২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন

২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি চলমান আন্দোলন।[7][8][9][10][11] ১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা 'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ'-এর নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে।[12][13][14] লাগাতার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার।[12]

২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন, ঢাকা
তারিখজানুয়ারি ২০১৮ (2018-01) - চলমান
অবস্থান
কারণবাংলাদেশে সব ধরণের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি।[1]
লক্ষ্যসমূহবাংলাদেশের সকল সরকারি চাকুরিতে কোটার সংখ্যা কমানো।
প্রক্রিয়াসমূহ
  • মানববন্ধন[2][3]
  • বিক্ষোভ[4]
  • রাস্তা অবরোধ
  • গাড়ি ভাঙচুর
ফলাফলসরকার নিয়োগ পদ্ধতিতে কোটাব্যবস্থা বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়।
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ক্ষয়ক্ষতি
২৬২ জন আহত[5][6]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

পটভূমি

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। সে সময় মেধাতালিকা ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, ৩০ শতাংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।[15] পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করা হয়।[16]

প্রথম আলোতে প্রকাশিত তথ্যমতে, নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই-আড়াই লাখ,[17] অর্থাৎ এক হাজার মানুষের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১.২ জন বা ১.৫ জন। যা সমগ্র জনসংখ্যার ০.১২/০.১৫ শতাংশ। ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। যা হাজারে রূপান্তর করলে দেখা যায়, এক হাজার জনতার মাঝে ১ থেকে ১.৫ (দেড়) জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০০।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ।[18][19] তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

দাবিসমূহ

চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার ৫টি দাবি নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন।[20] দাবিসমূহ হলো:

  1. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমান কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।[21]
  2. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া।[22]
  3. সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ।
  4. কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না রাখা।
  5. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা।

ঘটনাক্রম

জানুয়ারি-মার্চ

বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা প্রথা বাতিল করে সে ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন করতে হাইকোর্টে ৩১শে জানুয়ারি একটি রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ও দুইজন সাংবাদিক। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, “সব মিলিয়ে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। এই কোটা পদ্ধতি সংবিধানের ১৯, ২৮, ২৯ ও ২৯/৩ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”[23][24] ৫ই মার্চ ২০১৮ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদনে ভুল রয়েছে এই মর্মে রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।[25][26] রিট এর পড়েই একট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপ কোটা সংস্কার চাই ( সকল চাকরির জন্য) গ্রুপের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয় ছাত্র সমাজ। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ গ্রুপের এডমিন, মো: তারেক রহমান, সাকিব চৌধুরি, দীন মোহাম্মাদ ডাক দেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মানববন্ধনের। দিনটি ছুটির দিন হওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটি মিটিং এ এক দিন পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কোটা সংস্কারের উদ্যেশ্যে একই দিন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পাবলিক লাইব্রেরি শাহবাগ এর সামনে গঠন করা হয়, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। উপস্থিত, মো: তারেক রহমান, রাসেল, সুমন কবির, আল আমিন মিনা আন্দোলনের উদ্যেশ্যে গড়া প্লাটফর্মটির নাম দেন, "বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।" ১৭ ফেব্রুয়ারিব ২০১৮ কোটা সংস্কারের ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচী পালিত হয় শাহবাগে। প্রাথমিক ভাবে ১০ দফা দাবি নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে ৫ দফার ভিত্তিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়।[27] ২৫শে ফেব্রুয়ারি পুনরায় সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করা হয়।[27] এরপর ৪ই মার্চ দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।[27] ৬ই মার্চ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে জানানো হয়, আপাতত কোটা সংস্কার হচ্ছে না। তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যদি কোটায় প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।[15]

এপ্রিল

কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগান সংম্বলিত প্লেকার্ড হাতে একজন শিক্ষার্থী।

২০১৮-এর এপ্রিলের পূর্বে এবং বিগত কয়েক বছর বিচ্ছিন্নভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন চললেও, তা ২০১৮ সালের এপ্রিলে এসে সারা দেশব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করে।[1][2][28]

৮ এপ্রিল

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা।

৮ই এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিক্ষোভ শুরু হলেও আস্তে আস্তে সেটি বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।[29][30][31][32][33] সেসময় পুলিশ কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনকর্মীদের উপর বিভিন্ন রকমের ধরপাকড় হয়। তখন দেশবরেণ্য বিভিন্ন লেখক, শিক্ষক কোটা সংস্কার আন্দোলনকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের নির্যাতনের ব্যাপক সমালোচনা করে ৯ এপ্রিল ২০১৮ তে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান উৎসব-২০১৮ আয়োজন উপলক্ষে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, "পুলিশের কোনোভাবেই উচিত হয়নি শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা না করে পুলিশ বিষয়টাকে অন্যভাবে সমাধান করতে পারত। কোটা বেশি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কোটা একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কেউ যেন এ ব্যাপারটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করার সুযোগ না পায়।" তিনি আরো বলেন, "কোটাব্যবস্থা যুক্তিপূর্ণ হতে হবে। দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বর্তমানে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সম্পর্কে আমি তেমন ভালো জানি না। তবে যতটুকু জেনেছি, তা সত্যি হলে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। বেসিক্যালি আমি কোটার পক্ষে না। এটা ফেয়ার না।"[34][35]

