মহাবিষুব

বার্ষিক গতির ফলে নিরক্ষরেখায় বা বিষুব রেখায় সূর্যের গমনকে বিষুব বলা হয়। সূর্য বছরে দুবার বিষুব রেখার উপর দিয়ে গমন করার ফলে প্রতিবছর দুটি বিষুব ঘটে, যথা: সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় জলবিষুব এবং সূর্যের উত্তরায়ণের সময় মহাবিষুব

পৃথিবীতে অয়নান্তবিষুবের
ইউটি তারিখ ও সময়[1][2]
ঘটনাবলী মহাবিষুব উত্তর অয়নান্ত জলবিষুব দক্ষিণ অয়নান্ত
মাস মার্চ জুন সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর
বছর
দিনসময়দিনসময়দিনসময়দিনসময়
২০১৪ ২০১৬:৫৭২১১০:৫১২৩০২:২৯২১২৩:০৩
২০১৫ ২০২২:৪৫২১১৬:৩৮২৩০৮:২১২২০৪:৪৮
২০১৬ ২০০৪:৩০২০২২:৩৪২২১৪:২১২১১০:৪৪
২০১৭ ২০১০:২৮২১০৪:২৪২২২০:০২২১১৬:২৮
২০১৮ ২০১৬:১৫২১১০:০৭২৩০১:৫৪২১২২:২৩
২০১৯ ২০২১:৫৮২১১৫:৫৪২৩০৭:৫০২২০৪:১৯
২০২০ ২০০৩:৫০২০২১:৪৪২২১৩:৩১২১১০:০২
২০২১ ২০০৯:৩৭২১০৩:৩২২২১৯:২১২১১৫:৫৯
২০২২ ২০১৫:৩৩২১০৯:১৪২৩০১:০৪২১২১:৪৮
২০২৩ ২০২১:২৪২১১৪:৫৮২৩০৬:৫০২২০৩:২৭
২০২৪ ২০০৩:০৭২০২০:৫১২২১২:৪৪২১০৯:২০
২০১৯ খ্রীস্টাব্দের মহাবিষুবে সূর্যের স্থিরচিত্র। সূর্যের উত্তরায়ণ চলাকালীন সময়ে যখন সূর্য পৃথিবীর নিরক্ষরেখার উপর দিয়ে কল্পিত ভৌগোলিক নিরক্ষরেখাকে অতিক্রম করে তখন মহাবিষুব ঘটে। সৌর ছাকনি ব্যবহার করায় সূর্যের বর্ণ কমলা হয়েছে।

সৌরপাদ বিন্দুটি দক্ষিণ গোলার্ধ ছেড়ে উত্তর গোলার্ধে প্রবেশ করার সময় যখন এটি নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে তখন মহাবিষুব বিষুব ঘটে যার অন্য নাম মার্চ বিষুব তথা উত্তরাভিমুখী বিষুব; এটি মার্চ মাসের ১৯ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে যে কোন দিন ঘটে। সূর্যের উত্তরায়ণ কালে মার্চ মাসে এ বিষুব ঘটে বলে একে উত্তরাভিমুখী বিষুব এবং মার্চ বিষুব বলা হয়।[3][4] উত্তর গোলার্ধে মহাবিষুবের দিনকে বসন্তের শুরু ধরা হয় বলে সেখানে এটি বসন্ত বিষুব এবং বিপরীতক্রমে দক্ষিণ গোলার্ধে তা শারদীয় বিষুব[5][6][7] পক্ষান্তরে জলবিষুব ঘটে সেপ্টেম্বরের ২১-২৪ তারিখের মধ্যে যে কোন দিনে; একে উত্তর গোলার্ধে শরৎ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তের শুরু হিসেবে ধরা হয়।

সংঘটনের সময়

নিকট অতীত ও ভবিষ্যতে সংঘটিত ও সংঘটিতব্য কয়েকটি ভৌগলিক ঘটনার আন্তর্জাতিক তারিখ ও সময়ের তালিকা নিচে দেওয়া হল। উক্ত ঘটনাবলীর জন্য বাংলাদেশের প্রমাণ সময় এবং ভারতীয় প্রমাণ সময় নির্ণয় করতে হলে তালিকায় প্রদত্ত সময়ের সাথে যথাক্রমে ঘণ্টা এবং ৫:৩০ ঘণ্টা যোগ করতে হবে। যেমন— ২০১৯ খ্রীস্টাব্দের মহাবিষুব বাংলাদেশের প্রমাণ সময় অনুযায়ী মার্চ মাসের ২০ তারিখের ২৭:৫৮ ঘটিকায় এবং ভারতের প্রমাণ সময় অনুযায়ী ২৭:২০ ঘটিকায় সংঘটিত হয়েছে।

