১১ সেপ্টেম্বরের হামলা
১১ সেপ্টেম্বরের হামলা (যা নাইন/ইলেভেন[lower-alpha 1] নামেও পরিচিত) সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ এর মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আল কায়েদার একইসাথে চারটি সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলা। আক্রমনের ২,৯৯৭ জন নিহত এবং ৬,০০০ এর অধিক মানুষ আহত হয়, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও সম্পদ।[1][2]
১১ ই সেপ্টেম্বরের হামলা | |
---|---|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এ সন্ত্রাসবাদ-এর অংশ | |
![]()
| |
স্থান |
|
তারিখ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ পূর্বাহ্ণ ৮:৪৬ – পূর্বাহ্ণ ১০:২৮ (ইডিটি) |
লক্ষ্য |
|
হামলার ধরন |
|
নিহত | ২,৯৯৬ (২,৯৭৭ ঘটনার শিকার + ১৯ অপহরণকারী) |
আহত | ৬০০০+ |
হামলাকারী দল | |
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা | ১৯ |
পটভূমি
আল-কায়েদা
- আরও দেখুন: আল-কায়েদা এবং জিহাদ
আল-কায়েদার উৎপত্তি হয় ১৯৭৯ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন এবং আরব মোজাহিদীনদের সংগঠিত করে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহায্য করেন।[3] আয়মান আল-জাওয়াহিরির নির্দেশনায় বিন লাদেন আরও তৎপর হয়ে ওঠেন।[4] ১৯৯৬ সালে বিন লাদেন তার প্রথম ফতোয়া জারি করেন এবং মার্কিন সেনাদের সৌদি আরব ত্যাগ করতে বলেন।[5]
ওসামা বিন লাদেন
- আরও দেখুন: ওসামা বিন লাদেন

ওসামা বিন লাদেন এই হামলার নেপথ্যে ছিলেন বলে ধারণা করা হয় এবং শুরুতে তিনি তার জড়িত থাকার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানালেও পরে তিনি তার মিথ্যা বক্তব্যকে অমূলক বলে উল্লেখ করেন।[6][7][8] আল জাজিরা ২০০১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে বিন লাদেনের এক বক্তব্য প্রচার করে, যেখানে তিনি বলেন, "আমি জোড় দিয়ে বলছি যে আমি এই কাজ করিনি, মনে হয় কেউ তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার লক্ষ্যে এই হামলা চালিয়েছেন।"[9] ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের জালালাবাদ থেকে একটি ভিডিওটেপ উদ্ধার করেন। ভিডিওতে দেখা যায় বিন লাদেন খালেদ আল-হারবির সাথে কথা বলছেন এবং এই হামলার সম্পর্কে তার জানার বিষয়টি স্বীকার করছেন।[10] ২০০১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর বিন লাদেনের আরেকটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। এই ভিডিওতে তিনি বলেন:
এটি স্পষ্ট যে ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণা রয়েছে... এটি ক্রুসেডারদের ঘৃণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হওয়ার যোগ্য কাওরণ এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বন্ধ করা, যারা আমাদের লোকজনদের হত্যা করছে... আমরা বলি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাপ্তি আসন্ন, বিন লাদেন বা তার অনুসারীরা জীবিত থাকুক বা মৃত, মুসলিম উম্মাহ জেগে ওঠেছে।
খালিদ শেখ মোহাম্মদ

আল জাজিরার সাংবাদিক ইয়োসরি ফুদা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যে ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে খালিদ শেখ মোহাম্মদ এই হামলায় তার দায় স্বীকার করেন এবং জানান তার সাথে ছিলেন রামজি বিন আল-শিভ।[11][12][13] নয়/এগারো কমিশন রিপোর্টের প্রতিবেদনে বলা হয় যে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রধান মোহাম্মদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরিতার কারণ হল ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে তার সহিংস অসম্মতি।[14] মোহাম্মদ ১৯৯৩ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলার উপদেশদাতা ও বিনিয়োগকারী ছিলেন এবং তিনি এই হামলার প্রধান বোমা হামলাকারী রামজি ইউসেফের চাচা।[15][16]
অন্যান্য আল-কায়েদা সদস্য
"খালিদ শেখ মোহাম্মদের সাবস্টিটিউশন ফর টেস্টিমনি"তে বলা হয়ে পাঁচজন ব্যক্তি এই হামলার বিস্তারিত সম্পর্কে জানতেন। তারা ছিলেন বিন লাদেন, খালিদ শেখ মোহাম্মদ, রামজি বিন আল-শিভ, আবু তুরাব আল-উরদুনি, ও মোহাম্মদ আতেফ।[17]
উদ্দেশ্য
ওসামা বিন লাদেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধের ঘোষণা দেন এবং মার্কিনীদের হত্যার জন্য বিন লাদেন ও অন্যান্যদের ১৯৯৮ সালে একটি ফতোয়া স্বাক্ষরকে তদন্ত কর্মকর্তারা তার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।[18][19] ২০০২ সালের নভেম্বরে বিন লাদেনের "লেটার টু আমেরিকা"-তে তিনি তাদের হামলা সম্পর্কিত আল-কায়েদাদের উদ্দেশ্য ব্যাখা করেন, তন্মধ্যে রয়েছে:
- ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন[20][21]
- সোমালিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলায় সমর্থন
- মরো সংঘর্ষে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনকে সমর্থন
- লেবাননে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে ইসরায়েলকে সমর্থন
- চেচনিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রে রুশদের সমর্থন
- মুসলমানদের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে প্রো-মার্কিন সরকার
- কাশ্মীরে ভারতকে মুসলমানদের শোষণের বিরুদ্ধে সমর্থন
- সৌদি আরবের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি
টীকা
- শব্দ আকারের "9/11" উচ্চারিত হয় "নাইন ইলেভেন"। স্ল্যাশকে উচ্চারণের অংশ হিসাবে গ্রহণ করা হয়না। প্রকাশ ভঙ্গিটি ব্যপকভাবে ব্রিটিশ ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয় পাশাপাশি আমেরিকান ইংরেজিতেও বহুল ব্যবহৃত, যদিও দিন/তারিখ প্রকাশের ভিন্নতা বিদ্যমান।
তথ্যসূত্র
- "হাউ মাচ ডিড দ্যা সেপ্টেম্বর ১১ টেরোরিস্ট অ্যাটাক কস্ট আমেরিকা?"। ২০০৪ (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্সটিটিউট ফর দ্যা এনালাইসিস অফ গ্লোবাল সিকিউরিটি। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৩০,২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ম্যথিইউ জে, মরগান (অগাস্ট ৪, ২০০৯)। দ্যা ইমপ্যাক্ট অফ নাইন ইলেভেন অন পলিটিক্স অ্যান্ড ওয়ার: দ্যা ডে দ্যাট চেঞ্জন্ড এভ্রিথিং?। পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ২২২। আইএসবিএন 0-230-60763-2।
- "Al-Qaeda's origins and links" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ২০ জুলাই ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- গুনারত্ন (২০০২), pp. ২৩–৩৩.
- "Bin Laden's fatwā (1996)" (ইংরেজি ভাষায়)। পিবিএস। অক্টোবর ৩১, ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Pakistan inquiry orders Bin Laden family to remain" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। জুলাই ৬, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Full transcript of bin Laden's speech"। আল জাজিরা। নভেম্বর ২, ২০০৪। জুন ১৩, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Pakistan to Demand Taliban Give Up Bin Laden as Iran Seals Afghan Border" (ইংরেজি ভাষায়)। ফক্স নিউজ। সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০১। মে ২৩, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Bin Laden on tape: Attacks 'benefited Islam greatly'" (ইংরেজি ভাষায়)। সিএনএন। ডিসেম্বর ১৪, ২০০১। ডিসেম্বর ২৭, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
Reveling in the details of the fatal attacks, bin Laden brags in Arabic that he knew about them beforehand and says the destruction went beyond his hopes. He says the attacks "benefited Islam greatly".
- "We left out nuclear targets, for now"। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। মার্চ ৪, ২০০৩। জানুয়ারি ২৩, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- লিওনার্ড, টম; স্পিলিউস, আলেক্স (অক্টোবর ১০, ২০০৮)। "Alleged 9/11 mastermind wants to confess to plot"। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- 9/11 Commission Report (2004), p. 147.
- "White House power grabs"। দ্য ওয়াশিংটন টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। আগস্ট ২৬, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ভ্যান ভরিস, বব; হুর্টাডো, প্যাট্রিশিয়া (এপ্রিল ৪, ২০১১)। "Khalid Sheikh Mohammed Terror Indictment Unsealed, Dismissed"। ব্লুমবার্গ বিজনেস উয়িক (ইংরেজি ভাষায়)। এপ্রিল ১৭, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Substitution for Testimony of Khalid Sheikh Mohammed" (PDF) (ইংরেজি ভাষায়)। United States District Court for the Eastern District of Virginia। ২০০৬। পৃষ্ঠা ২৪। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- গুনারত্ন, পৃ. ৬১–৬২
-
- মিয়ারশেইমার (২০০৭), পৃ. ৬৭
- কুশনার (২০০৩), পৃ. ৩৮৯
- মুরডিকো (২০০৩), পৃ. ৬৪
- কেলি (২০০৬), পৃ. ২০৭
- ইব্রাহিম (২০০৭), পৃ. ২৭৬
- বার্নার (২০০৭), পৃ. ৮০