বেল ল্যাবরেটরিজ
বেল ল্যাবরেটরিজ (ইংরেজি:Bell Laboratories, সংক্ষিপ্তাকারে Bell Labs বেল ল্যাবস্ হিসেবে বেশী পরিচিত) একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
প্রাইভেট (অ্যালকাটেল-লুসেন্ট এর সাবসিডিয়ারি) | |
শিল্প | তথ্যপ্রযুক্তি |
প্রতিষ্ঠাকাল | 1928 |
সদরদপ্তর | মারে হিল, নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মূল প্রতিষ্ঠান | AT&T/Western Electric (1925-1983) AT&T (১৯৮৪-১৯৯৬) লুসেন্ট টেকনোলজিস (১৯৯৬-২০০৬) অ্যালকাটেল-লুসেন্ট (২০০৬-বর্তমান) |

ইতিহাস
মার্কিন উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন উদ্ভাবনের জন্য ১৮৮০ সালে ফরাসি সরকারের ‘ভোল্টা পুরস্কার’ লাভ করেন। এই পুরস্কারের জন্য গ্রাহাম বেল ১০ হাজার মার্কিন ডলার লাভ করেন। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটনে ‘ভোল্টা ল্যাবরেটরি’ স্থাপন করেন। ১৮৮৪ সালে ভোল্টা ল্যাবরেটরি সবচেয়ে পুরোনো টেলিফোন সেবা কোম্পানি ‘আমেরিকান বেল টেলিফোন’ স্থাপন করে। ভোল্টা ল্যাবরেটরি ১৮৮৭ সালে ‘ভোল্টা ব্যুরো’ নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯২৫ সালে ভোল্টা ব্যুরো পরিবর্তিত হয়ে ‘বেল ল্যাবরেটরি ইনকরপোরেশন’ নাম ধারণ করে। সম্মিলিতভাবে ‘ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ ও ‘আমেরিকান টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কোম্পানি’ বিশ শতকের সবচেয়ে আধুনিক এই গবেষণাগার স্থাপন করে।[1]
আবিষ্কার ও উদ্ভাবন
বেল ল্যাবরেটরি প্রথম আলোচিত হয় ১৯২৫ সালে। এ সময় বেল ল্যাবরেটরির গবেষকেরা সাধারণ মানুষের ব্যবহার-উপযোগী ফ্যাক্স মেশিন উদ্ভাবন করেন। ১৯২৬ সালে এই গবেষণাগার থেকেই প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য শব্দগ্রাহক যন্ত্র নির্মাণ করা হয়। ১৯৪০ সালে গবেষক রাসেল ওল ‘ফোটোভোল্টিক কোষ’ উদ্ভাবন করেন। ১৯৪৭ সালে বেল ল্যাবসের গবেষকেরা ট্রানজিস্টর উদ্ভাবনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমে বিপ্লব ঘটান। গবেষক জন বার্ডেন, ওয়াল্টার হাউজার ব্রাটেন ও উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড শকলে ট্রানজিস্টর উদ্ভাবনে সফলতা লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে গবেষক কাউড শ্যানোন তথ্যপ্রযুক্তির ‘ম্যাথেমেটিক্যাল থিওরি অব কমিউনিকেশনস’ নামের বিখ্যাত তত্ত্ব প্রদান করেন। ১৯৫২ সালে বেল ল্যাবসের গবেষক উইলিয়াম গার্ডনার ফ্যান অর্ধপরিবাহির বিশুদ্ধতা উন্মোচনের জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৯৫৪ সালে বেল ল্যাবস সৌরকোষ উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের নতুন দ্বার উন্মোচন করে। একই বছরে বেল ল্যাবসের গবেষকেরা ‘মিউজিক’ নামের কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেন। ১৯৫৮ সালে বেল ল্যাবসের দুই গবেষক আর্থার শোহালো ও চার্লস হার্ড টাইনস তাত্ত্বিকভাবে লেজার রশ্মি সম্পর্কে ধারণা দেন। ১৯৬০ সালে গবেষক ডাউন কাং ও মার্টিন আটালা ধাতুর অক্সাইডে নির্মিত ‘মোসফেট’ নামের অর্ধপরিবাহির ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। গেরহার্ড সেসলার ও জেমস এডওয়ার্ড ওয়েস্ট ১৯৬২ সালে বৈদ্যুতিক মাইক্রোফোন উদ্ভাবন করেন। ১৯৬২ সালে বেল ল্যাবসের গবেষকেরা প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট ‘টেলস্টার-১’ পৃথিবীর কক্ষপথে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে। গবেষক কুমার পাতিল ১৯৬৪ সালে কার্বননির্ভর লেজার উদ্ভাবন করেন। ১৯৬৫ সালে জ্যোতি-গবেষক পেনজাইস ও উইলসন কসিমিক মাইক্রোওয়েভ আবিষ্কার করেন। