ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দুধর্ম

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুসারে ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার ১.৭% জনগণ এবং বালি দ্বীপের মোট জনসংখ্যার ৮৩.৫% জনগণ হিন্দু ধর্মাবলম্বী[1] ইন্দোনেশিয়ার ছয়টি আনুষ্ঠানিক ধর্মের মধ্যে হিন্দুধর্ম অন্যতম।[2] প্রথম শতাব্দীতে হিন্দুরা ব্যবসার মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় এসেছিল এবং হিন্দু মহাকাব্য, রামায়ণমহাভারত ছায়া পুতুলের ("চামড়ার পুতুল") মাধ্যমে বিশেষ করে বৃহত্তর ভারতের শ্রীবিজায় এবং মাজপহিত সাম্রাজ্যের সময় জাভার সংস্কৃতি ও বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে ওঠে।[3] ২০১০ সালে ইন্দোনেশিয়ার আদমশুমারি অনুযায়ী ৪ মিলিয়ন হিন্দু জনসংখ্যা ছিল।[1][4] পরিষদ হিন্দু ধর্ম ইন্দোনেশিয়া ইন্দোনেশিয়ার জনগণনার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক করেছিল এবং তাদের মতে ইন্দোনেশিয়ায় ২০০৫ সালে আনুমানিক ১৮ মিলিয়ন হিন্দুধর্ম অনুসারীর বসবাস ছিল।[5][6] ইন্দোনেশিয়া সরকারের ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে ঘোষণা করে ৪ মিলিয়ন হিন্দু ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাস করে।[7] তবু ২০১৭ সালের হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে এই অঞ্চলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসরত হিন্দুদের সংখ্যা সর্বাধিক।

পুরা উলুন দানু ব্রতান মন্দিরে পূজা দেওয়ার পরে বালির একটি হিন্দু পরিবার।

ইতিহাস

ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় মানচিত্রে হিন্দুধর্ম লাল রঙে বর্ণিত (উল্লেখ্য, এই মানচিত্রটি কেবল দেখানো "সরকারী ধর্ম" প্রকৃত নয়।)

ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা সর্বপ্রাণবাদ এবং গতিশীলতা অনুশীলন করে, অস্ট্রোনেশিয় লোকদের কাছে যা ছিল সাধারণ বিশ্বাস। ইন্দোনেশিয় আদিবাসীরা পৈতৃক আত্মাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং সম্মান করে; তারা বিশ্বাস করে যে কিছু আত্মা বড় গাছ, বন, পর্বত, অথবা কোন পবিত্র স্থান হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে বাস করতে পারে। অতিপ্রাকৃত শক্তির এই অদৃশ্য আধ্যাত্মিক সত্তাটি প্রাচীন জাভানিজ, সুদানী এবং বালি দ্বীপের আদিবাসীদের দ্বারা "হায়ান" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা ঐশ্বরিক বা পূর্বপুরুষ হতে পারে। আধুনিক ইন্দোনেশিয়ায়, "হায়ান"কে ঈশ্বরের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে।[8]

হিন্দুধর্মের আগমন

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইন্দোনেশিয়ার প্রাচীনতম হিন্দু রাজ্যকে তরুনগর হিসাবে প্রস্তাব করে। মানচিত্রটি ৫ম শতাব্দীরতে পশ্চিম জাভাতে রাজ্যটির ভৌগোলিক বিস্তার।

