সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮-এর চলচ্চিত্র)

সাত ভাই চম্পা ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ছিল সংগীতবহুল। চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়।[1] চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন দীলিপ সোম, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখেন খান আতাউর রহমান, প্রযোজনা করেন মিজানুর রহমান বুলেট। সংগীত পরিচালনা করেন আমির আলি। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কবরীআজিম। চলচ্চিত্রটিকে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সেরা দশটি বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে স্থান দিয়েছে।[2]

সাত ভাই চম্পা
পরিচালকদীলিপ সোম
প্রযোজকমিজানুর রহমান বুলেট
রচয়িতাখান আতাউর রহমান
উৎসকর্তৃক 
ঠাকুমার ঝুলি
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারআমির আলি
চিত্রগ্রাহকখান আরিফুর রহমান (বহিঃদৃশ্য)
এম. ফাজেল (অন্তঃদৃশ্য)
সম্পাদকবশীর হোসেন
পরিবেশকজেড এম এন্টারপ্রাইজ
মুক্তি১৯৬৮
দেশপূর্ব পাকিস্তান
ভাষাবাংলা

কাহিনী

সুলেমানপুরের বাদশাহর (আনোয়ার হোসেন) ছয় রানী থাকা স্বত্ত্বেও তিনি নিঃসন্তান। এক রাতে বাদশাহ স্বপ্ন দেখেন এক দরবেশ তাকে গানে গানে মৃগয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সেখানে তাকে বিয়ে করার আদেশ দেন। সেই স্ত্রী গর্বে তার সন্তান আসবে। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে বাদশাহ উজিরকে দায়িত্ব দিয়ে পরদিনই ভৃত্য নফরকে নিয়ে মৃগয়ায় যাত্রা করেন।

বনে এক দরিদ্র কাঠুরিয়া ও তার কন্যা বাস করে। মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় মহাজনের ছেলে কাঠুরিয়াকে মারধোর করে এবং তার কন্যা বাধা দিতে এলে তাকে ধরে নিয়ে যায়। বাদশাহ তার চিৎকার শুনে তাকে মহাজনের ছেলের হাত থেকে উদ্ধার করে। পরে বাদশাহ এই কাঠুরিয়া কন্যাকে বিয়ে করে প্রাসাদে নিয়ে আসে। বিজয়পুরের শাহজাদি হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি ছোট রানীর মর্যাদা লাভ করেন। তার ছোটবেলার সই মালিনী হয়ে তার কাছে আসে। অন্যদিকে বাকি ছয় রানী ছোট রানীকে পছন্দ করে না। তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।

দরবেশের বরে অন্তঃসত্ত্বা হন ছোট রানী। সন্তান প্রসবের সময় ছয় রানী ছোট রানীর আঁতুড় ঘরে অন্য কাউকে ঢুকতে দেয় না। তারা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে রাখে ছোট রানীকে। ছোট রাণী অজ্ঞান থাকা অবস্থায় একে একে সাত পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু সাত ছেলেকে আঁতুড়ঘর থেকেই সরিয়ে ফেলে ছয় রানী। তাদের রাজবাড়ির পেছনে বাগানে পুতে ফেলে। তবে রানীদের অগোচরে একমাত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পারে মালিনী সই। ছয় রানী বাদশাহকে বলে ছোট রানী সাতটি কুকুর ছানা জন্ম দিয়েছে। ডাইনি মনে করে ছোট রানীকে বনবাসে পাঠান বাদশাহ। এদিকে দরবেশের বরে সাত রাজপুত্র চাঁপা ফুল হয়ে ফুটে থাকে গাছে।

বনে বনে ঘুরে বেড়ানো দুঃখিনী ছোট রানী এক বৃদ্ধ কাঠুরিয়ার কুঁড়েতে আশ্রয় পায়। অন্যদিকে রাজবাড়িতে মালিনী সইয়ের ঘরে মালিনীর সন্তান পরিচয়ে বড় হতে থাকে রাজকন্যা পারুল (কবরী সারোয়ার)। নদীর ঘাটে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণ সওদাগরের। সওদাগর ও পারুলের মধ্যে প্রেম হয়। ছয় মাসের জন্য সওদা করতে যায় সওদাগর। যাওয়ার আগে পারুলের কাছে দিয়ে যায় এক অদ্ভুত আয়না ও একটি কবুতর পাখি। আজব আয়নায় দূরে থাকলেও প্রিয়জনদের দেখা যায়। আজব আয়নায় ছোট রানীকে বনে বনে কেঁদে বেড়াতে দেখে পারুল। মালিনী তাকে তার জন্ম ইতিহাস জানায়। একদিন পারুলের হাত থেকে পড়ে আয়না ভেঙে যায়। সে চাঁপা গাছের কাছে গিয়ে সাত ভাইকে ডাকে। কিন্তু সাত ভাই সাড়া দেয় না। সেখানে দরবেশ এসে জানান যেদিন রাজা, ছোট রানী ও পারুল সবাই একসঙ্গে ওদের ডাকবে সেদিন সাত ভাই সাড়া দিবে।

