০ (সংখ্যা)
০ (উচ্চারণ: শূন্য) হলো একাধারে একটি সংখ্যা এবং অঙ্ক।[1] এটি এককভাবে মানের অস্তিত্বহীনতা ও অন্যান্য সংখ্যার পিছনে বসে তাদের যুত পরিচয় প্রদান করে। এছাড়াও দশমিকের ডানে বসে এটি বিভিন্ন সংখ্যার দশমাংশ প্রকাশ করে। অঙ্ক হিসেবে ০ (শূন্য) একটি নিরপেক্ষ অঙ্ক এবং সংখ্যার স্থানধারক হিসেবে কাজ করে।।শূন্য(০) একটি স্বাভাবিক পূর্ণ সংখ্যা।
| ||||
---|---|---|---|---|
অঙ্কবাচক | ০, শূন্য, নেই, "oh" /ˈoʊ/, nought, naught, | |||
পূরণবাচক | ০তম (zeroth, noughth) | |||
ভাজক | অন্য সব সংখ্যা (নিজেকে ব্যতীত) | |||
বাইনারি | ০২ | |||
টাইনারি | ০৩ | |||
কোয়াটারনারি | ০৪ | |||
কুইনারি | ০৫ | |||
সেনারি | ০৬ | |||
অকট্যাল | ০৮ | |||
ডুওডেসিমেল | ০১২ | |||
হেক্সাডেসিমেল | ০১৬ | |||
ভাইজেসিমেল | ০২০ | |||
বেজ ৩৬ | ০৩৬ | |||
আরবি অঙ্ক | ٠,0 | |||
ইংরেজি | 0 | |||
দেবনাগরী | ० | |||
চীনা অঙ্ক | 零, 〇 | |||
জাপানি অঙ্ক | 零, 〇 | |||
খেমের | ០ | |||
থাই অঙ্ক | ๐ | |||
কামের অঙ্ক | ១ |
উৎপত্তি
ইংরেজিতে জিরো (ইং: zero) শব্দটি এসেছে ভেনিশিয় শব্দ জিরো (zero) থেকে যা আবার ইতালিয় জিফাইরো (zefiro জেফিরো) থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছিল। ইতালীয় জিফাইরো শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ "সাফাইর" বা "সাফাইরা" (صفر) থেকে যার অর্থ "সেখানে কিছু ছিল না"। এই শব্দটি প্রথমে ভারতীয় সংস্কৃত হতে অনুদিত হয়েছে।সংস্কৃত শব্দ শ্যুন্যেয়া (শ্যূন্য) যার অর্থ খালি বা ফাঁকা। ইংরেজি শব্দ জিরোর প্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় ১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে।[2][3][4][5]
৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের মুসলিম বিজ্ঞানি মোহাম্মদ ইবন আহমাদ আল-খাওয়ারিজমি তার বিজ্ঞানগ্রন্থ "বিজ্ঞানের চাবি"-তে বলেন,
“ | যে গাণিতিক হিসাবের সময় যদি দশকের ঘরে কোন সংখ্যা না থাকে তাহলে সামঞ্জস্য রাখার জন্য একটি ছোট্ট বৃত্ত দিয়ে তা পূরণ করা যেতে পারে। | ” |
সেই ছোট বৃত্তকে তিনি সিফার (صفر) নামে অবিহিত করেন। তার উল্লিখিত এই সিফারই বর্তমান যুগের জিরো বা শূন্য।[6]
ইতিহাস
প্রাচীন মিশর
প্রাচীন মিশরীয় সংখ্যাগুলো ছিল দশ ভিত্তিক। তাদের সংখ্যাগুলো স্থানভিত্তিক না হয়ে চিত্র ভিত্তিক ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৪০ সালের দিকে মিশরিয়রা আয়কর ও হিসাবরক্ষণের জন্য শূন্যের ব্যবহার করত। তাদের চিত্রলিপিতে একটি প্রতীক ছিল যাকে "নেফর" বলা হতো, যার অর্থ হল "সুন্দর"। এই প্রতীকটি তারা শূন্য এবং দশকের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিশরীয় পিরামিড ও অন্যান্য স্থাপনায় এধরনের সংখ্যার ব্যবহার পাওয়া যায়।[7]
মেসোপটেমীয় সভ্যতা
খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাবিলনীয় গণিতবিদরা ছয়ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার প্রবর্তন ও উন্নয়ন করে। শূন্য সংখ্যাটির অভাব তারা ছয়ভিত্তিক সংখ্যার মধ্যে একটি খালি ঘর রেখে পূরণ করত। খৃষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে দুটি যতিচিহ্ন প্রতীক এই ফাঁকা যায়গা দখল করে নেয়। প্রাচীন মেসোপটেমীয় শহর সুমের থেকে প্রাপ্ত একত্ব শিলা লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে প্রাচীন লেখক বেল বেন আপ্লু তার লেখায় দুটি যতিচিহ্ন প্রতীক ব্যবহারের বদলে একই "হুক" দিয়ে শূন্যকে প্রকাশ করেছেন।[8]
ব্যাবিলনীয় শূন্যটি প্রকৃতপক্ষে শূন্য হিসেবে গন্য করা সমীচীন হবে না কারণ এই প্রতীকটিকে স্বাধীনভাবে লিখা সম্ভব ছিল না কিংবা এটি কোন সংখ্যার পিছনে বসে কোন দুই অঙ্ক বিশিষ্ট অর্থবোধক সংখ্যা প্রকাশ করত না।