প্রথম শতাব্দীর প্রথম দিকে হিন্দু প্রভাব ইন্দোনেশীয় দ্বীপমালায় পৌঁছেছিল।[9] ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ায় সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ধারণাগুলোর বিস্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক প্রমাণ অস্পষ্ট। জাভা কিংবদন্তীতে সাক-যুগ ৭৮ খ্রিস্টাব্দকে চিহ্নিত করে। মহাভারত মহাকাব্যের গল্পে প্রথম শতাব্দীর ইন্দোনেশীয় দ্বীপমালাকে সনাক্ত করা হয়েছে; যার সংস্করণ দক্ষিণ-পূর্ব ভারতীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে (এখন তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ) পাওয়া যায়।[9] ১৪তম শতাব্দীর জাভানীয় পাণ্ডুলিপি তান্তু পাগেলারন, যা ইন্দোনেশিয়ার প্রাচীন কাহিনী, শিল্প ও কারুশিল্পের সংগ্রহ। এই পাণ্ডুলিপিতে সংস্কৃত শব্দ, ভারতীয় দেবতার নাম এবং ধর্মীয় ধারণাগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে জাভা ও পশ্চিম ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জে খননকৃত প্রাচীন চাঁদি (মন্দির) এবং ইন্দোনেশিয়ায় আবিষ্কৃত ৮ম শতাব্দীর প্রাচীন শিলালিপিগুলো, যেমন কাংগল শিলালিপি প্রথম সহস্রাব্দে মূর্তিকল্পে (মূর্তি এঁকে বিষয় ব্যাখ্যা) শিব লিঙ্গ ও তার সঙ্গী দেবী পার্বতী, গণেশ, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, অর্জুন, এবং অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর ব্যাপক গ্রহণ নিশ্চিত করে।[10]

জনসংখ্যার উপাত্ত

বছর শতাংশ হ্রাস
১৯৭১ ১.৯৪%
১৯৮৫ ১.৯৪%
১৯৯০ ১.৮৩% -০.১১%
২০০০ ১.৮১% -০.০২%
২০০৫ ১.৭৩% -০.০৮%
২০১০ ১.৫৯% -০.০৪%

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুসারে হিন্দুদের সংখ্যা ৪,০১২,১১৬, এদের মধ্যে প্রায় ৮০% বালি হিন্দুভূমিতে বসবাস করছে।[1]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Sensus Penduduk 2010 - Penduduk Menurut Wilayah dan Agama yang Dianut"। sp2010.bps.go.id। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২৭
  2. Religious Freedom Report - Indonesia U.S. State Department (2012)
  3. Mark Juergensmeyer and Wade Clark Roof, 2012, Encyclopedia of Global Religion, Volume 1, Page 557.
  4. Table: Religious Composition by Country, in Numbers Pew Research Center, Washington D.C. (2012)
  5. The United States Department of State Annual Report on International Religious Freedom for 2006 - Indonesia - September 2006, US State Department "Archived copy"। ১৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-০২
  6. Indonesia International Religious Freedom Report 2005 – US State Department, Quote: "The Hindu association Parishada Hindu Dharma Indonesia (PHDI) estimates that 18 million Hindus live in the country, a figure that far exceeds the government estimate of 3.6 million. Hindus account for almost 90 percent of the population in Bali."
  7. Indonesia: Religious Freedoms Report 2010, US State Department (2011), Quote: "The Ministry of Religious Affairs estimates that 10 million Hindus live in the country and account for approximately 90 percent of the population in Bali. Hindu minorities also reside in Central and East Kalimantan, the city of Medan (North Sumatra), South and Central Sulawesi, and Lombok (West Nusa Tenggara). Hindu groups such as Hare Krishna and followers of the Indian spiritual leader Sai Baba are present in small numbers. Some indigenous religious groups, including the "Naurus" on Seram Island in Maluku Province, incorporate Hindu and animist beliefs, and many have also adopted some Protestant teachings."
  8. Ooi, Keat Gin (editor) (২০০৪)। "Southeast Asia: A historical encyclopedia, from Angkor Wat to East Timor (3 volume set)"। ABC-CLIO। Archived from the original on ৮ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬
  9. Jan Gonda, The Indian Religions in Pre-Islamic Indonesia and their survival in Bali, in গুগল বইয়ে Handbook of Oriental Studies. Section 3 Southeast Asia, Religions, পৃ. 1,, pp. 1-54
  10. Kenneth Hall (2011), A History of Early Southeast Asia, Rowman & Littlefield, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৪২৫৬৭৬১০, Chapter 4 and 5

    আরও পড়ুন

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.