চুচেংফা

চুচেংফা বা প্রতাপ সিংহ (রাজত্বকাল ১৬০৩-১৬৪১) আহোম রাজ্যের ১৭তম রাজা ছিলেেন। বয়স্ক অবস্থায় রাজা হওয়ার জন্য বুরঞ্জীতে তাকে বুঢ়া রাজাও বলা হয়েছে। তার রাজত্বকালে অহোম রাজ্যর সীমা পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, অহোম-মোগল সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে, এবং মোমাই তামুলী বরবরুয়ার পরিকল্পনামতে পাইক প্রথা এবং নতুন গ্রাম্য অর্থনীতি জন্য রাজ্যের আন্তঃব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়। তিনি বরবরুয়া এবং বরফুকন এই দুটি নতুন পদের সৃষ্টি করেছিলেন। কোচ হাজোর শাসকের সাথে মিত্রতার জন্য তিনি মোগল আগ্রাসন রোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। তার প্রচলন করা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ১৮২৬ সালের অহোম রাজ্যের অন্ত পর্যন্ত চালু থাকে।

আহোম রাজবংশ
চুকাফা১২২৮১২৬৮
চুতেফা১২৬৮১২৮১
চুবিন্‌ফা১২৮১১২৯৩
চুখাংফা১২৯৩১৩৩২
চুখ্ৰাংফা১৩৩২১৩৬৪
শাসক নেই১৩৬৪১৩৬৯
চুতুফা১৩৬৯১৩৭৬
শাসক নেই১৩৭৬১৩৮০
ত্যাও খামটি১৩৮০১৩৮৯
শাসক নেই১৩৮৯১৩৯৭
চুডাংফা১৩৯৭১৪০৭
চুজান্‌ফা১৪০৭১৪২২
১০চুফাকফা১৪২২১৪৩৯
১১চুচেন্‌ফা১৪৩৯১৪৮৮
১২চুহেন্‌ফা১৪৮৮১৪৯৩
১৩চুপিম্‌ফা১৪৯৩১৪৯৭
১৪চুহুংমুং১৪৯৭১৫৩৯
১৫চুক্লেনমুং১৫৩৯১৫৫২
১৬চুখাম্‌ফা১৫৫২১৬০৩
১৭চুচেংফা১৬০৩১৬৪১
১৮চুরাম্‌ফা১৬৪১১৬৪৪
১৯চুত্যিন্‌ফা১৬৪৪১৬৪৮
২০চুতাম্লা১৬৪৮১৬৬৩
২১চুপুংমুং১৬৬৩১৬৭০
২২চুন্যাৎফা১৬৭০১৬৭২
২৩চুক্লাম্‌ফা১৬৭২১৬৭৪
২৪চুহুং১৬৭৪১৬৭৫
২৫গোবর রাজা১৬৭৫১৬৭৫
২৬চুজিন্‌ফা১৬৭৫১৬৭৭
২৭চুদৈফা১৬৭৭১৬৭৯
২৮চুলিক্‌ফা১৬৭৯১৬৮১
২৯চুপাৎফা১৬৮১১৬৯৬
৩০চুখ্রুংফা১৬৯৬১৭১৪
৩১চুতংফা১৭১৪১৭৪৪
৩২চুনেন্‌ফা১৭৪৪১৭৫১
৩৩চুরাম্‌ফা১৭৫১১৭৬৯
৩৪চুন্যেওফা১৭৬৯১৭৮০
৩৫চুহিত্পাংফা১৭৮০১৭৯৫
৩৬চুক্লিংফা১৭৯৫১৮১১
৩৭চুদিংফা১৮১১১৮১৮
৩৮পুরন্দর সিংহ১৮১৮১৮১৯
৩৯চুদিংফা১৮১৯১৮২১
৪০যোগেশ্বর সিংহ১৮২১১৮২২
৪১পুরন্দর সিংহ১৮৩৩১৮৩৮

