আলু

আলু বহুল প্রচলিত উদ্ভিজ্জ্জ খাদ্য। এটি কন্দজাতীয় (tuber) এক প্রকারের সবজি, যা মাটির নিচে জন্মে। এর আদি উৎস ভারত, এশিয়া মহাদেশ, সেখান থেকে ১৬শ শতকে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।[1] উচ্চ পুষ্টিমান এবং সহজে ফলানো ও সংরক্ষণ করা যায় বলে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রচলিত সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্যশস্য, এর আগে রয়েছে যথাক্রমে ভুট্টা, গম এবং চাল[2]

আলু
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণী: ম্যাগ্নোলিসিডা
উপশ্রেণী: অ্যাস্টেরিডা
বর্গ: সোলানালেস
পরিবার: সোলানাসিয়া
গণ: সোলানাম
প্রজাতি: এস. টিউবারোসাম
দ্বিপদী নাম
Solanum tuberosum (সোলানাম টিউবারোসাম)
L.
প্রতিশব্দ
  • Solanum andigenum Juz. & Bukasov
  • Solanum apurimacense Vargas
  • Solanum aquinas Bukasov
  • Solanum chiloense Berthault
  • Solanum chilotanum Hawkes
  • Solanum cultum Berthault
  • Solanum diemii Brücher
  • Solanum estradae L.E. López
  • Solanum fonckii Phil.
  • Solanum herrerae Juz.
  • Solanum kesselbrenneri Juz. & Bukasov
  • Solanum leptostigma Juz. & Buk.
  • Solanum molinae Juz.
  • Solanum oceanicum Brücher
  • Solanum ochoanum Lechn.
  • Solanum sanmartiniense Brucher
  • Solanum subandigena Hawkes
  • Solanum tascalense Brucher
  • Solanum zykinii Lechn.

পৃথিবীর খাদ্য হিসেবে সর্বপ্রথম আলুর নির্দশন ভারতের বাংলায় দেখা যায়। পালযুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে বারাহী কন্দের উল্লেখ আছে। এই বারাহী কন্দ হল উচ্চমানের আলু, রতিকান্ত্র ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন "প্রাচীন বাংলার শিলা ও তাম্রলিপিতে সমাজ ও সংস্কৃতি" বইটিতে।

পুষ্টি ও গুণাগুণ

আলু একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার।প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে শর্করা আছে ১৯ গ্রাম, খাবার আঁশ ২.২ গ্রাম, উদ্ভিদ প্রোটিন ২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫২ গ্রাম যার মধ্যে পটাশিয়াম লবণই ০.৪২ গ্রাম, এবং ভিটামিন ০.০২ গ্রাম। অপরদিকে ১০০ গ্রাম চালে ৮০ গ্রাম শর্করা, খাবার আঁশ ১.৩ গ্রাম, উদ্ভিজ্জ্জ প্রোটিন ৭.১৩ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.২৮ গ্রাম এবং ভিটামিন আছে মাত্র ০.০০২ গ্রাম।

দেহকে শক্তিশালী করতে বিশেষ করে প্লীহা আর পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে আলু বিশেষ কার্যকর। বৃক্কের কার্যক্ষমতায় ঘাটতির সমস্যায় এই উদ্ভিদ কাজে লাগে। রাতকানা রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রাণীর, বিশেষ করে খাসির কলিজার সাথে মিষ্টি আলু খাওয়াতে হয়। গ্রামে, এমন কি শহরেও আগুনে পুড়িয়ে কিছুটা পোড়া পোড়া করে মিষ্টি আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। এই পদ্ধতি সাধারণ সর্দি-কাশির উপশমে কার্যকর। আলুতে রয়েছে শর্করা, আমিষ, কলয়েড পদার্থ, ভিটামিন বি আর সি, পটাসিয়াম আর সোলানিন। গোল আলুর উপকারিতা অনেকটা মিষ্টির আলুর মতোই। তবে কিছুটা কম। এটি প্লীহা আর পাকস্থলীর দুর্বলতা দূর করার পাশাপাশি দেহের সাধারণ দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।অনেকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং আলুর চিপস খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু ফ্যাট থাকার কারণে এসব খাবারে যে শরীরের ক্ষতি হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি না। আলু সেদ্ধ করে, তরকারিতে রান্না করে কিংবা ভর্তা করে খাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের কোষের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। আলু পেটের সমস্যাও দূর করে। ত্বকের কোথাও পুড়ে গেলে কাঁচা আলু থেঁতলে পুড়ে যাওয়া জায়গায় লাগালে আরাম পাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আমাইনো এসিড, ওমেগা-থ্রিসহ নানা ধরনের ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, নিয়াসিন এবং ভিটামন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভালো উৎস এই আলু, এসব উপাদান হৃদরোগ মোকাবিলায় সহায়তা করে ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। আলু কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। আলুতে ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স ছাড়াও পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস রয়েছে, এসব উপাদান আপনার ত্বকের জন্য উপকারি।