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবি মেনে নিয়ে, ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তিনি সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।[36] যদিও তখন পর্যন্ত কোন এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।[37]

১৬ এপ্রিল

১৬ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক রাশেদ খান সহ তিন শীর্ষ নেতাকে ডিবি পুলিশ প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে চোখ বেধে তুলে নিয়ে যায়। অবশ্য পুলিশের দাবি তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিল।[38][39][40][41][42][43][44]

মে

২ মে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের কথা পুনর্ব্যক্ত করে।[45] ১৪ মে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।[46] ১৯ মে রমজান মাস ও সেশন জট বিবেচনা করে পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন কোটা আন্দোলনকারীরা।[47] ২৭ মে কোটা নিয়ে আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।[48]

জুন

৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হামলা করে।[49] সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে আন্দোলনকারী নেতাদের ধাওয়া করে। তাদের মারধর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

জুলাই

১ জুলাই

১ জুলাই সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।[50]

২ জুলাই

২ জুলাই আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালায়। তাদের কিল, ঘুষি, লাথি মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।[51] এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলা সম্পর্কে ‘অবহিত নন’ বলে জানান।[52] অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন করেন ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক যোগ দেয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের পতাকা মিছিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়।[53] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।

৩ জুলাই

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা আরেকটি মানববন্ধন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতারা।[54]

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের’ কর্মসূচি ছিল বিকেল চারটায়। তারা ঘটনাস্থলে আসার আগেই প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। কর্মসূচি শুরুর আগে সোয়া চারটার দিকে জড়ো হওয়া প্রতিবাদকারীদের ধাক্কা মেরে, স্তাধস্তির মাধ্যমে সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ।[55] পরে প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু হয়।

১২ জুলাই

সংসদকে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় আছে। সরকার এই রায় অমান্য করতে পারছে না।[56]

কোটা সংস্কারের বিপক্ষে

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলমান অবস্থাতেই ফেব্রুয়ারিতে কোটা পদ্ধতি চালু রাখার পক্ষে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।[57][58][59] বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও সে সময় কোটা সংস্কারের বিপক্ষে বক্তব্য দেন।[60] এপ্রিলে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং বিভিন্ন সময় আন্দোলকারীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।[61] আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের এসব হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের তিন নেতা পদত্যাগ করেন।[62] বরেণ্য শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ২০১৯ সালের এক সমাবর্তন ভাষণে চাকরির অবাধ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোটা বহালের দাবীর পক্ষের আন্দোলনকারীদের আন্দোলনকে মৃদু ভৎসর্না করে বলেন, তিনি তাদের আন্দোলনে অবাক।[63]

ভারত

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সেটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ছড়িয়ে পরে। ১০ই এপ্রিল ২০১৮ সালে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য বিক্ষোভ করা হয়।[64]