শাসনকাল

১৬০৩ সালে চুখাম্‌ফার মৃত্যুর পর তার পুত্র লাঙি গোহাঁইকে মন্ত্রী টংখাম বরগোহাঁই, চাওপেত বুঢ়াগোহাঁই এবং বনজাঙ্গি বরপাত্রগোহাঁয় স্বর্গদেউ হিসাবে অধিষ্ঠিত করেন।[1] অভিষেকের সময়ে তার বয়স ছিল ৫৮ বছর। রাজা হয়ে তিনি অহোম নাম চুচেংফা এবং হিন্দু নাম প্রতাপ সিংহ গ্রহণ করেন। তিনি জয়ন্তীয়া রাজকন্যার সাথে বিবাহর প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরে কাছাড়ি রাজ্যের সাথে তার সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ১৬০৮ সালে পরীক্ষিত নারায়ণের কন্যা মঙলদহীর সাথে বিয়ে করে তিনি কোচ হাজোর সঙ্গে মিত্রতা করেন।[1]

ইতিহাসবিদ বেণুধর শর্মার মতে, অসমে দুর্গা দেবীর মাটির প্রতিমা পূজা করার প্রথা চুচেংফার সময়ে আরম্ভ হয়। কোচ রাজ্যে বন্দী হওয়া সুন্দর গোহাঁইর থেকে চুচেংফা কোচ রাজা নরনারায়ণ ধুমধাম করে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত করার কথা শোনেন। তিনি প্রতিমা সজ্জা শেখার জন্য কোচ রাজ্যে শিল্পী পাঠিয়েছিলেন। শিবসাগরের কাছের ভটিয়াপারায় রাজা প্রথমবার রাজকীয় দুর্গাপূজা করেন।

কোচবিহার এবং কোচ হাজোর মধ্যে সংঘাতের ফলে মোগলরা এই অঞ্চল পর্যন্ত প্রবেশ করে এবং ১৬১৫ সালে অহোম রাজ্যকে দখল করে। শেষে পরবর্তী কালের অহোম রাজা চুপাতফা ১৬৮২ সালে অসম থেকে মোগলদের সমূলে বিনাশ করেন। অহোম-মোগলের সংঘাতের ফলে বহিরাগত শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে অহোম-কাছাড়ির মধ্যে শান্তি স্থাপন হয়।[1]

প্রশাসন

মোগল আক্রমণে কোচ হাজোর শক্তি কমে আসার বিপরীতে অহোমের প্রভাব ক্রমে ক্রমে পশ্চিমে ব্যাপ্ত হয়েছিল। চুচেংফা লাঙি পানীসিয়াকে প্রথমবরফুকন হিসাবে কাজলীতে থেকে তার পশ্চিম সেনানায়ক হিসাবে নিয়োগ করেন এবং কলিয়াবরের পশ্চিমে অহোম অঞ্চল ছিন্ন-ভিন্ন করে দেন। বুঢ়াগোহাঁই, বরগোঁহাই এবং বরপাত্রগোহাঁইর হাতে সুনির্দিষ্ট অঞ্চল ছিল এবং তাদের অধীনে না থাকা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে চুচেংফাবরবরুয়া পদবীর সৃষ্টি করেন। প্রথম ববরুয়া মোমাই তামুলী পাইক প্রথা এবং গ্রাম্য অর্থনীতির আমূল সংস্কার সাধন করেন।

শাসনের সুবিধার জন্য চুচেংফা ভূঞাদেরকে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পার থেকে দক্ষিণ পারে এনে তাদের শক্তি হ্রাস করেন। চুহুন্মুঙ কাছাড়ি রাজ্য থেকে অধিকার করা মরঙী অঞ্চলে তিনি আট হাজার পরিবার সংস্থাপন করেন।

তিনি রহিয়াল বরুয়া, জাগিয়াল গোহাঁই, কাজলীমুখীয়া গোহাঁই ইত্যাদি পদবীরও সৃষ্টি করেছিলেন। সাংগঠনিক তীক্ষ্ণতা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং জ্ঞানের জন্য চুচেংফা বুদ্ধি স্বর্গনারায়ণ বলেও পরিচিত ছিলেন।

৩৮ বছর শাসনের পর ১৬৪১ সালে প্রতাপ সিংহের মৃত্যু হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Gogoi (১৯৬৮)। The Tai and the Tai Kingdoms। Guwahati: Gauhati University। পৃষ্ঠা 333–365।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.