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ‘ইউনিক্স’ তৈরি করেন বেল ল্যাবসের বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডেনিস রিচি ও কেন থম্পসন। ১৯৭০ সালে গবেষক ডেনিস রিচি ‘সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ’ উদ্ভাবন করেন। বেল ল্যাবসের আরেক দল গবেষক ‘এডব্লিউকে’ নামের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উদ্ভাবন করেন। ১৯৭১ সালে বেল ল্যাবসের গবেষক এরনা স্নাইডার হুভার প্রথম সফটওয়্যার পেটেন্ট লাভ করেন। বেল ল্যাবস ১৯৭৬ সালে জর্জিয়ায় প্রথম ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপন করে। ১৯৮০ সালে এই গবেষণাগারে ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হয়। আশির দশকে বেল ল্যাবস মোবাইল প্রযুক্তির সিডিএমএ ও টিডিএম পদ্ধতির সেলুলার টেলিফোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। এ সময় বেল ল্যাবসের গবেষকেরা ‘প্ল্যান নাইন’ কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম উদ্ভাবন করেন। ল্যাবসের কম্পিউটার প্রোগ্রামার বিজার্নে স্ট্রুয়াসটাপ ‘সি++ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ’ উদ্ভাবন করেন। ১৯৯১ সালে গবেষক নুরি দাগডেভিরেন ইন্টারনেট মডেম উদ্ভাবন করেন। নব্বইয়ের দশকে বেল ল্যাবসের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন ছিল ‘ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়াকর্’ বা ডব্লিউল্যান। ১৯৯৫ সালে গবেষকেরা তারবিহীন এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি অবমুক্ত করেন। নব্বইয়ের দশকে বেল ল্যাবসের গবেষকেরা ‘ইনফার্নো অপারেটিং সিস্টেম’ ও ‘লিম্বো’ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উদ্ভাবন করেন। ১৯৯৭ সালে বেল গবেষকেরা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর প্রস্তুত করেন। ৬০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ট্রানজিস্টর এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত সবচেয়ে ছোট ট্রানজিস্টর। [1]
সম্মাননা
১৯৩৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত উদ্ভাবনের বিশাল এই গবেষণাগারের সাতটি উদ্ভাবন ও আবিষ্কার নোবেল পুরস্কার লাভ করে। ১৯৩৭ সালে গবেষক কিনটন ডেভিসন পদার্থের তরঙ্গ প্রকৃতির ওপর গবেষণার জন্য প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন, ১৯৭৭ সালে কাচ ও চুম্বকের বৈদ্যুতিক কাঠামো তত্ত্বের জন্য, ১৯৭৮ সালে মহাবিশ্বের তরঙ্গ প্রকৃতির গবেষণার জন্য, ১৯৯৭ সালে লেজার গবেষণায়, ১৯৯৮ সালে কোয়ান্টাম হল এফেক্টের জন্য ও সর্বশেষ ২০০৯ সালে অর্ধপরিবাহকের ‘চার্জড কাপল্ড ডিভাইস’ উদ্ভাবনের জন্য বেল ল্যাবরেটরির গবেষকেরা নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[1]
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
আইইইই মেডেল অব অনার
- ২০০৫ জেমস লোটন ফ্ল্যানাগান
- ২০০১ হারউইগ কোগেলনিক
- ১৯৯৪ আলফ্রেড চো
- ১৯৯২ অ্যামোস এডওয়ার্ড জোয়েল
- ১৯৮৯ চন্দ্র কুমার প্যাটেল
- ১৯৮২ জন টুকি
- ১৯৮১ সিডনি ডার্লিংটন
- ১৯৮০ উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলি
- ১৯৭৭ H. Earl Vaughan
- ১৯৭৫ জন রবিনসন পিয়ার্স
- ১৯৭৩ রুডলফ কম্ফনার
- ১৯৭১ জন বারডিন
- ১৯৬৭ চার্লস হার্ড টাউনস
- ১৯৬৬ ক্লদ শান্নন
- ১৯৬৩ জর্জ ক্লার্ক সাউথওয়ার্থ
- ১৯৬০ হ্যারি নিকুইস্ট
ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন
২০০৬ হারউইগ কোগেলনিক
2006 James Edward Maceo West
২০০৫ আলফ্রেড চো
২০০১ Arun Netravali
১৯৯৮ ডেনিস রিচি and কেন টম্পসন
১৯৯৪ Richard Frenkiel and Joel Engel
১৯৯২ Walter Lincoln Hawkins
১৯৯০ John S. Mayo
তথ্যসূত্র
- http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2012-02-05/news/222164
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৬।