স্ক্লেরা

স্ক্লেরা (/ˈsklɛərə/অথবা /ˈsklɪərə/; দুটি নামই প্রচলিত), বহুবচন স্ক্লেরাই (/ˈsklɛəri/ অথবা /ˈsklɪəri/) বা স্ক্লেরাস, গ্রিক স্ক্লেরাস থেকে এসেছে, যার মানে শক্ত। [1] স্‌ক্লেরা বা চোখের শ্বেতমণ্ডল এক ধরনের অস্বচ্ছ তন্তুবিশেষ, যা কোলাজেন ও স্থিতিস্থাপক তন্তু সমন্বয়ে গঠিত।[2] এটি চোখের রক্ষাকারী আবরন হিসেবে কাজ করে। মানুষের চোখের কণীনিকা রঙিন হলেও স্ক্লেরা পুরো সাদা, কিন্তু অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে স্ক্লেরার বা শ্বেতমণ্ডলের দৃশ্যমান অংশ কণীনিকার রঙে মেলে, তাই সাদা অংশ সাধারণত দেখা যায় না।

স্ক্লেরা
কর্নিয়াল লিম্বাস দ্বারা কর্নিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন শ্বেতমণ্ডল।
বিস্তারিত
যার অংশচোখ
তন্ত্রদর্শন ইন্দ্রিয়
ধমনীঅগ্র সিলেরি ধমনী, দীর্ঘ পোস্টারীয় সিলেরি ধমনী, সংক্ষিপ্ত অবর সিলেরি ধমনী
শনাক্তকারী
লাতিনSclera
টিএA15.2.02.002
এফএমএFMA:58269
শারীরস্থান পরিভাষা

গঠন

স্‌ক্লেরা, চক্ষু গোলকের বাইরের আচ্ছাদনের পেছনের দিকের ৫/৬ অংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত। এটি ডুরা মাটার এবং কর্নিয়ার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন। স্‌ক্লেরা, চক্ষু গোলকের আকৃতি বজায় রাখে, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আঘাতকে প্রতিরোধ করে এবং এক্সটাওকুলার পেশী সন্নিবেশের জন্য একটি সংযুক্তি প্রদান করে। স্‌ক্লেরাটি বহিরাগত স্‌ক্লেরা ফোরামেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অনেক স্নায়ু এবং নালিকা দ্বারা রন্ধ্রযুক্ত, রন্ধ্র যেটি অক্ষিস্নায়ু দ্বারা গঠিত হয়।

ছাগলের অপেক্ষাকৃত কালো স্‌ক্লেরার( শ্বেতমন্ডল) সঙ্গে সটান চোখের তারা
ঘন শ্বেতমণ্ডলের সঙ্গে গরুর চোখ

হিস্টোলজি

স্ক্লেরার কোলাজেন কর্ণিয়ার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন হয়। এদের সংযোগস্থলকে লিম্বাস বলে। বাইরের থেকে একদম ভিতর অবধি, স্ক্লেরার চারটি স্তর হল:

এপিস্ক্লেরা

স্ট্রোমা

ল্যামিনা ফুসকা

কর্ণিয়াল এন্ডোথেলিয়াম

করণিয়াল কোলাজেন প্রায় সমান ঘনত্বের ও সমান্তরাল বিন্যাসের কিন্তু স্ক্লেরার টাইপ১[3] কোলাজেন অনিয়মিত বলে স্ক্লেরা অস্বচ্ছ। কখনও কখনও, খুব ছোট ধূসর-নীল দাগ স্ক্লেরাতে দেখা যায়, একটি অবিপজ্জনক অবস্থা যাকে স্কেলাল মেলনোসাইটোসিস বলে।

কাজ

মানুষের চোখ প্রাণীজগতের মধ্যে কিছুটা স্বতন্ত্র তাই চোখ খোলা অবস্থায় স্ক্লেরা খুব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। এর কারণ মানুষের চোখের স্ক্লেরা শুধুমাত্র সাদা রঙের বলে নয়, যা অনেক অন্যান্য প্রজাতির ও থাকে, কিন্তু এটা সত্য যে মানুষের কনীনিকা অপেক্ষাকৃত ছোট এবং অন্যান্য পশুদের তুলনায় উন্মীলিত চোখের ভেতর উল্লেখযোগ্যভাবে একটি ছোট অংশ গঠিত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষের চোখের সুস্পষ্ট স্ক্লেরাটি এক ব্যক্তির জন্য সহজতর করে তুলতে পারে যে অন্য একজন ব্যক্তি কোনদিকে তাকিয়ে, যেটি এই বিশেষ ধরনের অমৌখিক যোগাযোগের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে।[4]

