এভোক্যাডো

এভোক্যাডো (ইংরেজি: avocado) (বৈজ্ঞানিক নাম:Persea americana) হচ্ছে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ,[2][3] যেটির লরেসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। ফলটির খোসা কুমিরের গায়ের মত অমসৃণ হওয়ায় এটা কুমির নাশপাতি হিসেবেও পরিচিত।

এভোক্যাডো

এভোক্যাডো
avocado
Avocado fruit and foliage, Réunion island
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
(শ্রেণীবিহীন): Angiosperms
(শ্রেণীবিহীন): Magnoliids
বর্গ: Laurales
পরিবার: Lauraceae[1]
গণ: Persea
প্রজাতি: P. americana
দ্বিপদী নাম
Persea americana
Mill.
প্রতিশব্দ

Persea gratissima

চাষাবাদ

পূর্ব এবং মধ্য মেক্সিকো থেকে শুরু করে গুয়াতেমালা অতিক্রম করে মধ্য আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় কুল পর্যন্ত এভোক্যাডো দেশীয় ফল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে। মেক্সিকোতে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে থেকে এভোক্যাডো চাষ হয়ে আসছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এভোক্যাডো গাছ ক্যালিফোর্নিয়া এবং ফ্লোরিডা তে নিয়ে আসা হয়। এভোক্যাডোর গাছ বীজ বা কলমের মাধ্যমে প্রজনন করা যেতে পারে। বীজ থেকে গজানোর মাস দুই এক পর গাছ ৩০ সেমিঃ এর কাছাকাছি বাড়লে চারাটা মাটিতে পুতে দিতে হবে। বপন থেকে ফলন পর্যন্ত পারিপার্শ্বিকতার তারতম্য ভেদে সময় ৮ থেকে ১০ বছরও লেগে যেতে পারে। এভোক্যাডো ফুলের পুংকেশর এবং স্ত্রীকেশরের আশুগ্রাহিতা (receptiveness) ভিন্ন সময়ে ঘটে বলে যৌনপ্রজনন আংশিক-স্বপরাগায়ন দ্বারাই সম্পন্ন হয়। যৌনপ্রজননে আংশিক-স্বপরাগায়ন এবং দীর্ঘ বর্ধনকালের সীমাবদ্ধতা থাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এভোক্যাডোর প্রজনন কলম দিয়েই করা হয়। এতে করে জাতের বিশুদ্ধতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং ফলনও ভাল হয়।

বীজ হতে চারা তৈরির কৌশল

১ম ধাপ

১ম ধাপ

পরিপক্ক ফল থেকে বীজকে আলাদা করতে হবে।

২য় ধাপ

২য় ধাপ

বীজের উপরের কালো আবরণ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৩য় ধাপ

৩য় ধাপ

জল দিয়ে পরিষ্কারের পরপরেই ছায়া যুক্ত স্থানে ২০ সেন্টিমিটার পুরু শুকনো বালির ভিতরে আড়াআড়ি করে বীজটি এমন ভাবে বপন করতে হবে যাতে করে বীজের চারভাগের একভাগ বালির উপরে থাকে।

৪র্থ ধাপ

৪র্থ ধাপ

হ্যান্ড স্প্রেয়ার জল নিয়ে প্রতিদিন হালকা করে বালি ভিজিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল দিলে বীজ পঁচে যেতে পারে । তাই জল দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৫ম ধাপ

৫ম ধাপ

বীজ বালিতে বপন করার ৩৫-৪০দিনের মধ্যে (ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি দিন) প্রথমে শিকড়, পরবর্তিতে অঙ্কুর(ডগা)দেখা যাবে।

৬ষ্ঠ ধাপ

৬ষ্ঠ ধাপ

বেলে দোআঁশ মাটি সাথে শুকনো গোবর অথবা কমপোস্ট মিশিয়ে টবের মাটি তৈরি করতে হবে।

৭ম ধাপ

৭ম ধাপ

অঙ্কুর(ডগা) ৩-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হলে শিকড় সহ বীজটিকে তুলে মাটির টবে রোপন করতে হবে।

৮ম ধাপ

৮ম ধাপ

মাটির টবে বীজটিকে রোপনের পর অঙ্কুর(ডগা) ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পানি ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে বা অণুখাদ্য স্প্রে করতে হবে।

৯ম ধাপ (মাদা তৈরি)

