উত্তর মেরু

উত্তর মেরু পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বিন্দু (৯০o অক্ষাংশ)। এর অন্য নাম সুমেরু বা ভৌগোলিক উত্তর মেরু। সুমেরুর বিপরীতে পৃথিবীর অপর (দক্ষিণতম) প্রান্তে আছে কুমেরু (দক্ষিণ মেরু)। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের যে বিন্দুতে এর ঘূর্ণন অক্ষ পৃষ্ঠতলের সাথে মিলিত হয় তাকে উত্তর মেরু বলে। উত্তর চৌম্বক মেরুর সাথে একে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবেনা। উত্তর মেরুতে সকল দিক দক্ষিণ দিকে নির্দেশিত হয়।

একটি মানচিত্রের অ্যাজিমুথাল ছকে আর্কটিক মহাসাগর এবং উত্তর মেরু।
উত্তর মেরুর দৃশ্য

দক্ষিণ মেরু যেখানে একটি বিশাল মহাদেশের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত, সেখানে উত্তর মেরুর অবস্থান আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যভাগে। মহাসাগরের এই অংশের পানি বছরের অধিকাংশ সময়েই সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। এ কারণেই উত্তর মেরুতে কোন স্থায়ী স্টেশন স্থাপন সম্ভব নয় যা দক্ষিণ মেরুতে সম্ভব হয়েছে। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন (পরবর্তীতে রাশিয়া) এ অঞ্চলে মনুষ্যবাহী কয়েকটি স্থানান্তরযোগ্য স্টেশন স্থাপন করেছিল। এর কয়েকটি আবার উত্তর মেরু বা এর খুব নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যেতে সমর্থ হয়েছে। উত্তর মেরুতে সামুদ্রিক গভীরতা ১৩,৪১০ ফুট (৪০৮৭ মিটার)। এই বিন্দু থেকে নিকটতম স্থানটি হচ্ছে কাফেক্লুবেন দ্বীপ। এই দ্বীপটি গ্রিনল্যান্ডের নিকটতম সমুদ্র উপকূল থেকে ৪৪০ মাইল (৭০০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। অবশ্য এই বিন্দুর বেশ নিকটে কিছু পাথুরে তীর-ভূমি রয়েছে।

অভিযানসমূহ

এভারেস্ট জয়ের চেয়ে উত্তর মেরু জয়ের ইতিহাস কম রোমাঞ্চকর নয়। কিন্তু কে সর্বপ্রথম উত্তরমেরুতে পা দিয়েছেন তা নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি আছে। আমেরিকান অভিযাত্রী ফ্রেডেরিক আলবার্ট কুক তার দুজন সহযাত্রী নিয়ে ২১ এপ্রিল ১৯০৮ সর্বপ্রথম উত্তর মেরুতে পা রাখেন বলে দাবী করেন। কিন্তু কুক এ ব্যাপারে সন্তোষজনক প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে তাকে স্বীকৃত দেয়া হয়নি।

তবে উত্তর মেরু জয়ের কৃতিত্ব যাকে দেয়া হয় তিনি হলেন আমেরিকান নেভী ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট পিয়েরি। পিয়েরি দাবী করেন তিনি ১৯০৯ সালের ৬ এপ্রিল সর্বপ্রথম উত্তরমেরুতে পা রাখেন। যদিও তার দাবীও বিতর্কিত। কারণ তার যাত্রাপথের প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ জন সহযাত্রী থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তার সাথে কেউ ছিলনা এবং তিনি যে রুট, সময় ও গতিতে উত্তরমেরু পৌঁছার কথা বলেন তা তার প্রাথমিক সহযাত্রীর বক্তব্যের সাথে মেলেনা।

এভাবে ১৯৮৯ পর্যন্ত রবার্ট পিয়েরিকেই সর্বপ্রথম উত্তরমেরু জয়ী ধরা হয়। কিন্তু ওই সালেই ব্রিটিশ অভিযাত্রী ওয়ালি হার্বার্ট চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ঘোষণা করেন যে পিয়েরি আর তার দলবল আসলে ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং তারা প্রকৃতপক্ষে উত্তর মেরু পৌছাননি।

এরপর ২০০৫ সালে পিয়েরিকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন এবার আরেক ব্রিটিশ অভিযাত্রী টম এভারি। তিনি পিয়েরির বর্ণনা অণুযায়ী রুটে কুকুরবাহী স্লেজে চড়ে যাত্রা শুরু করেন এবং ৩৬দিন ২২ ঘন্টা পর তিনি উত্তর মেরু পৌছান। এই সময় পিয়েরির বর্ণনাকৃত সময় অপেক্ষা ৫ ঘন্টা কম। কাজেই এভারি ঘোষণা করেন যে রবার্ট পিয়েরি আধুনিক দিক-নির্দেশনা যন্ত্র ছাড়াই প্রকৃত উত্তরমেরুতে না পৌছাতে পারলেও এর সবচে কাছাঁকাছি গিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম উত্তর মেরু জয়ী।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.