সুখময় চৌধুরী

সুখময় চৌধুরী (জন্ম: ১৮৬৬ - মৃত্যু: ১৯৪২) সিলেট জেলার একজন প্রখ্যাত সাবেক ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। ১৮৯৭ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া ডায়মন জুবিলী আওয়ার্ড ও সম্রাট পঞ্চম জর্জের করোনেশন উপলক্ষে তাকে রৌপ্য মেডেল দেওয়া হয়। ১৯১৬ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট মিউনিসিপ্যালেটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং রসময় হাইস্কুল সিলেট, ব্রজনাথ উচ্চ বিদ্যালয় পাইল গাও প্রতিষ্ঠান করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর কর্মের জন্য ব্রিটিশ গভর্মেন্ট কর্তৃক ১৯১৫ সালে রায়বাহাদুর ও ১৯২৫ সালে "সি আই ই" খেতাবে ভুষিত হন।[1][2]

সুখময় চৌধুরীর পৃতিব্য জমিদার বাড়ি' পাইলগাও, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ

পরিচিতি

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অচ্যূতচরণ চৌধুরী পাইল গাও এর জমিদার বংশ কথায় লিখেছেন যে; প্রাচীন কালে পাইল গাও এ পাল গোষ্টিয় লোক বসবাস করত। এ গোষ্টির পদ্মলোচন নামক ব্যক্তির এক কন্যার নাম ছিল রোহিণী। কোন এক কারণে রাঢ় দেশের মঙ্গলকোট গ্রাম হতে আগত গৌতম গোত্রীয় কানাইলাল ধর রোহিণীকে বিবাহ করে গৃহ-জামাতা হয়ে এখানেই বসবাস শুরু করেন। কানাইলাল ধরের আট পুরুষ পরে বালক দাস নামের এক ব্যক্তির জন্ম হয় । বালক দাসের কয়েক পুরুষ পর উমানন্দ ধর কুনিয়াত (ওরফে) বিনোদ রায় দিল্লীর মোহাম্মদ শাহ বাদশা কর্তৃক চৌধুরী সনদ প্রাপ্ত হন। বিনোদ রায়ের বংশে মাধন রাম ও শ্রীরাম নামে দুই পুত্রের জন্ম হয়। তার মধ্যে মাদব রাম জনহিতকর কর্ম পালনে নিজ গ্রাম পাইল গাও এ এক বিরাট দীঘি কনন করে সুনাম অর্জন করেন। তার দেয়া উক্ত দীঘি আজও ঐ অঞ্চলে মাধব রামের তালাব হিসেবে পরিচিত রয়েছে। মাধব রামের দুই পুত্র মদনরাম ও মোহনরাম । উক্ত মোহনরামের চার পুত্রের মধ্যে হুলাসরাম বানিয়াচং রাজ্যের দেওয়ানি কার্যালয়ে উঁচ্চ পদের কর্মচারী নিযুক্ত হন। হুলাসরাম চৌধুরী বানিয়াচং রাজ্যের রাজা দেওয়ান উমেদ রজার অনুগ্রহে আতুয়াজান পরগণায় কতেক ভূমী দান প্রাপ্ত হন । কথিত আছে যে; হুলাসরামের প্রাপ্ত ভূমীর কিছু কিছু চাষগুয্য ও কিছু ভুমী চাষঅযুগ্য ছিল। পরবর্তিতে হুলাসরাম চাষঅযুগ্য ভূমীগুলোকে চাষযুগ্য করে তুললে এগুলোই এক বিরাট জমিদারীতে পরিণত হয়ে উঠে। বংশ পরিক্রমায় হুলাসরাম চৌধুরী ছিলেন সুখময় চৌধুরীর দাদার আপন ভাই। সুখময় চৌধুরীর পিতার নাম ব্রজেন্দ্রনাথ চৌধুরী। ব্রজেন্দ্রনাথ চৌধুরী সিলেট আদালতের উকিল ও একজন অনারারী মাজেষ্ট্রেট ছিলেন বলে সিলেটের একশত একজন সহ বিভিন্ন গ্রন্থ পাওয়া যায়[1]

শিক্ষা

সুখময় চৌধুরী সিলেট জেলা স্কুলে অধ্যায়ন করে ১৮৮৬ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তখন সিলেট জেলায় উচ্চ শিক্ষারকোন ব্যবস্থা না থাকায় তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে এফ এ পর্যন্ত অধ্যায়ন করে ১৮৯০ সালে তিনি দেশে ফেরেন [1]

কর্ম জীবন

সুখময় চৌধুরী লেখা পড়া শেষে কিছুকাল নিজ বাড়িতে থেকে জমিদারি বিষয়ে পিতা ও বড় ভাইয়কে সাহায্য সহযোগিতা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি সিলেটের আদালতে প্রথম শ্রেনীর হাকিম হিসেবে যোগদেন। ১৮৯৬ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এক নাগারে ৪০ বত্সর একজন ন্যায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিচারিক পদ্দতি বিষয়ে প্রখ্যাত গবেষক সৈয়দ মুর্তাজা আলী আমাদের কালের কথা গ্রন্থে লিখেছেন; রায় বাহাদুর সুখময় চৌধুরী অনারারী মাজিষ্টেট হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন। সরকারী মহলে তার খুব প্রতিষ্ঠা ছিল। মামলা মোকদ্দমার রায় লিখতে তিনি অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতেন। বিচারক হিসেবে সারা শহরে তার সুখ্যাতি ছিল[3]

সমাজ সেবা

তথ্যসূত্র

  1. সিলেটের একশত একজন ফজলুর রহমান' প্রকাশক- ফখরুল কবির খাঁ, প্রকাশকাল - এপ্রিল ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা ১৩৫, প্রবন্ধ- সুখময় চৌধুরী
  2. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ, তৃতীয় ভাগ, পঞ্চম খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪, প্রবন্ধ -পাইল গাও'র জমিদার বংশ
  3. আমাদের কালের কথা সৈয়দ মুর্তজা আলী। সূত্র সিলেটের একশত একজন
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.