রাগমোচন
রাগমোচন (গ্রীক οργασμός orgasmos থেকে, অর্থ "উত্তেজনা" বা "উচ্ছ্বাস") বলতে বোঝানো হয় যৌন প্রতিক্রিয়া চক্রে পুঞ্জীভূত যৌন উত্তেজনার আকস্মিক ভারমুক্তি। এসময় শ্রোণী অঞ্চলের মাংসপেশির ছন্দোময় সংকোচনের মাধ্যমে দেহে চরম যৌনসুখ অনুভূত হয়।[1][2][3] নারী এবং পুরুষ উভয়েরই রাগমোচন ঘটে থাকে। রাগমোচন মানবদেহের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাগমোচনের সময় মানবদেহে আরও বিবিধ ক্রিয়া ঘটতে পারে যেমন: শরীরের কিছু জায়গায় মাংসপেশির অনৈচ্ছিক সংকোচন, সাধারণ সুখকর অনুভূতি, বারবার শরীরের নড়াচড়া বা তড়িৎ ক্রমিক গতি এবং মুখে নানান ধরনের শব্দের উৎপত্তি।[2] রাগমোচনের পরবর্তি সময়টি (একে রিফ্র্যাক্টরি পিরিয়ডও বলা হয়) একটি নিস্তেজ পরিস্থিতি যার মূল কারণ হল অক্সিটোসিন, প্রোল্যাক্টীন এবং এন্ডোরফিনস নামক নিউরোহরমোনের নিঃসরণ।[4]

রাগমোচন যেকোন ধরনের শারীরিক যৌন উদ্দীপনার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে, যেমন পুরুষের ক্ষেত্রে শিশ্ন (এক্ষত্রে বীর্যপাত ঘটে থাকে) এবং নারীর ক্ষেত্রে ভগাঙ্কুরের উদ্দীপনার মাধ্যমে।[2][5][6] এই যৌন উত্তেজনা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নিজে নিজে লাভ করা হতে পারে অথবা কোন সঙ্গীর সাহায্য অন্তর্ভেদী অথবা অ-অন্তর্ভেদী প্রক্রিয়ায় অথবা অন্য যেকোন যৌন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে হতে পারে।
রাগমোচনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ব্যাপক। যৌনক্রিয়ায় বহু মানসিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন প্রোল্যাকটিন নিঃসরনের ফলে নিস্তেজ অবস্থার সৃষ্টি হওয়া, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সাময়িক পরিবর্তন যেমন সেরেব্রাল কর্টেক্স এর একটি বড় অংশের মেটাবলিক বা শ্বসনিক কার্যক্রমের অস্থায়ী হ্রাস যেখানে মস্তিষ্কের লিম্বিক অঞ্চলে মেটাবলিক কার্যক্রমের কোন পরিবর্তন ঘটে না বা বৃদ্ধি পায়।[7] রাগমোচন বিষয়ক যৌনসমস্যার পরিধিও বড়্, যেমন এনরগাজমিয়া। এগুলো রাগমোচনের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে, যেমন রাগমোচন এবং এর পৌনঃপুনিকতা যৌন সম্পর্কে সন্তুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বা অপ্রাসঙ্গিক এমন বিশ্বাস[8] এবং রাগমোচন বিষয়ক বিষয়ক জৈববিজ্ঞানিক এবং বিবর্তনগত তত্ত্বসমূহ।[9][10]
মানুষ ভিন্ন অন্যান্য প্রাণীদের রাগমোচন বিষয়ে মানুষের রাগমোচনের তুলনায় অনেক কম গবেষণা হয়, কিন্তু এই বিষয়ে গবেষণা চলছে।
সংজ্ঞা
চিকিৎসা ক্ষেত্রে, রাগমোচনকে সাধারণত যৌনক্রিয়ায় মাংসপেশির সংকোচন এবং সেই সাথে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ পরিবর্তনের বিশেষ প্যাটার্ন এবং বিশেষ শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং গভীরতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[1] একে সেক্সুয়াল রেসপন্স সাইকেল বা যৌন প্রতিক্রিয়া চক্রে পুঞ্জীভূত যৌন উত্তেজনার আকস্মিক ভারমুক্তি হিসেবেও বোঝানো হয়, যখন শ্রোণী অঞ্চলের মাংসপেশির ছন্দোময় সংকোচনের মাধ্যমে দেহে চরম যৌনসুখ অনুভূত হয়।[1][2][3] যাই হোক, রাগমোচনের সংজ্ঞা বিভিন্ন রকমের হয়। কিভাবে রাগমোচনকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এই বিষয়ে কোন বিধান অনুপস্থিত।[11] ক্লিনিকাল সাইকোলজি রিভিউ জার্নালে রাগমোচনের অন্তত ২৬টি সংজ্ঞা উল্লেখ আছে।[12]
কিছু নির্দিষ্ট রকমের যৌন অনুভূতিকে রাগমোচন এর শ্রেণীতে ফেলা হবে কিনা তা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। এই নির্দিষ্ট রকমের যৌন অনুভূতির মধ্যে একটি হল কেবল মাত্র জি-স্পটের (গ্রাফেনবার্গ স্পট) স্টিমুলেশনের ফলে নারীদের রাগমোচন এবং কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত দেখানো বর্ধিত অথবা অনবরত রাগমোচন।[13] এই প্রশ্নটি রাগমোচনের ক্লিনিকাল ডেফিনিশন বা চিকিৎসাবিষয়ক সংজ্ঞাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাগমোচনকে এরকম দৃষ্টিতে দেখা কেবলই ফিজিওলজিকাল বা শারীরবিদ্যাগত, যেখানে রাগমোচনের সাইকোলজিকাল বা মনস্তাত্ত্বিক, এন্ডোক্রাইনোলজিকাল এবং নিউরোলজিকাল বা স্নায়ুবিজ্ঞানগত সংজ্ঞাও রয়েছে।