ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (জন্ম: ৭ নভেম্বর ১৯৭১) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী।[2][3] ১৯৯২ সাল থেকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ঋতুপর্ণা অভিনয় করেছেন একাধিক বাংলাদেশীহিন্দি চলচ্চিত্রেও[2] বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক – উভয় ধারার সিনেমাতে তার সুদক্ষ অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে একাধিক পুরস্কার। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও লেখালিখির সঙ্গেও জড়িত ঋতুপর্ণা।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
জন্ম
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

(1971-11-07) ৭ নভেম্বর ১৯৭১[1]
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পেশাচলচ্চিত্র অভিনেত্রী
কার্যকাল১৯৮৯–বর্তমান
উচ্চতা১.৬৫ মিটার
দাম্পত্য সঙ্গীসঞ্জয় চক্রবর্তী (১৯৯৯–বর্তমান)
সন্তানঅঙ্কন (পুত্র) রিসোনা নিয়া (মেয়ে)
পিতা-মাতাপ্রবির সেনগুপ্ত (পিতা) এবং নন্দিতা সেনগুপ্ত (মাতা)
ওয়েবসাইটঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

বাংলা ধারাবাহিক সাদা পায়রা (১৯৮৯) দিয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয় জীবনের শুরু।[4][5] তার অভিনীত প্রথম ছবি প্রভাত রায়ের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা ছবি শ্বেতপাথরের থালা (১৯৯২)।[6][7][8] তার অভিনীত প্রথম বাংলাদেশী ছবি স্বামী কেন আসামী (১৯৯৭)।[9]

প্রাথমিক জীবন

ঋতুপর্ণার জন্ম কলকাতায়। খুব অল্পবয়সেই চিত্রাংশু নামে একটি শিল্পবিদ্যালয় থেকে অঙ্কন, নৃত্য ও হাতের কাজে দক্ষতা অর্জন করেন।[8] মাউন্ট কারমেল স্কুলে তার পড়াশোনা। পরে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে অভিনয় পেশায় মনোযোগ দেবার জন্য পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। [10]

কর্মজীবন

বাংলা ধারাবাহিক সাদা পায়রা (১৯৮৯) দিয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয় জীবনের শুরু।[5] তার অভিনীত প্রথম ছবি শ্বেতপাথরের থালা মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে।[7] ছবিতে তিনি অভিনয় করেন সহ-অভিনেত্রীর চরিত্রে। তিনি তখন আধুনিক ইতিহাসে স্পেশালাইজেশনসহ এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রভাত রায়ের এই ছবিটি সেইবছর শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। সুজন সখী, নাগপঞ্চমী, মনের মানুষসংসার সংগ্রাম প্রভৃতি তার প্রথম দিকের ছবিগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে মোহিনী নামে একটি টেলিফিল্মও করেন। এছাড়াও তিসরা কৌন নামে অপর এক হিন্দি ছবিতেও তিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন (১৯৯৭), উৎসব (২০০০), অপর্ণা সেনের পারমিতার একদিন (২০০০) ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২) ছবিতে তার অভিনয় বিদগ্ধ মহলের প্রশংসা অর্জন করে। দহন ছবিতে ধর্ষণের শিকার এক নববিবাহিতা রোমিতা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে অর্জন করেন জাতীয় পুরস্কার।

বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করে সেদেশেও সমান জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেছেন ঋতুপর্ণা। তবে সাগরিকা চলচিত্রর জন্য ব্যপক সমালোচনার মধ্য পরেন। এই চলচিত্রর জন্য সবাই তাকে অনেক খারাপ চোখে দেখে। তিনি ওড়িশিমণিপুরী নৃত্যে পারঙ্গমা। তার নিজের ভাবনা আজ ও কাল নামে একটি নাচের দলও আছে। এই দল রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা, মায়ার খেলা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও অন্যান্য আধুনিক ভাবনার নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে খ্যাতিলাভ করেছে। এছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন প্রিজম এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও।[11]

আনন্দলোকবাংলাদেশের হৃদয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলামও লিখেছেন।[8]

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৯৯ সালে বাল্যপ্রেমিক সঞ্জয় চক্রবর্তীকে বিবাহ করেন।[12] সঞ্জয় মবিঅ্যাপস নামে কলকাতার একটি সিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা। থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থেও ঋতুপর্ণা নিরলস সহযোগিতা করে থাকেন। ঋতুপর্ণা আউটডোর খেলাধূলার সঙ্গেও যুক্ত। অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • ভারত নির্মাণ পুরস্কার (১৯৯৫)
  • কলাকার পুরস্কার (১৯৯৬)
  • কাজী নজরুল ইসলাম জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কার (১৯৯৬) – ল সোসাইটি অব ক্যালকাটা প্রদত্ত
  • শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য কমল (১৯৯৮, সালে দহন ছবিতে সহ-অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারের সঙ্গে) – ৪২তম ভারতীয় জাতীয় চলচ্চত্র উৎসব
  • উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – দহন ছবির জন্য
  • উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) – আত্মীয়স্বজন ছবির জন্য
  • বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) পুরস্কার
  • বিএফজেএ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০৬) পুরস্কার – দ্বিতীয় বসন্ত ছবির জন্য

