এঞ্জেলা গোমেজ

এঞ্জেলা গোমেজ (জন্ম: জুলাই ১৬, ১৯৫২) একজন বাংলাদেশী সমাজসেবক যিনি বিশেষত নারী উন্নয়ন এবং নারী অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করেন। তিনি সামাজিক উন্নয়নে নেতৃত্বদানের জন্য ১৯৯৯ সালে রেমন ম্যাগসেসাই পুরস্কার পান।[1] এঞ্জেলা যশোর জেলায় বাঁচতে শেখা নামের সংগঠনের প্রধান। এই সংগঠনটি গ্রামের মহিলাদেরকে হস্তশিল্প, কৃষি, হাঁস-মুরগী পালন, গবাদিপশু পালন, মৌমাছি পালন, ইত্যাদি কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। প্রায় ৪০০ গ্রামের ২০,০০০ মহিলাকে এই সংগঠনটি সাহায্য করেছে। ২০০০ সালে তিনি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।[2]

এঞ্জেলা গোমেজ
জন্ম১৬ জুলাই, ১৯৫২
গাজীপুর, বাংলাদেশ
পেশাসমাজকর্মী, নারী অধিকার কর্মী
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারর‌্যামন মাগাসেসে পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

এঞ্জেলা গোমেজের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৬ জুলাই গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার নাগরি ইউনিয়নের মাল্লা গ্রামে। ৯ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। বাবা আগস্টিন গমেজ এবং মার নাম ইসাবেলা৷ ভূমিষ্ট হওয়ার পর এঞ্জেলার বাবা তার নাম দেন 'ফুল'। শিশু বয়সে সবাই আদর করে তাকে 'ফুল কুমারী' বলে ডাকতো। পরবর্তীতে তার নাম রাখা হয় কেলিসিতা (আনন্দদানকারী)। আর ভাল নাম রাখা হয় এঞ্জেলা (স্বর্গীয় দূত)। ১৯৮০ সালে এঞ্জেলার বাবা আগষ্টিন গমেজ ও ১৯৯২ সালে মা ইসাবেলা মারা যান।

শিক্ষাজীবন

এঞ্জেলা গোমেজের লেখা-পড়ার হাতে খড়ি হয় তার মায়ের কাছে। শুরুতে ভর্তি হন বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের মঠবাড়ি মিশন স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে। এই স্কুল থেকে আঞ্জেলা পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ মাত্র ১২ বছর বয়সেই মঠবাড়ি ধর্মপ্রচারণা স্কুলে শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব পান এঞ্জেলা। পরবর্তীতে গ্রাম থেকে ৭/৮ কি.মি. দূর নাগরী ধর্মপ্রচারণা 'পাঞ্জুরা বোর্ডিং স্কুলে' পুরোহিত সহযোগিতায় আঞ্জেলা ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন। এই স্কুলে এঞ্জেলা এক বছর পড়েন এবং ক্লাস ফাইভে প্রথম গ্রেডে বৃত্তি পান। এরপর এঞ্জেলা ঢাকা হলিক্রস কলেজের টিচার্স ট্রেনিং এর শর্ট কোর্সে ভর্তি হন। এর পর পড়াশোনার এবং বডিং সুবিধার জন্য ভবেরপাড়া মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে আবার যশোরের সেক্রেট হার্ট স্কুলের বোর্ডিং থাকার ব্যবস্থা হয় এবং অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ এঞ্জেলা সেক্রেট হার্ট স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। কেজি, নার্সারী শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার দায়িত্ব পেয়ে এঞ্জেলা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। দিনে ক্লাশ নিয়ে রাতে মোম জ্বালিয়ে লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৮ সালে যশোর শহরের সেবাসংঘ স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭২ সালে যশোর মহিলা কলেজে থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। নানা ধরনের প্রতিকূল আর অসহায় অবস্থাতেই তিনি ১৯৭৪ সালে যশোর মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