[11][12][14] এসব এবং অনুরূপ বিতর্কিত যৌন অনুভূতির ক্ষেত্রে, প্রাপ্ত অনুভূতিগুলো ব্যক্তিবাচক বা ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভরশীল এবং এক্ষেত্রে রাগমোচনের অনৈচ্ছিক সংকোচন বৈশিষ্ট্য যে থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু, উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই এই অনুভূতি প্রচণ্ড সন্তোষজনক এবং প্রায়ই সমস্ত শরীরেই অনুভূত হয়। এর ফলে একটি মানষিক অবস্থার সৃষ্টি হয় যাকে প্রায়ই দেহাতিরিক্ত বা অতীন্দ্রীয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তার উপর ভ্যাসোকনজেশন (শরীরে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং কোন স্থানে রক্তচাপের বৃদ্ধির ফলে শরীরের টিস্যুর ফুলে যাওয়া) এবং প্রচণ্ড সন্তোষ নিয়ে এই অনুভূতিগুলো পূর্ণ-সংকোচনশীল রাগমোচনের সাথে তুলনীয়। যেমন, আধুনিক গবেষণায় পাওয়া গেছে বীp এবং পুরুষের রাগমোচনের মধ্যে পার্থক্য আছে।[2][12] তাই এই অনুভূতিগুলোকে রাগমোচন হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হবে কিনা এব্যাপারে উভয়পক্ষেরই বিভিন্ন মতামত রয়েছে।[14]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- Masters, William H.; Reproductive Biology Research Foundation (U.S.) (১৯৬৬)। Human Sexual Response। Little, Brown। পৃষ্ঠা 366। আইএসবিএন 0-316-54987-8। Authors list-এ
|প্রথমাংশ2=
এর|শেষাংশ2=
নেই (সাহায্য) - See pages 133–135 for orgasm information, and page 76 for G-spot and vaginal nerve ending information. Rosenthal, Martha (২০১২)। Human Sexuality: From Cells to Society। Cengage Learning। আইএসবিএন 0618755713।
- "Orgasm"। Health.discovery.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১০।
- Exton MS, Krüger TH, Koch M; ও অন্যান্য (এপ্রিল ২০০১)। "Coitus-induced orgasm stimulates prolactin secretion in healthy subjects"। Psychoneuroendocrinology। 26 (3): 287–94। doi:10.1016/S0306-4530(00)00053-6। PMID 11166491।
- Wayne Weiten, Dana S. Dunn, Elizabeth Yost Hammer (২০১১)। Psychology Applied to Modern Life: Adjustment in the 21st Century। Cengage Learning। পৃষ্ঠা 386। আইএসবিএন 1-111-18663-4। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১২।
- O'Connell HE, Sanjeevan KV, Hutson JM (অক্টোবর ২০০৫)। "Anatomy of the clitoris"। The Journal of Urology। 174 (4 Pt 1): 1189–95। doi:10.1097/01.ju.0000173639.38898.cd। PMID 16145367। Time for rethink on the clitoris - lay summary
|layurl=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) – BBC News (১১ জুন ২০০৬)। - Georgiadis JR, Reinders AA, Paans AM, Renken R, Kortekaas R (অক্টোবর ২০০৯)। "Men versus women on sexual brain function: prominent differences during tactile genital stimulation, but not during orgasm"। Human Brain Mapping। 30 (10): 3089–101। doi:10.1002/hbm.20733। PMID 19219848।
- ""Frequently Asked Sexuality Questions to the Kinsey Institute: Orgasm""। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭।
- The Mating Mind: How Sexual Choice Shaped the Evolution of Human Nature। Random House Digital। ২১ ডিসেম্বর, ২০১১। পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা ২৩৮–২৩৯। আইএসবিএন 0307813746। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Wallen K, Lloyd EA.; Lloyd (মে ২০১১)। "Female Sexual Arousal: Genital Anatomy and Orgasm in Intercourse"। Hormones and Behavior। 59 (5): 780–92। doi:10.1016/j.yhbeh.2010.12.004। PMID 21195073। পিএমসি 3894744
। - Levine, R.J (২০০৪)। "An orgasm is... who defines what an orgasm is?"। exual and Relationship Therapy। 19: 101–107। doi:10.1016/j.yhbeh.2010.12.004।
- Mah, K.; Binik, Y. M. (আগস্ট ২০০১)। "The nature of human orgasm: a critical review of major trends"। Clinical Psychology Review। 21 (6): 823–56। doi:10.1016/S0272-7358(00)00069-6। PMID 11497209।
- Schwartz, Bob (মে ১৯৯২)। The One Hour Orgasm: A New Approach to Achieving Maximum Sexual Pleasure। Breakthru Publishing। আইএসবিএন 0-942540-07-7।
- Mah, K.; Binik, Y. M. (মে ২০০২)। "Do all orgasms feel alike? Evaluating a two-dimensional model of the orgasm experience across gender and sexual context"। Journal of Sex Research। 39 (2): 104–13। doi:10.1080/00224490209552129। PMID 12476242।