জখম

আঘাত

যে অস্থিসার ক্ষেত্রটি মানুষের চোখের কোটর তৈরি করে, সেটি শ্বেতমণ্ডলের জন্য বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে। যাইহোক, যদি স্ক্লেরা একটি নিরেট শক্তি দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয় বা একটি ধারালো বস্তু দ্বারা বিদ্ধ হয়, সম্পূর্ণরূপে পূর্বের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সুযোগ সাধারণত কম। অধিকাংশ ক্ষত, চলন্ত বস্তুর খুব জোরে চোখের ভিতরে ঢোকাতে ঘটে। অক্ষিকোটরের চর্বির মোটা আস্তরণ স্ক্লেরাকে মুখোমুখি নিরেট আঘাত থেকে বাঁচায়। কিন্তু এই কুশন দ্বারা চোখের পাশ থেকে আসা তেরছা আঘাত বাঁচে না। রক্তক্ষরণ এবং অতিদ্রুত চোখের ভিতরের প্রেশার কমে যাওয়া খুব স্বাভাবিক, সাথে চাক্ষুষ প্রতক্ষ্যকরণ কমে কেবল হাতের বড়সড় নড়াচড়া ও আলো আছে, না নেই এইটুকু থাকে। যাইহোক, কম-জোর আঘাত যা স্ক্লেরাকে বিদীর্ন করে নি এবং ভিতরে প্রবেশ করে নি তাতে শুধুমাত্র ওপর ওপর চিকিত্সা এবং বস্তুর অপসারণের প্রয়োজন হয়। খুব ছোট বস্তু যা ভিতরে আটকে রয়েছে এবং যা পরবর্তীকালে বিনা চিকিৎসায় থেকে গেছে, তারফলে হতে পারে বস্তুটি একটি অক্ষতিকর সিস্টের মধ্যে রয়ে গেল, যা অন্য কোনো ক্ষতি বা অস্বস্তি করল না।[5]

উষ্ণতাজনিত আঘাত

তাপের অল্প সময়ের প্রভাব দ্বারা স্ক্লেরা খুব কমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়: চোখের পাতাগুলি একটি বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে, আদ্র টিস্যু আবরণে স্ক্লেরা সুরক্ষিত থাকে, যেগুলি স্ক্লেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবার পূর্বেই তাপকে আদ্রতা দ্বারা প্রশমিত(বাষ্পে রূপান্তরিত করে) করে ফেলে।

রাসায়নিক আঘাত

চোখের সাদা অংশ অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিকের অল্পকালস্থায়ী আঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। রাসায়নিক দুস্প্রভাব চালু হওয়ার সাথেসাথেই আত্মপ্রতিরোধকারী অশ্রুপাতের উৎপাদন উত্তেজক পদার্থ দ্বারা আরও দূষিত হওয়ার আগে দ্রুত ধুয়ে দেয়। ২.৫ এর নীচের পিএইচ সহ এসিড সর্বাধিক অ্যাসিডজনিত জ্বলনের ঝুঁকির উৎস, যেমন গাড়ির ব্যাটারিতে উপলব্ধ সালফিউরি এসিড, যা সহজে পাওয়া যায় এবং বিপজ্জনক। যাইহোক অ্যাসিডজনিত জ্বলন যদি গুরুতরও হয়, কখনো সখনই এর কারণে চোখ নষ্ট হতে পারে।[5]

চিকিৎসাক্ষেত্রে গুরুত্ব

শ্বেতমণ্ডলে হলুদবর্ণ জন্ডিসের একটি দৃশ্যমান উপসর্গ। কিডনি এবং লিভার খারাপ হলেও খুব বিরল কিন্তু গুরুতর ক্ষেত্রে, চোখের শ্বেতমণ্ডল কালো হতে পারে।

আরও দেখুন

  • Extraocular implant
  • Scleral tattooing

তথ্যসূত্র

  1. Mosby's Medical, Nursing & Allied Health Dictionary, Fourth Edition, Mosby-Year Book Inc., 1994, p. 1402
  2. Cassin, B. and Solomon, S. Dictionary of Eye Terminology. Gainesville, Florida: Triad Publishing Company, 1990.
  3. Keeley, FW; Morin, JD; Vesely, S (নভেম্বর ১৯৮৪)। "Characterization of collagen from normal human sclera."। Experimental Eye Research39 (5): 533–42। doi:10.1016/0014-4835(84)90053-8। PMID 6519194
  4. Michael Tomasello, Brian Hare, Hagen Lehmann, Josep Call. "Reliance on head versus eyes in the gaze following of great apes and human infants: the cooperative eye hypothesis" http://www.chrisknight.co.uk/wp-content/uploads/2008/06/eyes-cooperation.pdf
  5. Peter G Watson (১১ এপ্রিল ২০১২)। "Chapter 9"। The Sclera and Systemic Disorders। JP Medical Ltd। পৃষ্ঠা 293। আইএসবিএন 978-1-907816-07-9।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.