আফগানিস্তান যুদ্ধ (১৯৭৮–বর্তমান)

আফগানিস্তান যুদ্ধ ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল সাউর বিপ্লব নামে পরিচিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পিডিপিএ কর্তৃক ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয়। ক্ষমতা লাভের পরপরই আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চলে পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে চলমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলে আফগান যুদ্ধ (১৯৭৯–১৯৮৯) শুরু হয়। মুজাহিদিন নামে পরিচিত প্রতিরোধ যোদ্ধারা সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিছু মুজাহিদ দল পাকিস্তানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসৌদি আরব থেকে সহায়তা লাভ করে। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। তিন বছর পর ১৯৯২ সালে কাবুলের পতনের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত-সমর্থিত আফগান কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে।

আফগানিস্তান যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: স্নায়ুযুদ্ধ (১৯৭৮–১৯৯২) এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (২০০১–বর্তমান)

আফগানিস্তানের মানচিত্র
তারিখ২৭ এপ্রিল ১৯৭৮ – বর্তমান
অবস্থানআফগানিস্তান
ফলাফল

চলমান

  • কমিউনিস্টপন্থী অভ্যুত্থান (১৯৭৮)
  • পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
  • সোভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপ (১৯৭৯)
  • সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ
  • সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার (১৯৮৯)
  • পিডিপিএ সরকারের পতন (১৯৯২)
  • আফগানিস্তান ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা (১৯৯২)
  • বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘর্ষ
  • তালিবানদের নেতৃত্বে আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠা (১৯৯৬)
  • তালিবানবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধ
  • ন্যাটোর আফগানিস্তান আক্রমণ (২০০১)
  • তালিবান সরকারের পতন এবং আফগানিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা (২০০১)
  • তালিবান বিদ্রোহ
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
১৪,০৫,১১১–২০,৮৪,৪৬৮[1][2][3][4][5]

১৯৯২ সালে আফগান রাজনৈতিক দলগুলো পেশোয়ারে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আফগানিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিযুক্ত করে। আফগান নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এই চুক্তির বিরোধী ছিলেন এবং তিনি পাকিস্তানি সহায়তায় কাবুলের ওপর বোমাবর্ষণ আরম্ভ করেন। তাছাড়া কাবুলের কিয়দংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকারী তিনটি মিলিশিয়া বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পাকিস্তান, ইরান, সৌদি আরব, ভারতউজবেকিস্তানের মতো স্থানীয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যেকেই ভূকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব মিলিশিয়ার কোনো একটিকে সমর্থন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় কাবুল এবং আরো কিছু বড় শহরে তীব্র যুদ্ধ হলেও সোভিয়েত ও কমিউনিস্ট আফগান সরকারের প্রচণ্ড বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত গ্রামাঞ্চল এসময় অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে। ১৯৯৫ সালের প্রথমদিকে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমদ শাহ মাসুদ কাবুলে এসব মিলিশিয়ার অধিকাংশকেই পরাজিত করতে সক্ষম হন এবং রাজধানীতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। এসময় তালিবানরা একটি নতুন শক্তি হিসেবে কাবুলকে হুমকির সম্মুখীন করে।

১৯৯৪ সালে তালিবান প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহারে একটি নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত অনেকগুলো মধ্যাঞ্চলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ দখল করে নেয়। ১৯৯৫ সালের প্রথমদিকে তারা কাবুলের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের আক্রমণ চালায়, কিন্তু মাসুদের সৈন্যদের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং অনেক বিশ্লেষক এটিকে সংগঠনটির সমাপ্তি হিসেবে ধারণা করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের মধ্যে তারা পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর বিপুল সহায়তা এবং সৌদি আরবের আর্থিক সহযোগিতায় পুনর্গঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে তারা কাবুলে ক্ষমতা দখল করে এবং আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠা করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক সহায়তা এবং হাজার হাজার আরবমধ্য এশীয় আল কায়েদা যোদ্ধার সমর্থনপুষ্ট তালিবান আমিরাতের বিরুদ্ধে একটি সামরিক-রাজনৈতিক প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে মাসুদের নেতৃত্বে সংযুক্ত ইসলামি ফ্রন্ট (নর্দার্ন অ্যালায়েন্স) গঠিত হয়।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর ন্যাটো আফগানিস্তান আক্রমণ করে। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আল কায়েদাকে পরাজিত করা, তালিবানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এসব উদ্দেশ্যের কিছু পূরণ হলেও আফগানিস্তানে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপ একটি প্রলম্বিত যুদ্ধরূপে এখন পর্যন্ত চলমান।

কমিউনিজমের উত্থান ও পতন

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Russia's War in Afghanistan। Books.google.co.nz। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৪
  2. War, Politics and Society in Afghanistan, 1978-1992। Books.google.co.nz। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৪
  3. "Afghanistan : Demographic Consequences of War : 1978-1987" (PDF)। Nonel.pu.ru। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৪
  4. "Life under Taliban cuts two ways"The Christian Science Monitor। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৪
  5. "Human Costs of War: Direct War Death in Afghanistan, Iraq, and Pakistan : October 2001 - February 2013" (PDF)। Costsofwar.org। ৩০ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৪
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.