৯ম ধাপ

দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার x প্রস্থ ৪০ সেন্টিমিটার x গভীরতা ৬০ সেন্টিমিটার মাপে মাদা বা গর্ত তৈরি করে ৩ কেজি গোবর, ৬০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমওপি, ১০ গ্রাম জিংক, ১৫ গ্রাম বোরণ, ২০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে মিশিয়ে ২-৪ দিন পরে চারা রোপন করতে হবে।

১০ম ধাপ

১০ম ধাপ

৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে চারাটিকে মাটির টব থেকে মাদা বা গর্তে স্থানান্তর করতে হবে।

১১তম ধাপ

১১তম ধাপ

এভোক্যাডো গাছ(৬ মাস বয়স)

এভোক্যাডো ফল
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি৬৭০ কিজু (১৬০ kcal)
8.53 g
চিনি0.66 g
খাদ্যে ফাইবার6.7 g
14.66 g
সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ2.13 g
এককঅসুসিক্ত9.80 g
বহুঅসুসিক্ত1.82 g
প্রোটিন
2 g
ভিটামিনসমূহ
ভিটামিন এ সমতুল্য
বেটা ক্যারোটিন
লুটিন জিজানথেন
(1%)
7 μg
(1%)
62 μg
271 μg
থায়ামিন (বি)
(6%)
0.067 mg
রিবোফ্লাভিন (বি)
(11%)
0.13 mg
ন্যায়েসেন (বি)
(12%)
1.738 mg
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি)
(28%)
1.389 mg
ভিটামিন বি
(20%)
0.257 mg
ফোলেট (বি)
(20%)
81 μg
ভিটামিন সি
(12%)
10 mg
ভিটামিন ই
(14%)
2.07 mg
ভিটামিন কে
(20%)
21 μg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম
(1%)
12 mg
লোহা
(4%)
0.55 mg
ম্যাগনেসিয়াম
(8%)
29 mg
ম্যাঙ্গানিজ
(7%)
0.142 mg
ফসফরাস
(7%)
52 mg
পটাশিয়াম
(10%)
485 mg
সোডিয়াম
(0%)
7 mg
দস্তা
(7%)
0.64 mg
অন্যান্য উপাদানসমূহ
পানি73.23 g
Fluoride7 µg
Beta-sitosterol76 mg

  • একক
  • μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ   mg = মিলিগ্রামসমূহ
  • IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ
Percentages are roughly approximated using US recommendations for adults.
Source: USDA Nutrient Database

খাদ্যগুণ

ফলটির খাদ্যগুণের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। অ্যাভোক্যাডো থেকে পাওয়া ক্যালরির প্রায় ৮০% ভাগই আসে চর্বি থেকে। আপাতঃদৃষ্টিতে এভোক্যাডো চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বলে মনে হলেও এই চর্বি আমাদের শরীরের জন্য হিতকর। এভোক্যাডোর এই অসাধারণ চর্বি তিন প্রকারেরঃ ১। ফাইটোস্টেরলঃ অ্যাভোক্যাডোর চর্বির বেশীর ভাগই এই ফাইটোস্টেরল। এভোক্যাডোর চর্বিতে বিভিন্ন ফাইটোস্টেরলের সমন্বয় ঘটায় ফলটি প্রদাহ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। ২। পলিহাইড্রওক্সিল্যাটেড ফ্যাটি অ্যালকোহল (PFA): যদিও এই উপাদানটি সামুদ্রিক গাছেই সচারাচর পাওয়া যায় কতিপয় স্থলজ উদ্ভিদেও এটা বিদ্যমান। ফাইটোস্টেরলের মত PFA ও প্রদাহ নিরোধে সহায়তা করে। অ্যাভোক্যাডোতে এই উপাদানটি যথেষ্ট পরিমানে থেকে ফলটিকে অসাধারন করেছে। ৩। অলেইক (oleic) এসিড: অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমানে অলেইক (oleic) এসিড থাকায় এই ফলটি ওজন, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতে সহায়তা করে। অলেইইক এসিড monounsaturated fatty acid যা কিনা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL; low-density lipoprotein) কমায় ও ভাল কোলেস্টেরল (HDL; high-density lipoprotein) বাড়ায়। রক্তে LDL বেশি হলে তা ধমনীর নালীতে জমা হয়ে নালীপথকে সরু করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে HDL রক্ত থেকে LDL সরিয়ে যকৃৎে নিয়ে তা নষ্ট করে ফেলে। সম্পৃক্ত চর্বি (saturated fatty acid) LDL বাড়িয়ে plaque তৈরিতে সহায়তা করে বিধায় রুল অফ থাম্ব হলঃ সম্পৃক্ত চর্বি (প্রানী-চর্বি) যথাসম্ভব কম খেয়ে উদ্ভদ-চর্বি (অসম্পৃক্ত চর্বি) বেশী অথচ পরিমিত পরমাণে খেতে হবে।

