সতীশচন্দ্র পাকড়াশী
সতীশচন্দ্র পাকড়াশী (১৮৯৩ - ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লববাদী।
সতীশচন্দ্র পাকড়াশী | |
---|---|
![]() সতীশচন্দ্র পাকড়াশী | |
জন্ম | ১৮৯৩ |
মৃত্যু | ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | রাজনৈতিক নেতা |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন |
জন্ম
সতীশচন্দ্র পাকড়াশীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতে নরসিংদির মাধবদিতে। পিতার নাম জগদীশচন্দ্র পাকড়াশী।
বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ
ছাত্রাবস্থায় প্রখ্যাত বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সান্নিধ্যে এসে ১৪ বছর বয়েসে গুপ্ত বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সদস্য হন সতীশচন্দ্র। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে ঐ বছরই অস্ত্র আইনে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন। মুক্তি পেয়ে নরসিংদীতে ফিরে এসে আবার দলের কাজে গোপনে যোগ দেন। তাকে মালদহে পাঠানো হয়। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা যান। সতীশ পাকড়াশী আইবি পুলিশের সুপারিন্টেডেন্টকে হত্যা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সুপারিন্টেডেন্টর বৈঠকখানায় বোমা নিক্ষেপ করা হলেও ভুলের কারণে নিক্ষিপ্ত বোমায় সতীশ নিজেই প্রচণ্ডভাবে আহত হন। রাজশাহী সায়েন্স কলেজের ছাত্ররা তাকে তাদের হোস্টেলে আশ্রয় দেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তার নামে ব্রিটিশ সরকার একাধিক রাজনৈতিক ডাকাতির অপরাধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।[1]
সশস্ত্র যুদ্ধ
১৯১৭ সালে ঢাকায় পুলিশের দমননীতির জন্যে গা ঢাকা দেন সহকর্মী নলিনীকান্ত বাগচীর সাথে। আরো কয়েকজন সদস্য সহ তারা গৌহাটিতে গিয়ে সেখান থেকে সারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবের কাজ পরিচালনা করতে থাকেন। পুলিশ ১২ জানুয়ারি ১৯১৮ তারিখে তাদের গোপন ঘাঁটি ঘিরে ফেললে তারা ৭ জন নিকটের নবগ্রহ পাহাড়ে পালিয়ে যান ও রিভলভার নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন পুলিশবাহিনীর সাথে। ৫ জন ধরা পড়লেও তিনি ও নলিনীকান্ত বাগচি পালাতে সক্ষম হন। দুজনেই পদব্রজে কলকাতায় চলে আসেন। নলিনীকান্ত এর কিছুকাল পরেই ঢাকায় সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।[2]
জেল জীবন
১৯১৮ সালে কলকাতায় ধরা পড়লে তাকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল ও পরে রাজসাহী জেলে পাঠানো হয়। তিন বছর পরে মুক্তি পান। ১৯২৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আগত বিপ্লবী অবনী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাকে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে সমিতি তবে তা ব্যর্থ হয়। ১৯২৩ এর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং রাজবন্দী হিসেবে ৫ বছর জেল খাটেন। এই সময় তিনি অলিপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা, মহারাষ্ট্রের যারবেদা এবং কর্ণাটকের বেলগাঁও জেলে আটক থাকেন।[1] ১৯২৯ এ মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় গ্রেপ্তার হলে তার আন্দামানে দ্বীপান্তর হয়। ১৯৩৩ থেকে ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দী থাকেন। এই সময় তিনি কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন। তার জীবনের ৩২ বছর কারান্তরালে কেটেছে। ১১ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টিতে
জেলে কমিউনিস্ট কনসলিডেশন এর সভ্য ছিলেন। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কারামুক্তির পর ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। পার্টি নিষিদ্ধ হলে আত্মগোপন করেন। বক্সা দুর্গে বন্দী ছিলেন অন্যান্য কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সাথে। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)তে যোগ দেন। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
লেখা ও শেষ জীবন
তার রচিত গ্রন্থ 'অগ্নিযুগের কথা'। এছাড়া স্বাধীনতা ও অনুশীলন পত্রিকায় তিনি বহু লেখা লিখেছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক সংঘের প্রবীন সদস্য ও বাংলাদেশ শহীদ প্রীতি সমিতির সভাপতিও ছিলেন।[3]
মৃত্যু
বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ মারা যান।
তথ্যসূত্র
- দৈনিক গ্রামীন দর্পন, মো. মোশারফ হোসেন সরকার (১৮.০৮.১৬)। "বিপ্লবী সতীশ চন্দ্র পাকড়াশী"। সংগ্রহের তারিখ ২৪.১২.১৬। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৪৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৪৮। আইএসবিএন 81-85626-65-0।