হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী (১৯০৬ - ১৫ এপ্রিল ১৯৬৬) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, লেখক, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী।[3] তিনি ৩০এর দশক থেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অবদান রেখেছেন।
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯০৬ |
মৃত্যু | ১৫ এপ্রিল ১৯৬৬ |
মৃত্যুর কারণ | হৃদরোগ |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
যেখানের শিক্ষার্থী | চট্টগ্রাম কলেজ, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ |
পেশা | রাজনীতিবিদ, লেখক |
প্রতিষ্ঠান | পূর্ব পাকিস্তান রেনেসা সোসাইটি, বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি, পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন |
পরিচিতির কারণ | রাজনীতি, সাংবাদিকতা |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | পাকিস্তান, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ওমর ফারুক, আমীর আলী |
রাজনৈতিক দল | মুসলিম লীগ |
আন্দোলন | পাকিস্তান আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | আনোয়ারা বাহার চৌধুরী |
সন্তান | ইকবাল বাহার চৌধুরী, সেলিনা বাহার জামান, তাজিন চৌধুরী, নাসরিন শামস |
পিতা-মাতা | মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুুরী (বাবা)[1][2] আসিয়া খাতুন চৌধুরানী (মা)[1] |
আত্মীয় | খান বাহাদুর আবদুল আজিজ (নানা), শামসুন্নাহার মাহমুদ (বোন) |
প্রারম্ভিক জীবন
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর জন্ম ১৯০৬ সালে ফেনীর গুথুমা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।[3] তার বাবা মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুুরী। আড়াই বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন।[1] মাতামহ খান বাহাদুর আবদুল আজিজের চট্টগ্রামের বাড়িতে শৈশব ও কৈশোর কাটে। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ১৯২২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯২৪ সনে আই.এস.সি ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯২৮ সনে বি.এ. পাস করেন।[3][4] ইসলামিয়া কলেজে তিনি ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।[1]
কর্মজীবন
১৯৩২ সালে তিনি পুলিশ সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে ইতিপূর্বে সূর্যসেনের বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি চাকরি পাননি। ১৯৩৩ সালে তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এসময় তিনি সাহিত্য পত্রিকা বুলবুল প্রকাশ করেছিলেন।[3]
রাজনৈতিক জীবন
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটির সহসভাপতি হন। হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণে এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান রেনেসা সোসাইটি গঠনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক এবং বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন।[3]
১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন। ১৯৪৭ সালের নোয়াখালী দাঙ্গার সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নোয়াখালী সফরে তিনি তার সফরসঙ্গী ছিলেন।[3]
পাকিস্তান আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। এসময় তার পরিচালিত মশক নিধন অভিযান সুনাম অর্জন করেছিল।[3] ১৯৪৯ ও ১৯৫০ সালের দিকে রোম, কায়রো ও জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। জেনেভা সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেছেন।[1]
ক্রীড়া
ছাত্রাবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন।[1] পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের "বি" দলে ফুটবলার হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি এই দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৩১ সালে তার নেতৃত্বে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব "এ" দলে উন্নীত হয়। তিনি ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।[3]
সাহিত্য
তিনি ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং সাহিত্যচর্চা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, ওমর ফারুক, আমির আলি।[3] তিনি ও শামসুুননাহার মাহমুুদ তৎকালীন বিকখাত পতরিকা বুুুুলবুল সম্পাদনা করতেন। [৯]
ব্যক্তিগত জীবন
শামসুন্নাহার মাহমুদ ছিলেন হবীবুল্লাহ বাহারের বোন।[2] হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর সাথে আনোয়ারা বাহার চৌধুরীর বিয়ে হয়। আনোয়ারা বাহার চৌধুরী বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি স্বামীর নামে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ স্থাপন করেন।[5][6] ইকবাল বাহার চৌধুরী, সেলিনা বাহার জামান, তাজিন চৌধুরী, নাসরিন শামস তার সন্তান।[7] ইকবাল বাহার চৌধুরী ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ পাঠক ছিলেন।[8]
কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রাম সফরের সময় কাজী নজরুল ইসলাম তার বাড়িতে অবস্থান করতেন। কবি তার সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থটি হবীবুল্লাহ ও তার বোন শামসুন্নাহারকে উৎসর্গ করেছিলেন।[1]
মৃত্যু
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ১৫ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।[3]
তথ্যসূত্র
- আমার বাবা মুহাম্মদ হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত
- শামসুন্নাহার মাহমুদ, বাংলাপিডিয়া
- হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, বাংলাপিডিয়া
- সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, প্রথম পুনর্মুদ্রণ এপ্রিল, ২০০৩, পৃষ্ঠা- ৪২৮-৪২৯।
- ULAB screens documentary on Anwara Bahar Choudhury ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত
- ANWARA BAHAR CHOUDHURY ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত
- The art of recitation: Then and now ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত
- একটি অনন্য কবিতাসন্ধ্যা ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংগৃহিত
9. বুুুুলবুল জয়নতী ২০১৮। বুুলবুুল ললিতকলা একাডেমি কতৃৃৃক প্রকাশিত স্মরনিকা, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮। পৃৃৃষ্ষা ১৯।