চলচ্চিত্র তালিকা

বছর চলচ্চিত্র চরিত্র পরিচালক সহ-শিল্পী ভাষা টীকা
১৯৯২শ্বেতপাথরের থালাবাংলা[7]
১৯৯৫মোহিনীবাংলা
১৯৯৭দহন
২০০০পারমিতার একদিন
২০০০উৎসব
২০০০কালি টোপি লাল রুমাল
২০০২সবসে বড়কর কৌন
২০০২মন্দ মেয়ের উপাখ্যান
২০০৩ব্যতিক্রমী
২০০৩আলো
২০০৪কালো চিতা
২০০৫নিশিযাপন
২০০৫ইউএনএনএস
২০০৫ম্যায়, মেরি পত্নী আউর ওহ্
২০০৬তপস্যা
২০০৬অনুরণন
২০০৬অন্ধকারের শব্দ
২০০৭গৌরী
২০০৭চাঁদের বাড়ি
২০০৮সির্ফ লাইফ লুকস গ্রিনার অন দ্য আদার সাইড
২০০৮মোন অ্যামোর : শেষের কবিতা রিভিজিটেড
২০০৮ম্যায় ওসামা
২০০৮আয়নাতে
২০০৮চতুরঙ্গ
২০০৯ফেরা
২০০৯লাভ খিচদি
২০০৯এস আর কে
২০০৯ফক্স
২০০৯তৃষ্ণা
২০০৯ডো নট ডিস্টার্ব
২০১০মিত্তাল vs মিত্তাল
২০১০ম্যায় ওসামা
২০১০ফুটপাথ
২০১০মহানগর @কলকাতা
২০১০রেহমত আলী
২০১০আরোহণ
২০১০দোনো ইয়া...না জানে কিউ
২০১০..এন্ড ওয়ান্স এ্যাগেইন
২০১০লাইফ এক্সপ্রেস
২০১০বুম বুম বলে
২০১০বেদিনি
২০১১দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি
২০১১নেকলেস
২০১১আগুন পাখি
২০১১জিও কাকাবাংলা
২০১২চারুলতাবাংলা
২০১২আলাপ
২০১২মুক্তধারা
২০১২তিন কন্যা
২০১৩কাঠভেদু
২০১৩মিসেস সেন
২০১৩অলীক সুখ
২০১৩ভিলিয়ান
২০১৩চালাপর
২০১৩এ পলিটিক্যাল মার্ডার
২০১৪পারাপার
২০১৪টান
২০১৫বেলা শেষেবাংলা
২০১৫রাজকাহিনীবাংলা
২০১৬তদন্ত
২০১৬প্রাক্তনবাংলা
২০১৬রাতের রজনী গন্ধা
সিঁদুর খেলা
আমি সেই মেয়ে
মধুমালতী
বিষ্ণু নারায়ণ
গানে ভুবন ভরিয়ে দেবো
স্বামী কেন আসামীবাংলা
রাঙা বউ
মিস মৈত্রেয়ী
তোমার আমার প্রেম
দেশ দরদী
সিঁদুরের অধিকার
দ্বিতীয় বসন্ত
শেষ চিঠি
তিসরা কৌন
চক্রব্যুহ

পাদটীকা

  1. "Rituparna Sengupta"। Whole Celebs Fact। ২০১৬-০৯-০৯। ২০১৬-০৯-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৩
  2. "Rituparna Sengupta movies, filmography, biography and songs - Cinestaan.com"Cinestaan। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  3. "ঋতুবদল"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  4. "Bold & beautiful"The New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  5. "Rituparna Sengupta biography, movies, photos, videos, trivia, fan club, awards"web.archive.org। ২০১১-০৬-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  6. "Directorate of Film Festival"web.archive.org। ২০১৬-০৬-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  7. "Shet Patharer Thala (1992)"Cinestaan। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  8. "Rediff On The NeT, Movies: An interview with Rituparna Sengupta"www.rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  9. "ঢাকাই সিনেমায় অশ্লীলতার জন্য দায়ি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত"আমাদের সময় .কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০
  10. "Rituparna Sengupta's official website"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১৭
  11. De, Hemchhaya। "Calling the Shots"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১৭
  12. "আমার সারাটা দিন..."anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.