কর্মজীবন

মাত্র ১২ বছর বয়সে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এঞ্জেলা গোমেজের কমর্জীবন শুরু। গাজীপুরের মঠবাড়ি মিশন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় খ্রিস্টান পুরোহিত বার্কম্যান এঞ্জেলাকে একই স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করেন। মাসে ১০ টাকা বেতনে তার দায়িত্ব ছিল শিশুদেরকে পড়ানো। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হবার পর এঞ্জেলা যশোর সেক্রেট হার্ট মিশন স্কুলে খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৫ সাল পযর্ন্ত তিনি এ স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮১ সালে তার সংগঠন 'বাঁচতে শেখা'র যাত্রা শুরু হয়। সমাজকল্যাণ অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ফাতেমা হাসপাতালের সামনে ঘর ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে জোরেসোরে কাজে মন দেন। হস্তশিল্পের কাজের মান উন্নয়নের জন্যে কাশিমপুর, পাগলাদহ, নূরপুর, খোলাডাঙায় ঘর নির্মাণ করেন৷ গ্রামের শত শত মহিলাকে তার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে থাকেন। নারী শিক্ষা, মানবাধিকার, হস্তশিল্প, নারী স্বার্থ ছাড়াও নারীর সাবলম্বীর জন্যে এঞ্জেলা ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেন৷ হাজা-মজা পুকুরে মাছ চাষ, কৃষি কাজ করে তিনি বেশ কিছু গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটান৷ এক সময় শুরু করেন 'ক্ষুদ্রঋণ' প্রকল্পের কাজ। ১৯৮৫ সালের দিকে ভাড়া বাড়ি থেকে তাকে বিতারিত হতে হয়। ১৯৮৬ সালে আরবপুর এলাকায় স্বল্পমূল্যে (বতর্মানে বাঁচতে শেখার প্রধান কার্যালয়) ১৭ বিঘা জমিসহ একটি পরিত্যক্ত ভবন কিস্তিতে ক্রয় করেন। নানা কাজের মাধ্যমে এখানকার জঙ্গল কেটে কৃষি কাজ শুরু করেন এঞ্জেলা গোমেজ ও তার দল। মজা পুকুর সংস্কার করে মাছ ছাড়েন। হস্তশিল্পের কাজ, আঁচার তৈরি, হাঁস-মুরগী গরু-ছাগলের খামার করে এঞ্জেলা আরবপুরের জমিটিকে একটি সমন্বিত কৃষি খামারে পরিণত করেন। ১৯৯২ সালের দিকে নরওয়ে এ্যাম্বাসীর আর্থিক সহায়তায় 'বাঁচতে শেখা'র প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হয়৷ অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, কাশরুম, একশোজন প্রশিক্ষণার্থী থাকার ঘর, লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয় অত্যন্ত স্বল্প ব্যায়ে। বর্তমানে এঞ্জেলা গোমেজ এখান থেকেই ১০ লাখ উপকারীভোগীর জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন৷ তিনিই 'বাঁচতে শেখা'র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। মূলত আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে দক্ষতা বৃদ্ধি, কুটিরশিল্প, শস্য উৎপাদন, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ, মৌমাছি পালন, সিল্ক উৎপাদন প্রভৃতি কাজে ব্যাপৃত রেখেছেন ৪০০ গ্রামের নারীদের।[3]

বাঁচতে শেখার বিভিন্ন প্রকল্প

  • শিক্ষা প্রকল্প
  • মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা
  • মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প
  • মহিলাদের ভোট শিক্ষা প্রকল্প
  • হস্তশিল্প
  • কৃষি
  • হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন
  • মৌ চাষ
  • রেশম চাষ
  • মত্‍স্য চাষ প্রকল্প
  • ঘূর্ণায়মান ঋণ
  • রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনী

প্রকাশনা

  • ছোটদের সহজভাবে বাঁচতে শেখা
  • বড়দের কাজ করে বাঁচতে শেখা
  • ছোটদের সহজভাবে বাঁচতে শেখা কবিতা গুচ্ছ
  • নারী জাগরণের গান কবিতা ও শ্লোগান
  • সচেতনভাবে বাঁচতে শেখা
  • ছোট্ট মনি

পুরস্কার

তথ্যসূত্র

  1. যশোর জেলা ওয়েবসাইট
  2. ইনফো ডট কম
  3. দৈনিক প্রথম আলো
  4. দৈনিক ইত্তেফাক

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.