ক্ষতিকারক দিক

আলুর ক্ষতিকারক দিক হচ্ছে - গ্যাস্ট্রিক তাই যাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে তাদের আলু পরিহার করে চলাই ভাল।

সারা বিশ্বে খাদ্য হিসাবে ভূমিকা

সারা বিশ্বে আলু উৎপাদন

জাতিসংঘ এফএও-এর রিপোর্ট মতে সারা পৃথিবীতে আলু উৎপাদন ২০১৩ সালে ছিল ৩৬৮ মিলিয়ন টন। একজন ব্যক্তি প্রতিবছর প্রায় ৩৩ কেজি আলু খায়।[3]

দেশমিলিয়ন মেট্রিকটন
 গণচীন৮৮.৯
 ভারত৪৫.৩
 রাশিয়া৩০.২
 ইউক্রেন২২.৩
 যুক্তরাষ্ট্র১৯.৮
 জার্মানি৯.৭
 বাংলাদেশ৮.৬
 ফ্রান্স
 নেদারল্যান্ডস৬.৮
 পোল্যান্ড৬.৩
পুরো দুনিয়া৩৬৮.১
আলু গাছে আলু ফুল
রাসেট আলু
আলু চাষ হচ্ছে ওয়াশিংটনে
আলুর ক্ষেত মেইন

আলু একটি বহুবর্ষজীবী টিউবেরাস ফসল যা সোলানেসিয়া গোত্রের অন্তর্গত। আসলে এর খাওয়ার উপযোগী টিউবারের কারণেই এটির আলু নামকরণ। আলুর ইংরেজি শব্দ পটেটো এসেছে স্প্যানিশ পাতাতা থেকে। রেয়াল আকাদেমিয়া এস্পানিওলা'র (স্প্যানিশ রয়েল একাডেমি) তথ্য অণুযায়ী এই স্পেনীয় শব্দটি তাইনো শব্দ বাতাতা (মিষ্টি আলু) এবং কেচুয়া শব্দ পাপা (আলু) থেকে উদ্ভূত।[4] পাতাতা বলতে প্রথমদিকে মুলত সাধারণ আলু অপেক্ষা মিষ্টি আলুকেই বেশি বোঝানো হত, যদিও এই দুই ধরনের আলুর মধ্যে বাস্তবে কোনও মিল নেই। দুই ধরনের আলুর এই নামসংকট অনেকদিন চলেছে। ষোড়শ শতাব্দীতেও ইংরেজ উদ্ভিদবিদ জন জেরার্ড যে আলুকে বোঝাতে “বাস্টার্ড পটেটো” এবং “ভার্জিনিয়া পটেটো” নামক দুইটি শব্দ ব্যবহার করেন তা এই নামবিভ্রাট থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই। কিন্তু তিনিও মিষ্টি আলুকে সাধারণ আলু বলেই অভিহিত করেন। যাইহোক, বর্তমানে আলু ও মিষ্টি আলু নিয়ে এই নামবিভ্রাট সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

আলুর উৎপত্তি ইতিহাস

আন্দেস পার্বত্যাঞ্চলের আশেপাশের এলাকা আলুর বেশ কিছু সংখ্যক প্রজাতির স্বাভাবিক উৎসস্থল। ৪০০ বছরেরও কিছু বেশি পূর্বে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে স্পেনীয়রা যখন আন্দেস পর্বত এলাকায় পৌঁছয়, তখনই তা প্রথম ইউরোপীয়দের গোচরে আসে; তাদের হাত ধরেই পরবর্তীকালে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ধান, গম এবং ভুট্টার পর আজ এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ফসল। এর নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের নাম উল্লেখ করা হলেও সম্প্রতি একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে আলুর উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ পেরু। পেরুর ইনকা সভ্যতায় চাষের জমিকে আলু বলা হতো ।সেখান থেকেই বাংলা আলু কথাটা এসেছে । যাইহোক, পেরুতে ৭০০০-১০০০০ বছরের পুরনো Solanum brevicaule complex প্রজাতির আলুর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। ১৮৪৫ সালে যদিও oomycete Phytophthora infestans, ছত্রাক দ্বারা আলুর লেট ব্লাইট রোগ দেখা যায় যা পশ্চিম আয়ারল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে, তারপরও আলুর উৎপাদন থেমে থাকে নি । বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে ৩৩ কে.জি আলু ভক্ষণ করে থাকে এবং এককভাবে চীন এবং ভারত সর্বাধিক আলু উৎপাদন করে থাকে। তবে বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলেই বর্তমানে কমবেশি আলু জন্মে।

তথ্যসূত্র

  1. "Basalt-Firth Since 1900"mocavo.com। ১৯৭২। পৃষ্ঠা 10। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫
  2. "International Year of the Potato 2008 – The potato" (PDF)। United Nations Food and Agricultural Organisation। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১১
  3. "FAOSTAT"। faostat.fao.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৫
  4. "Patata". Diccionario de la lengua española. Octubre de 2014. সংগৃহীত ৪৫ জুলাই, ২০১৫।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.