ভারত
শূন্যকে (শ্যূন্য) কোন সংকেত বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না-করে সরাসরি সংখ্যা হিসেবে সফলভাবে ব্যবহারের অবিমিশ্র কৃতিত্ব প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদদের। খৃষ্টপূর্ব নবম শতাব্দীর দিকে ভারতে বাস্তব সংখ্যা দ্বারা হিসাব নিকাশ করার সময় শ্যূন্য ব্যবহৃত হত। এমনকি শ্যূন্যকে ব্যবহার করে যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগও করা হত।[9][10] খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে ভারতীয় গণিতবিদ পিঙ্গলা "বাইনারি সংখ্যা" দিয়ে হিসাব-নিকাশ করার পদ্ধতি বের করেন। তিনি একটি ছোট অক্ষর এবং একটি বড় অক্ষরের সমন্বয়ে তা করতেন যা আধুনিক কালের মোর্স কোডের মত।[11][12] তার সমসাময়িক গণিতবিদরা সংস্কৃত শব্দ শ্যূন্যেয়া থেকে বাংলা শূন্য শব্দটি গ্রহণ করেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের গণিতবিদ আর্যভট্টের একটি বই-এ পাওয়া যায়, স্থানম স্থানম দশ গুণম।এখানে হয়তবা তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন, স্থানে স্থানে দশ গুণের কথা। তবে এখানেও শুন্যের কথা লুকায়িত ছিল। শেষ পর্যন্ত শুন্যকে সংখ্যার পরিচয় দেন ব্রহ্মগুপ্ত। তার ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত নামক বই-এ প্রথম শুন্যকে সংখ্যা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। শূন্যের সাথে যোগ , বিয়োগ , গুণের কথা এই বই-এ সঠিকভাবে দেয়া হয়। এছাড়া মহাবীর এবং ভাস্কর শুন্য নিয়ে কাজ করেন। তবে দুঃখের বিষয় এদের কেউ শুন্য দিয়ে কোন কিছু ভাগের কথা উল্লেখ করেনি।
তথ্যসূত্র
- Russel, Bertrand (১৯৪২)। Principles of mathematics (2 সংস্করণ)। Forgotten Books। পৃষ্ঠা 125। আইএসবিএন 1-4400-5416-9।, Chapter 14, page 125
- Menninger, Karl (১৯৯২)। Number words and number symbols: a cultural history of numbers। Courier Dover Publications। পৃষ্ঠা 401। আইএসবিএন 0-486-27096-3।
- ""zero, n.". OED Online. December 2011. Oxford University Press. (accessed March 04, 2012)."। ডিসেম্বর ৬, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-০৪।
- "cipher | cypher, n.". OED Online. December 2011. Oxford University Press. (accessed 4 March 2012).
- Merriam Webster online Dictionary
- Will Durant, 'The Story of Civilization', Volume 4, The Age of Faith, pp. 241.
- George Gheverghese Joseph (২০১১)। The Crest of the Peacock: Non-European Roots of Mathematics (Third Edition)। Princeton। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 978-0-691-13526-7।
- Kaplan, Robert. (2000). The Nothing That Is: A Natural History of Zero. Oxford: Oxford University Press.
- Bourbaki, Nicolas (1998). Elements of the History of Mathematics. Berlin, Heidelberg, and New York: Springer-Verlag. 46. আইএসবিএন ৩-৫৪০-৬৪৭৬৭-৮.
- Britannica Concise Encyclopedia (2007), entry algebra
- Binary Numbers in Ancient India
- Math for Poets and Drummers ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ জুন ২০১২ তারিখে (pdf, 145KB)
বহিঃসংযোগ
- শূন্যের ইতিহাস (ইংরেজিতে)
- জিরো সাগা (ইংরেজি)
- এলজেবরার ইতিহাস (ইংরেজি)
- Edsger W. Dijkstra: গণনা কেন শূন্য থেকে শুরু করা উচিত (ইংরেজি), EWD831 (PDF of a handwritten manuscript)
- "মাই হিরো জিরো" (ইংরেজি) Educational children's song in Schoolhouse Rock!