অ্যাভোক্যাডোতে পটাশিয়ামের মাত্রাধিক্য থাকায় ফলটি হৃদপিণ্ড সবল ও সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া অ্যাভোক্যাডো প্যান্টোথেনিক এসিড, ডাইটারি ফাইবার, তামা, ফলিক এসিড, ভিটামিন B6, ভিটামিন K এবং ভিটামিন C এর ভাল উৎস। মহিলা মহলে ত্বকের পরিচর্যার জন্য মুখে এভোক্যাডোর পেস্ট (avocado face masks) এর প্রলেপ দেয়ার রেওয়াজ আছে। এভোক্যাডোর খনিজদ্রব্য ও ভিটামিনসমূহ ত্বকের ভেতর যেয়ে তত্বককে সতেজ ও মস্রিন রাখে। সালাদে অ্যাভোক্যাডো যোগ করলে পরিপাকনালীতে সালাদ থেকে নির্গত ক্যারোটিন জাতীয় এন্টিওক্সিডেন্টের (লাইকপিন, বেটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি) শোষণ দ্বিগুন থেকে চারগুন বৃদ্ধি পায়। এই ক্যারোটিন প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে।

প্রস্তুত খাবার

উত্তর আমেরিকাতে এভোক্যাডো থেকে তৈরি গোয়াক্যামোলি (guacamole) খুবি জনপ্রিয়! যদি গোয়াক্যামোলির স্বাদ পেতে চান তবে না ভেবে মেক্সিকান ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে চলে যান। বস্তুত গোয়াক্যামোলি হোল এভোক্যাডোর ভর্তা বা চাটনি(dip)। এভোক্যাডো ম্যাস (mash) করে লবন, ধনে পাতার কুঁচি, পেঁয়াজের কুঁচি, লেবুর রস মিশিয়ে নিলেই গোয়াক্যামোলি হয়ে যায়। যদিও অ্যাভোক্যাডোর কথা মনে হলে প্রথমেই গোয়াক্যামোলির কথা মাথায় আসে, গোয়াক্যামোলি ছাড়াও অ্যাভোক্যাডো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা যায়। খাদ্য তালিকা থেকে মাত্র কয়েকটা নীচে দেয়া হোলঃ

  • এভোক্যাডো আইসক্রিম
  • এভোক্যাডো চেরী টমেটো স্টাফিং
  • এভোক্যাডো স্মুদি
  • এভোক্যাডো সরবিট
  • এভোক্যাডো সুশি
  • এভোক্যাডো এ্যানসিলাদাস
  • এভোক্যাডো পাই
  • এভোক্যাডো কেক
  • এভোক্যাডো মিল্ক সেক
  • এভোক্যাডো টুনা স্কেইওয়্যার্স

তথ্যসূত্র

  1. Morton JF (১৯৮৭)। "Avocado; In: Fruits of Warm Climates"। Creative Resource Systems, Inc., Winterville, NC and Center for New Crops & Plant Products, Department of Horticulture and Landscape Architecture, Purdue University, West Lafayette, IN। পৃষ্ঠা 91–102। আইএসবিএন 0-9610184-1-0।
  2. Chen, H.; Morrell, P. L.; Ashworth, V. E. T. M.; De La Cruz, M.; Clegg, M. T. (২০০৮)। "Tracing the Geographic Origins of Major Avocado Cultivars"। Journal of Heredity100 (1): 56–65। doi:10.1093/jhered/esn068। PMID 18779226
  3. "History: what's in a name?"ucavo.ucr.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৯

অতিরিক্ত পাঠ

  • Bruce Shaffer, B. Nigel Wolstenhome and Anthony W. Whiley, সম্পাদকগণ (২০১২)। The Avocado: Botany, Production and Uses। CABI। আইএসবিএন 9781845937010।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.