কবুতর পাঠিয়ে সওদাগরকে ডাকে পারুল। সওদাগর ছুটে আসে। মালিনীর বাড়িতে সওদাগর এসেছে এ খবর পায় বড় রানী। বড় রানী ছাড়া আর কেউ জানে না কোথায় বনবাসে পাঠানো হয়েছিল ছোট রানীকে। বড় রানীর মহলে গোপনে যায় সওদাগর। সওদাগর তরোয়াল দিয়ে রানীকে ভয় দেখায়। প্রাণের ভয়ে বড় রানী বলে, উত্তর পশ্চিমে একশ মাইল দূরে হরিদ্রা বনে ছোট রানীকে নির্বাসন দেওয়া হযেছে। সওদাগর যায় ছোট রানীকে আনতে।

এদিকে প্রহরী নিয়ে মালিনীর বাড়িতে যায় বড় রানী। কিন্তু তারা সেখানে মালিনী ও পারুলকে পায় না। মালিনী ও পারুল আশ্রয় নেয় পারুলের সইয়ের বাড়িতে। পারুলের সই রাজদরবারের গায়িকা। প্রতিরাতে নিশি ভোজনের পর বাদশাহকে গান শোনায় গায়িকার দল। সে রাতে দরবারে সইয়ের পোশাক পরে পারুল যায় বাদশাহকে গান শোনাতে। ছোট রানীকে নিয়ে আসে সওদাগর। পারুল তখন দরবারে বাদশাহকে গান শোনায় ‘শোনেন শোনেন জাঁহাপনা, শোনেন রানী ছয় জনা’। গানের ভেতর দিয়ে পুরো ঘটনা বাদশাহকে শোনায় পারুল।

গান শুনে চমকে ওঠেন বাদশাহ। প্রশ্ন করেন, "তুমি কে?" পারুল সে কথার জবাব না দিয়ে বাদশাহর সামনে ফুলের ডালা রেখে বলে ফুল খেতে। বাদশাহ বলেন, "মানুষ কি কখনও ফুল খায়?" পারুল পাল্টা প্রশ্ন করে, "মানুষের ঘরে কি কুকুর ছানা হয়?"

সে সময় ছোটরানীকে নিয়ে দরবারে আসে সওদাগর। বাদশাহকে পরিচয় দেয় এই হলো শাহজাদী পারুল। বাদশাহ প্রমাণ চাইলে ঘটনাস্থলে আবির্ভাব ঘটে দরবেশের। দরবেশ জানায় বিশ্বাসেই তাকে পাবে। এবার পারুল, সওদারগর, ছোট রানী ও বাদশাহ যান রাজপ্রাসাদের পাশে চাঁপা ফুল গাছের কাছে। সঙ্গে যায় ছয় রানীও। পারুলের ডাকে সাড়া দেয় সাত ভাই চম্পা। বাদশাহ ফিরে পান তার সাত ছেলে ও এক মেয়েকে। পারুলের সঙ্গে বিয়ে হয় সওদাগরের।

কুশীলব

সঙ্গীত

চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আমির আলি।

গানের তালিকা

নং.শিরোনামকণ্ঠশিল্পী(গণ)দৈর্ঘ্য
১."কাঁদিস নারে তুই"খান আতাউর রহমান১:০৩
২."আগুন জ্বালাইস না আমার গায়" ২:২৬
৩."প্রাণের সখি" ২:২০
৪."বিয়ার সাজনি সাজো" ২:২৪
৫."দয়াল আল্লারে" :
৬."কি আনন্দ ঘরে ঘরে" :
৭."অবলারে করো দয়া" :
৮."অনল ধিকি ধিকি জ্বলছে" ৩:৩৮
৯."বাণিজ্যের নামে আমি" ৪:০২
১০."আর কত কাল" ২:০৩
১১."বৈদেশি নাগর" ২:৪৫
১২."সাত ভাই চম্পা" ২:৩৮
১৩."শুনেন শুনেন জাহাপানা"শাহনাজ রহমতুল্লাহ৪:১২
১৪."বিশ্বাসে পাবি রে তারে" ০:৫৮
১৫."সাত ভাই চম্পা জাগো" ৩:৩৬

তথ্যসূত্র

  1. মারিয়া, শান্তা (১৪ এপ্রিল ২০১৬)। "'সাতভাই চম্পা': লোককাহিনির চিরন্তন আবেদনের দৃষ্টান্ত"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  2. "Top 10 Bangladeshi Films"ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ২০০৭-০৭-১৭। ২০০৯-০৫-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.