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: শাহবাগ থেকে তোলার পর ঢাবিতে সংঘাত"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
  2. "কোটা সংস্কার: শাহবাগে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা-টিয়ারশেল"দৈনিক ইত্তেফাক
  3. "বাকৃবিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন"দৈনিক কালের কণ্ঠ
  4. "সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কোটা সংস্কারের আন্দোলন"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর
  5. "কোটা আন্দোলনে এ পর্যন্ত আহত ২৬২, আটক ৪৪"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২০
  6. "নূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক : রাশেদ খান"কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-৩০
  7. "কোটা সংস্কারের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ"এনটিভি অনলাইন
  8. "কোটা সংস্কারের দাবিতে অবরুদ্ধ শাহবাগ"দ্য ডেইলি স্টার। ৮ এপ্রিল ২০১৮।
  9. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: সকাল ১১টায় বৈঠকের প্রস্তাব সরকারের"বাংলা ট্রিবিউন
  10. "কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান"
  11. "কোটা সংস্কার আন্দোলন পুলিশি বাধায় পণ্ড, অর্ধশতাধিক আটক"দৈনিক আমাদের সময়। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  12. "ডাকসু নির্বাচনে যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-৩১
  13. "কোটা সংস্কার আন্দোলন; মধ্যরাতে রাবিতে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা"বাংলাদেশ প্রতিদিন
  14. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: পুলিশের লাঠিচার্জ-টিয়ারশেলে আহত ৩১"বাংলা ট্রিবিউন
  15. "'আপাতত' কোটা সংস্কার নয়"দৈনিক সমকাল
  16. "সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার সময়ের দাবি"ডয়েচে ভেলে
  17. নজরুল, আসিফ (৪ মার্চ ২০১৮)। "সরকারি নিয়োগঃ চাকরিতে কোটা বিরোধিতার যুক্তি"দৈনিক প্রথম আলো (মতামত সংবাদ)। ট্রান্সকম গ্রুপ। ৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৮১৯৮৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৬৯ হাজার ৮৩৩। পরে বিভিন্ন সময়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সরকারের প্রথম দিকের একটি তালিকায় ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশিত হয়। তাদের মধ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এই মর্মে আপত্তি দাখিল হয় ৬২ হাজার।
  18. "কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কর্মসংস্থান"বণিক বার্তা। ২০১৮-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১
  19. "কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ রণক্ষেত্র"দৈনিক যুগান্তর। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  20. "'চাকরিতে কোটা, মেধাবীদের সাথে রাষ্ট্রের বঞ্চনা'"বিবিসি বাংলা। ৮ এপ্রিল ২০১৮।
  21. "শাহবাগে বিক্ষোভ, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি"দৈনিক প্রথম আলো
  22. "কোটা সংস্কারের দাবি, শাহবাগে অবস্থান, পূরণ না পর্যন্ত আন্দোলন"দেশ টিভি। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  23. "সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল চেয়ে রিট"আরটিভি অনলাইন
  24. "সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে রিট"বাংলা ট্রিবিউন
  25. "কোটা সংস্কার চেয়ে করা রিট খারিজ"দৈনিক প্রথম আলো
  26. "সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের রিট খারিজ"দৈনিক যুগান্তর
  27. "কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আটক ৩ - poriborton.com"
  28. "Thousands rally in Bangladesh after 100 injured in student protest - AFP"। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৮
  29. "আন্দোলনে থমকে আছে রাজধানী"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮
  30. কল্লোল, কাদির (১০ এপ্রিল ২০১৮)। "কোটা সংস্কার: বিভেদ দূর হলো মতিয়া চৌধুরীর উক্তিতে"বিবিসি বাংলা
  31. "কোটা সংস্কার: ঢাবি ক্যাম্পাসে এখনো উত্তেজনা"বিবিসি বাংলা। ৯ এপ্রিল ২০১৮।
  32. "কোটা সংস্কার: আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা একাংশের"দৈনিক ইত্তেফাক
  33. "কোটা সংস্কার আন্দোলন 'চলবে'"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
  34. "কোটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে: জাফর ইকবাল"প্রথম আলো। ৯ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৯
  35. "কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক: জাফর ইকবাল"Jugantor। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৯
  36. "ইকোনমিস্টের চোখে কোটা সংস্কার আন্দোলন"প্রথম আলো। ২২ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২২
  37. "কোটা বাতিলের ঘোষণা হলেও জটিলতা কাটেনি"প্রথম আলো। ১৮ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২২
  38. "৩ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, পুলিশ বলছে ডাকা হয়েছে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  39. "কোটা আন্দোলনের তিন নেতাকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ"BBC News বাংলা (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৪-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  40. "কোটা সংস্কারের তিন আন্দোলনকারীকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি"NTV Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  41. "কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  42. "কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  43. "কোটা সংস্কার ॥ মামলা তোলার আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তিন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ"জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  44. "কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ"Boishakhionline.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৯
  45. "কোটা সংস্কার নিয়ে এখন হা-হুতাশ কেন: প্রধানমন্ত্রী"প্রথম আলো। ২ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  46. "কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে"প্রথম আলো। ১৪ মে ২০১৮।
  47. "রমজান ও সেশনজট বিবেচনায় পরীক্ষা বর্জন স্থগিত"প্রথম আলো। ১৯ মে ২০১৮।
  48. "কোটা আন্দোলনকারী নেতার ওপর হামলার বিচার দাবি"প্রথম আলো। ২৭ মে ২০১৮।
  49. "খুঁজে খুঁজে মারল ছাত্রলীগ"প্রথম আলো। ১ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  50. "কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ গ্রেপ্তার"প্রথম আলো। ১ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  51. "কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলা"প্রথম আলো। ২ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  52. "ছাত্রলীগের হামলা সম্পর্কে 'জানেন না' প্রক্টর"প্রথম আলো। ২ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  53. "রাজশাহীতে ছাত্রলীগের হামলা, কয়েকজন আহত"প্রথম আলো। ২ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  54. "রাজু ভাস্কর্যের সামনে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন"প্রথম আলো। ৩ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  55. "পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, দুই অধ্যাপক প্রিজন ভ্যানে পরে মুক্ত"প্রথম আলো। ৩ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  56. "মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রায় অবমাননা করা যায় না"প্রথম আলো। ১২ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮
  57. "কোটা পদ্ধতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ দুই পক্ষের - বাংলাদেশ প্রতিদিন"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  58. "কোটার পক্ষে ও বিপক্ষে কর্মসূচি"দৈনিক প্রথম আলো
  59. "'মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে'"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
  60. "'কোটার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে'"বাংলা ট্রিবিউন
  61. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: এ পর্যন্ত যা যা হলো"বাংলা ট্রিবিউন
  62. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: ছাত্রলীগের ৩ নেতার পদত্যাগ"দৈনিক যুগান্তর। ৯ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮
  63. "চাকরিতে কোটার জন্য আন্দোলন দেখে অবাক না হয়ে পারি না: জাফর ইকবাল | banglatribune.com"Bangla Tribune
  64. "ভারতেও চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন"দৈনিক ইত্তেফাক
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.