সূরা আবাসা

সূরা আবাসা‌ (আরবি ভাষায়: عبس‎) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৮০ তম সূরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৪২; তবে এতে কোন রূকু তথা অনুচ্ছেদ নেই। সূরা আবাসা‌ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

আবাসা
عبس
শ্রেণীমাক্কী সূরা
নামের অর্থতিনি ভ্রুকুটি করলেন
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম৮০
আয়াতের সংখ্যা৪২
পারার ক্রম৩০
রুকুর সংখ্যানেই
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
শব্দের সংখ্যা১৩৩
অক্ষরের সংখ্যা৫৩৮
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা আন-নাযিয়াত
পরবর্তী সূরা →সূরা আত-তাকভীর
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

নামকরণ

এই সূরাটির প্রথম শব্দ عَبَسَ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরাটি عَبَسَ (‘আবাসা‌’) শব্দটি দ্বারা শুরু হয়েছে এটি সেই সূরা।[1]

নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান

শানে নুযূল

(৩৩-৪২)।

শানে নুযূল :

মা আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, অত্র সূরাটি অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম সম্পর্কে (মক্কায়) নাযিল হয়। তিনি কোন একটি বিষয় জানার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক মুশরিক নেতার সাথে কথা বলছিলেন। এভাবে কথার মধ্যে কথা বলায় (অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে উম্মে মাকতূম পীড়াপীড়ি করায়) রাসূল (ছাঃ) বিরক্ত হন এবং তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ঐ নেতার প্রতি মনোনিবেশ করেন, যাতে তিনি হেদায়াত প্রাপ্ত হন। তখন অত্র আয়াতসমূহ নাযিল হয়।[1]

উল্লেখ্য যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমের কারণে তিরস্কারমূলক এই স্মরণীয় আয়াতগুলি নাযিল হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে খুবই সমাদর করতেন।[2] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যুদ্ধে গমনকালে তাকে প্রায়ই মদীনার প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে যেতেন। জীবনীকারগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বদর, ওহোদ, হামরাউল আসাদ ও বিদায় হজ্জ সহ মোট ১৩ বার মদীনা ত্যাগকালে তাকে মদীনার দায়িত্ব দিয়ে যান।[3] বেলাল তাহাজ্জুদ ও সাহারীর আযান দিতেন এবং তিনি ফজরের আযান দিতেন।[4] মূলতঃ এ সবই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হ’তে তাকে বিশেষ মর্যাদা দানের ফল। আর এই মর্যাদা দানের কারণ ছিল তার উপলক্ষে সূরার প্রথম আয়াতগুলি নাযিল হওয়া। নিঃসন্দেহে এটি ছিল অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। যতদিন দুনিয়া থাকবে ও কুরআনের পাঠক থাকবে, ততদিন মানুষ অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমের নাম স্মরণ করবে। এই সৌভাগ্য হযরত আবুবকর (তওবা ৯/৪০), আয়েশা (নূর ২৪/১১-২৬) ও যায়েদ বিন হারেছাহ (আহযাব ৩৩/৩৭) ব্যতীত আর কারো হয়নি।

বিষয়বস্তুর বিবরণ

আয়াত সমূহ

عَبَسَ وَتَوَلَّى

তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

أَن جَاءهُ الْأَعْمَى

কারণ, তাঁর কাছে এক অন্ধ আগমন করল।

وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى

আপনি কি জানেন, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হত,

أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنفَعَهُ الذِّكْرَى

অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশ তার উপকার হত।

أَمَّا مَنِ اسْتَغْنَى

পরন্তু যে বেপরোয়া,

فَأَنتَ لَهُ تَصَدَّى

আপনি তার চিন্তায় মশগুল।

وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّى

সে শুদ্ধ না হলে আপনার কোন দোষ নেই।

وَأَمَّا مَن جَاءكَ يَسْعَى

যে আপনার কাছে দৌড়ে আসলো

وَهُوَ يَخْشَى

এমতাবস্থায় যে, সে ভয় করে,

فَأَنتَ عَنْهُ تَلَهَّى

আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন।

كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ

কখনও এরূপ করবেন না, এটা উপদেশবানী।

فَمَن شَاء ذَكَرَهُ

অতএব, যে ইচ্ছা করবে, সে একে গ্রহণ করবে।

فِي صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ

এটা লিখিত আছে সম্মানিত,

مَّرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ

উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে,

بِأَيْدِي سَفَرَةٍ

লিপিকারের হস্তে,

كِرَامٍ بَرَرَةٍ

যারা মহৎ, পূত চরিত্র।

قُتِلَ الْإِنسَانُ مَا أَكْفَرَهُ

মানুষ ধ্বংস হোক, সে কত অকৃতজ্ঞ!

مِنْ أَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهُ

তিনি তাকে কি বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?

مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ

শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।

ثُمَّ السَّبِيلَ يَسَّرَهُ

অতঃপর তার পথ সহজ করেছেন,

ثُمَّ أَمَاتَهُ فَأَقْبَرَهُ

অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান ও কবরস্থ করেন তাকে।

ثُمَّ إِذَا شَاء أَنشَرَهُ

এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।

كَلَّا لَمَّا يَقْضِ مَا أَمَرَهُ

সে কখনও কৃতজ্ঞ হয়নি, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে তা পূর্ণ করেনি।

فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ إِلَى طَعَامِهِ

মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক,

أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاء صَبًّا

আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,

ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا

এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি,

فَأَنبَتْنَا فِيهَا حَبًّا

অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য,

وَعِنَبًا وَقَضْبًا

আঙ্গুর, শাক-সব্জি,

وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا

যয়তুন, খর্জূর,

وَحَدَائِقَ غُلْبًا

ঘন উদ্যান,

وَفَاكِهَةً وَأَبًّا

ফল এবং ঘাস

مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ

তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে।

فَإِذَا جَاءتِ الصَّاخَّةُ

অতঃপর যেদিন কর্ণবিদারক নাদ আসবে,

يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ

সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে,

وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ

তার মাতা, তার পিতা,

وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ

তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।

لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ

সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ

অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল,

ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ

সহাস্য ও প্রফুল্ল।

وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ

এবং অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ধুলি ধূসরিত।

تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ

তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে।

أُوْلَئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ

তারাই কাফের পাপিষ্ঠের দল।

তথ্যসূত্র

  1. "সূরার নামকরণ"www.banglatafheem.comতাফহীমুল কোরআন, ২০ অক্টোবর ২০১০। ১১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ : ২৭ জুলাই ২০১৫ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.