তারামণ্ডল

সূর্য উত্তরদিকে ভৌগোলিক নিরক্ষরেখার যে বিন্দুটিকে অতিক্রম করে তাকে মেষের প্রথম বিন্দু বলা হয়। সে যাই হোক, বিষুব সমূহের অক্ষীয় অয়নচলনের কারণে বিন্দুটি মেষ তারামণ্ডলে না থকে বরং মীন তারামণ্ডলে গমন করে। ২৬০০ সালের মধ্যে এটি কুম্ভ তারমণ্ডলে গমন করবে। পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষের কারণে মেষ তারামণ্ডলের প্রথম বিন্দুটি প্রতি ৭২ বছরে এক ডিগ্রি হারে পশ্চিম দিক বরাবর অগ্রসর হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন কর্তৃক স্বীকৃত তারামণ্ডলীর সীমানা মোতাবেক উত্তরাভিমুখী বিষুব ১৮৬৫ খ্রীস্টপূর্বাব্দে বৃষ থেকে মেষের মধ্য দিয়ে, ৬৮ খ্রীস্টপূর্বাব্দে মীনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। আগামী ২৫৯৭ খ্রীস্টাব্দে এটি কুম্ভ এবং ৪৩১২ খ্রীস্টাব্দে মকরের মধ্য দিয়ে গমন করবে। উত্তরাভিমুখী বিষুব ১৪৮৯ বছরে তিমিঙ্গিলের ০.১০° কাছ দিয়ে গমন করে তবে এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে না। তিমিঙ্গিল তারামণ্ডলটি রাশিমণ্ডলসূর্যপথের অন্তর্ভুক্ত নয়।

দিগন্তের সাপেক্ষে সূর্যের আপাত গতি

সূর্যের উদয়অস্তকালীন সময়ে এর আপাত ও প্রকৃত অবস্থান। বায়ুমণ্ডলে সূর্যালোকের প্রতিসরণের ফলে সূর্য দিগন্ত রেখা স্পর্শ করার কয়েক মিনিট আগেই দৃষ্টিগোচর হয়।

মহাবিষুব ও জলবিষুব উভয় বিষুবীয় দিনেই, সূর্য একেবারে পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যায়। অর্থাৎ এই দিন নিরক্ষ রেখায় অবস্থানকারী ব্যক্তি একেবারে পূর্ব দিগন্তে সূর্যোদয় ও পশ্চিম দিগন্তে সূর্যাস্ত দেখবেন। কিন্তু বিষুবীয় দিন ব্যতিত অন্যান্য সময়ে নিরক্ষ রেখা থেকে সূর্যের উদয় ও অস্ত কিছুটা উত্তরে অথবা দক্ষিণে পরিলক্ষিত হবে। বিষুবীয় দিনে পৃথিবীর অধিকাংশ অক্ষাংশে অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ঊষাগোধুলির ব্যবধান প্রায় ১২ ঘণ্টা হয় অর্থাৎ দিন ও রাত প্রায় সমান হয়।

জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞানুসারে যে মুহূর্তে সূর্যের উপরের অংশ পৃথিবীর দিগন্ত রেখাকে স্পর্শ করে সেই মুহূর্তে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্যালোকের প্রতিসরণের দরুন সৌর চাকতিটি পৃথিবীর অভিক্ষেপের (দিগন্তের) নিচে থাকা সত্ত্বেও সূর্য দিগন্তের উপরে দৃশ্যমান হয়। বিশদভাবে বলা যায়, সৌর চাকতির জ্যামিতিক কেন্দ্র পৃথিবীর পূর্ব দিগন্ত অতিক্রম করার কয়েক মিনিট আগেই পূর্ব দিকে উজ্জ্বল সৌর চাকতির আবির্ভাব তথা সূর্যোদয় ঘটে এবং অনুরূপভাবে সৌর চাকতির কেন্দ্র পৃথিবীর পশ্চিম দিগন্ত রেখা অতিক্রম করে নিচে গমন করলেও সূর্যাস্ত হয় কয়েক মিনিট পরে। এসব কারণে বিষুবীয় সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য একেবারে সমান না হয়ে এদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য ঘটে। নিরক্ষ রেখা থেকে দূরবর্তী অক্ষাংশগুলোতে যেখানে সূর্য খাড়াভাবে অবস্থান না করে হেলে থাকে সেখানে এ পার্থক্য আরও বেশি হয়।

সংস্কৃতি ও উৎসব

তথ্যসূত্র

  1. United States Naval Observatory (জানুয়ারি ৪, ২০১৮)। "Earth's Seasons and Apsides: Equinoxes, Solstices, Perihelion, and Aphelion"। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
  2. Astro Pixels (ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮)। "Solstices and Equinoxes: 2001 to 2100"। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
  3. Bromberg, Irv (১৮ মে ২০১২)। "Churches take March 21st as the Ecclesiastical Vernal Equinox in calculating the date of Easter. This page takes an astronomical look at the equinox and March 21st."University of Toronto
  4. Teaching Science। Australian Science Teachers Association। ২০০৮।
  5. United States Naval Training Command (১৯৭২)। Navigation compendiumU.S. Govt. Print. Off.। পৃষ্ঠা 88।
  6. Serway, Raymond; Jewett, John (৮ জানুয়ারি ২০১৩)। Physics for Scientists and EngineersCengage Learning। পৃষ্ঠা 409। আইএসবিএন 978-1-285-53187-8।
  7. Desonie, Dana (২০০৮)। Polar Regions: Human ImpactsInfobase Publishing। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 978-1-4381-0569-7।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.