শাহেদ আলী
অধ্যাপক শাহেদ আলী (১৯২৫ - ২০০১) বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবী। তিনি ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের একজন ভাষাসৈনিক। তিনি ইসলামী চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, অনুবাদক, গবেষক হিসাবেও পরিচিত।[1][2]
শাহেদ আলী | |
---|---|
জন্ম | মে ২৬, ১৯২৫ তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ৬ নভেম্বর, ২০০১ |
পেশা | সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ ![]() |
সময়কাল | বিংশ শতাব্দী |
ধরন | সাহিত্য, ইসলামী প্রবন্ধ, অনুবাদ সাহিত্য, ছোট গল্প |
বিষয় | ইসলামী ঐতিহ্য, ইসলামী বিপ্লব |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪), একুশে পদক (১৯৮৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৬), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর, ২০০৩) |
দাম্পত্যসঙ্গী | চেমন আরা |
সন্তান | ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে |
জন্ম, শিক্ষা ও জীবিকা
১৯২৫ খ্রীস্টাব্দের ২৬ মে বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় মাহমুদপুর গ্রামে তার জন্ম।[1] সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ খ্রীস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দে ব্যাচেলার ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন। ১৯৫১ খ্রীস্টাব্দে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত মিরপুর বাংলা কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম সিটি কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৫৪ খ্রীস্টাব্দে খেলাফতে রব্বানী পার্টির নমিনেশনে সুনামগঞ্জ থেকে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত। অধ্যাপক শাহেদ আলী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (সাবেক ইসলামিক একাডেমী) প্রতিষ্ঠাতা সচিব ছিলেন। এরপর ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সঙ্কলন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। চল্লিশের দশক থেকেই শাহেদ আলী সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৪-৪৬ খ্রীস্টাব্দে মাসিক প্রভাতি এবং ১৯৪৮-৫০ খ্রীস্টাব্দে তিনি সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকাদ্বয় সম্পাদনা করেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক বুনিয়াদ সম্পাদনা করেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের বিখ্যাত শিশু মাসিক সবুজ পাতার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৮২ খ্রীস্টাব্দে পর্যন্ত। ১৯৫৬ খ্রীস্টাব্দে দৈনিক মিল্লাতের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রীস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পত্রিকার সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ইসলামী বিশ্বকোষের সম্পাদনা বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। অধ্যাপক শাহেদ আলী বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮-৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সার্বিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তিনি তমুদ্দন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[1]
সাহিত্যকর্ম
১৯৪০ খ্রীস্টাব্দে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে সওগাত পি্রিকায় তার সর্বপ্রথম গল্প "অশ্রু" প্রকাশিত হয়। এরপর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি ছিলেন জীবনধর্মী লেখক।[1]
গল্পগ্রন্থ
- জিব্রাইলের ডানা (১৯৫৩)[2]
- একই সমতলে
- অতীত রাতের কাহিনী
- অমর কাহিনী
- নতুন জমিনদার
- শাহেদ আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প
- শাহেদ আলীর নির্বাচিত গল্প
উপন্যাস
- হৃদয় নদী (১৯৬৫),
নাটক
- বিচার[2]
শিশুসাহিত্য
- রুহীর প্রথম পাঠ
গবেষণাগ্রন্থ
- ছোটদের ইমাম আবু হানিফা
- সোনারগাঁয়ের সোনার মানুষ
- বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান[1]
ধর্ম ও সংস্কৃতি
- তরুণ মুসলিমের ভূমিকা (১৯৪৬)
- একমাত্র পথ (১৯৪৬)
- তরুণের সমস্যা
- তাওহীদ[1]
- মুক্তির পথ
- বুদ্ধির ফসল আত্মার আশিস
- ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা
- জীবন নিরবচ্ছিন্ন
- জীবন দৃষ্টি সাম্প্রদায়িকতা
অনুবাদ গ্রন্থ
- মক্কার পথ (মূল : মুহাম্মাদ আসাদ)[2]
- ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার (মূল : আল্লামা আসাদ)
- আধুনিক বিজ্ঞান ও আধুনিক মানুষ (মূল : কে বি এইচ কোনান্ট)
- ইতিবৃত্ত (হিরোডাটাস)
অন্যান্য
- ফিলিস্তিনে রুশ ভূমিকা (১৯৪৮)[1]
- সাম্রাজ্যবাদ ও রাশিয়া (১৯৫০)
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
অধ্যাপক শাহেদ আলী ছোট গল্পের জন্য ১৯৬৪ খ্রীস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। ভাষা আন্দোলন পদক ১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে, একুশে পদক ১৯৮৯ খ্রীস্টাব্দে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার ১৯৮৬ খ্রীস্টাব্দে, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে), জাসাস স্বর্ণপদক (মরণোত্তর ২০০০ খ্রীস্টাব্দে), তমুদ্দন মজলিস, মাতৃভাষা পদক (২০০০ খ্রীস্টাব্দে), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর,২০০৩ খ্রীস্টাব্দে)[3] এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন।
মৃত্যু
বহুধা প্রতিভার অধিকার শাহেদ আলী ২০০১ খ্রীস্টাব্দের ৬ নভেম্বর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।[2]
তথ্যসূত্র
- মাহমুদ ইউসুফ। "কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলী"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- মোহাম্মদ তৌফিকুর হায়দার। "শাহেদ আলী"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- "আমাদের পরিচিতি"। কিশোরকন্ঠ ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।