাণে বিল, অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, নদী এবং খালে পাওয়া যায়। পাথুরে তলদেশের বালি, নুড়ি, শিলা-পাথর সমৃদ্ধ স্থান যার গভীরতা প্রায় ১.৫ মিটার এমন স্থান এদের পছন্দ। প্রকৃতিতে এদের পছন্দনীয় তাপমাত্রা ৬৯.৮ °F বা ২১ °C, পিএইচ ৭ এবং হার্ডনেস ২.৫° বা এর কম।

খাদ্য

প্রকৃতিতে এরা সর্বভূত অর্থাৎ উদ্ভিদপ্রাণী উভয় প্রকারের খাবারই খেয়ে থাকে। কীট, পতঙ্গ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী, উদ্ভিদের অংশ ও পচা-গলা উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশবিশেষ এদের অন্যতম খাদ্য।

প্রজনন

প্রজননের সময়কালে পুরুষদের পায়ু ও শ্রোণী পাখনা কমলা-সাদা রঙের। অন্যদিকে নারীদের সকল পাখনাই প্রায় স্বচ্ছ। পুরুষেরা স্ত্রীদের তুলনায় উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে থাকে অন্যদিকে স্ত্রীরা পুরুষদের তুলনামূলক বর্ণে অনুজ্জ্বল তবে আকারে বৃহৎ হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রজনন ঋতুতে পুরুষদের কমলা বর্ণের শ্রোণীপাখনা ও পায়ুপাখনা দেখতে পাওয়া যায় যেমনটি স্ত্রীদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়না। এরা স্বাদুপানির জলাশয়ের মধ্য ও উপরিভাগে বাস করে এবং স্বাদুপানির অভ্যন্তরেই অভিপ্রয়াণ করে। জুন থেকে জুলাই এদের প্রজনন কাল। বর্ষাকালে ভারী বর্ষণের সময় এরা প্রজননের উদ্দেশ্যে অগভীর জলাশয় ও প্লাবনভূমিতে অভিপ্রয়াণ করে এবং জলজ উদ্ভিদের পাতার উপরে ডিম পাড়ে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

স্বাদুপানির উন্মুক্ত জলাশয় হতে আহরণকৃত মাছের মধ্যে পুঁটিই সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় যার অন্যতম অংশই চোলা পুঁটি। চ্যাঁপা শুঁটকি তৈরিতে মূলত চোলা পুঁটিই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আহরণ ঋতুতে তুলনামূলকভাবে এই পুঁটির মূল্য কম থাকায় দরিদ্র মানুষ প্রচুর পরিমাণে এই মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ

আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুখীন নয়।[2]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. http://www.iucnredlist.org/details/166443/0
  2. কিবরিয়া, এম মনজুরুল (অক্টোবর ২০০৯)। "স্বাদুপানির মাছ"। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮২–৮৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)
  3. AL, Bhuiyan (১৯৬৪)। Fishes of Dacca। Asiatic Soc. Pakistan, Publ.। পৃষ্ঠা ৯৪-৯৫।
  4. PK, Talwar; AG, Jhingran (২০০১)। Inland Fishes of India and Adjacent countries.। New Delhi.: Oxford and IBH Publishing Co. Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 154।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.